Jayant Sinha

‘ভোট দিয়েছি’, বিজেপির পাঠানো শো-কজ় নোটিসের জবাব দিলেন মোদীর প্রাক্তন মন্ত্রী জয়ন্ত

জয়ন্তের বাবা যশবন্ত হাজারিবাগ থেকে বিজেপি প্রার্থী হিসাবে ১৯৯৮ এবং ১৯৯৯-এর লোকসভা ভোটে জিতে বাজপেয়ী সরকারের মন্ত্রী হয়েছিলেন। পরে রাষ্ট্রপতি ভোটে বিরোধী জোটের প্রার্থী হন তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৪ ১১:৫৮
Share:

জয়ন্ত সিন্‌হা। — ফাইল চিত্র।

ভোট না দেওয়ার অভিযোগে তাঁকে শো-কজ় নোটিস পাঠিয়েছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগের বিদায়ী বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়ন্ত সিন্‌হা সেই অভিযোগ খারিজ করে জানালেন, ‘ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা’ পালন করতে বাইরে থাকায় পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন তিনি।

Advertisement

২০১৪ এবং ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বিজেপির টিকিটে হাজারিবাগ থেকে জিতেছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের মন্ত্রী যশবন্ত সিন্‌হার পুত্র জয়ন্ত। নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভার সদস্যও হয়েছিলেন। কিন্তু ভোট ঘোষণার আগেই গত মার্চের গোড়ায় জয়ন্ত প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন, তিনি এ বার ভোটে দাঁড়াতে চান না। তখন জল্পনা হচ্ছিল, বিজেপি কি তা হলে হাজারিবাগ থেকে জয়ন্তের ছেলে আরিশকে প্রার্থী করবে? কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই আসনে মণীশ জয়সওয়ালকে প্রার্থী করে বিজেপি। ঝাড়খণ্ড বিজেপির রাজনীতিতে যাঁর সঙ্গে সিন্হা পরিবারের সমীকরণ ‘মসৃণ’ নয় বলেই খবর।

গত ২০ মে চতুর্থ দফার ভোট ছিল হাজারিবাগে। তার ঠিক আগে জয়ন্তের পুত্র তথা যশবন্তের নাতি আরিশ কংগ্রেসে যোগ দেন। সেখানকার কংগ্রেস প্রার্থী জয়প্রকাশ ভাই পটেলের প্রতি সমর্থনের কথা ঘোষণা করেন। ঘটনাচক্রে, ২০১৯ সালে ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা ভোটে হাজারিবাগের মাণ্ডু কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে জিতেছিলেন জয়প্রকাশ। গত মার্চ মাসে বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়ে কংগ্রেসে শামিল হন যশবন্তের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত ওই নেতা।

Advertisement

ভোটপর্ব মেটার পরেই বিজেপির তরফে জয়ন্তের বিরুদ্ধে ভোট না দিয়ে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগ তুলে শো-কজ় নোটিস পাঠানো হয়েছিল। ঝাড়খণ্ড বিজেপির সাধারণ সম্পাদক আদিত্য শাহুর পাঠানো ওই শো-কজ় নোটিসেরই জবাব দিলেন জয়ন্ত। বিজেপির একাংশের অভিযোগ, মোদী-অমিত শাহরা দলের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেওয়ার পরে একদা বাজপেয়ী-আডবাণীর ঘনিষ্ঠ নেতাদের কোণঠাসা করেছিলেন। তারই পরের ধাপে তাঁদের সন্তানদেরও উপেক্ষা করতে শুরু করেছেন। যশবন্ত-পুত্র জয়ন্তও সেই উপেক্ষার শিকার হয়েই ভোটে সক্রিয় না থাকার কথা আগেভাগে দলকে জানিয়েছিলেন। একটি সূত্রের মতে, শত্রুঘ্ন সিন্হা বা কীর্তি আজ়াদের মতো তিনিও বিজেপি ছাড়লে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

জয়ন্তের বাবা যশবন্ত হাজারিবাগ থেকেই বিজেপি প্রার্থী হিসাবে ১৯৯৮ এবং ১৯৯৯ সালের লোকসভা ভোটে জিতে অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকারের মন্ত্রী হয়েছিলেন। ২০০৪ সালে হেরে গেলেও ২০০৯-এ হাজারিবাগ পুনরুদ্ধার করেন যশবন্ত। ২০১৪-তে বাবার লোকসভা কেন্দ্র হাজারিবাগ থেকেই জিতে আসার পরে জয়ন্তকে অর্থ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । তার পরে বিমান মন্ত্রকের স্বাধীন ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীও হয়েছিলেন। কিন্তু মোদীর দ্বিতীয় দফায় মন্ত্রিত্ব পাননি জয়ন্ত।

যশবন্ত অবশ্য প্রথম থেকে বিজেপিতে ছিলেন না। আইএএস-এর চাকরি থেকে ১৯৮৪ সালে রাজনীতিতে এসে জনতা দলের সাংসদ হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখরের সরকারের অর্থমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। তার পরে বিজেপিতে যোগ দেন। বাজপেয়ী সরকারের অর্থমন্ত্রী এবং বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলানো যশবন্ত বিজেপি রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েন মোদীর জমানায়। ২০১৮-তে বিজেপি ছাড়েন। ২০২১ সালের মার্চে নীলবাড়ির লড়াই পর্বে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলে। জয়ন্ত অবশ্য বিজেপিতেই থেকে গিয়েছিলেন।

২০২২ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় যশবন্তকে প্রার্থী ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন বিরোধী দলের সমর্থনও তিনি পেয়েছিলেন। কিন্তু বিজেপির দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে হেরে যান। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পরাজয়ের পরে প্রকাশ্যে নিজের প্রাক্তন দলের বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে দল ভাঙানোর অভিযোগ তুলেছিলেন যশবন্ত। সেই সঙ্গেই সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর কথাও ঘোষণা করেছিলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement