গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
লোকসভা ভোটপর্বের মধ্যেই ‘মুসলিম সংরক্ষণ’ বিতর্কে আবার বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’কে নিশানা করল বিজেপি। দলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র সুধাংশু ত্রিবেদী আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদের একটি মন্তব্যকে হাতিয়ার করে মঙ্গলবার বলেন, ‘‘ভারতীয় সংবিধানে মৌলিক কাঠামোর পরিবর্তন ঘটিয়ে ধর্মের ভিত্তিতে সংখ্যালঘুদের সংরক্ষণ দেওয়াই যে ‘ইন্ডিয়া’র লক্ষ্য, লালুর বক্তব্যে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে অন্ধ্রপ্রদেশে বিজেপির জোটসঙ্গী তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)-র প্রধান এন চন্দ্রবাবু নায়ডু ঘোষণা করেছেন, সে রাজ্যে ক্ষমতায় এলে (লোকসভা ভোটের সঙ্গেই অন্ধ্রে বিধানসভা ভোটও হচ্ছে) মুসলিমের জন্য চার শতাংশ সংরক্ষণ করবেন তিনি। কিন্তু সহযোগী দলেও নেতার ওই প্রতিশ্রুতি প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেননি বিজেপির মুখপাত্র সুধাংশু।
মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে সুধাংশু বলেন, ‘‘তফসিলি জাতি ও জনজাতি (এসসি, এসটি) এবং অন্যান্য অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর (ওবিসি) অংশ থেকে মুসলিমদের সংরক্ষণে সংবিধান পরিবর্তন করার জন্য ‘ইন্ডিয়া’র পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ বিজেপি নেতৃত্ব যে সন্দেহ প্রকাশ করছেন, লালুর বক্তব্য থেকেই তার সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে।’’ প্রসঙ্গত রবিবার লালু বলেছিলেন, ‘‘মুসলিমরা অনগ্রসর হিসাবে যদি পূর্ণ সুবিধা পায়, তাতে কারও অসুবিধা হতে পারে না।’’
গত ২১ এপ্রিল মোদী রাজস্থানের বাঁশওয়াড়ায় বিজেপির সভায় বলেন, ‘‘প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ অতীতে বলেছিলেন, দেশের সম্পদে সর্বাগ্রে অধিকার মুসলিমদের। সেই কারণেই সমীক্ষা করার পরিকল্পনা নিয়েছে কংগ্রেস। যাতে দেশবাসীর কষ্টার্জিত অর্থ মুসলিম ও অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া যায়।’’ এর পরে ২২ এপ্রিল উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেসের নজর আপনার সম্পত্তির উপরে রয়েছে। ক্ষমতায় এলে এরা মা-বোনেদের মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নেবে। কাদের বিলিয়ে দেবে, তা আপনারা জানেন।’’
গত ৩০ এপ্রিল তেলঙ্গানা এবং মহারাষ্ট্রের প্রচারে মোদী অভিযোগ করেন, কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করলে কংগ্রেস তফসিলি জাতি ও জনজাতি এবং ওবিসিদের সংরক্ষণ কেড়ে নিয়ে মুসলিমদের দিয়ে দেবে। তেলঙ্গানার জাহিরাবাদে তিনি বলেন, “যত দিন আমি বেঁচে আছি, দলিত জনজাতিদের সংরক্ষণকে ধর্মের ভিত্তিতে মুসলিমদের হাতে তুলে দেব না, দেব না, দেব না! কংগ্রেস এবং তাদের যত সহযোগী রয়েছ, তারা কান খুলে এটা শুনে নাও।” যদিও মনমোহন প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বলেছিলেন, ‘‘দেশের সম্পদে অগ্রাধিকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীগুলির।’’
ঘটনাচক্রে, পড়শি রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশে এনডিএ-র বড় শরিক টিডিপির নেতা চন্দ্রবাবু এ বার ভোটের প্রচার পর্বের গোড়া থেকেই মুসলিমদের জন্য সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন খোলাখুলি। আগামী ১৩ মে অন্ধ্রের ২৫টি লোকসভা এবং ১৬০টি বিধানসভা আসনে এক দফাতেই ভোট। ভোটের গণনা ৪ জুন। সেখানে টিডিপি-বিজেপি জোটে রয়েছে অভিনেতা-রাজনীতিক পবন কল্যাণের দল জনসেনা পার্টিও। ক্ষমতাসীন ওয়াইএসআর কংগ্রেসের প্রধান তথা অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী জগন্মোহন রেড্ডি এ নিয়ে ক্রমাগত নিশানা করছেন বিজেপিকে।