গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
লোকসভা ভোটের প্রচারে আবার কাশী এবং মথুরার বিতর্কিত জমিতে মন্দির বানানোর অঙ্গীকার বিজেপি নেতা তথা অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার! ঝাড়খণ্ডের বোকারোয় বিজেপির ভোটপ্রচারে তিনি বলেন, ‘‘মোগল সম্রাট অওরঙ্গজ়েব বারাণসী এবং মথুরায় মন্দির ভেঙে মসজিদ বানিয়েছিলেন। লোকসভা ভোটে আমাদের ৪০০ আসন দিন। আমরা বারাণসীর জ্ঞানবাপী এবং মথুরার কৃষ্ণ জন্মভূমিতে মন্দির নির্মাণ করব।’’
এর আগে গত ১৫ মে দিল্লিতে বিজেপির সমাবেশে হিমন্ত বলেছিলেন, ‘‘গত বার লোকসভা ভোটে আমরা ৩০০ আসন জিতে অযোধ্যায় রামমন্দির বানিয়েছি। এ বার ৪০০ আসনে জিতে বারাণসীর এবং মথুরায় মন্দির বানাব।’’ অযোধ্যার মতোই বারাণসীর জ্ঞানবাপী এবং মথুয়ার শাহি ইদগাহের জমি বিতর্ক এখন আদালতের দরজায়। হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, অযোধ্যার মতোই বারাণসী এবং মথুরাতেও হিন্দুদের মন্দির ভেঙে মোগল সম্রাট অওরঙ্গজ়েবের নির্দেশে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার সময় ‘কাশী, মথুরা বাকি হ্যায়’ বলে স্লোগানও তুলেছিলেন উগ্র হিন্দুত্ববাদী করসেবকেরা।
১৬৬৯ সালের ২ নভেম্বর মন্দির ভেঙে অওরঙ্গজ়েব জ্ঞানবাপী মসজিদ নির্মাণের ফরমান দিয়েছিলেন বলে ‘ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ’ (এএসআই)-এর রিপোর্টের ভিত্তিতে আদালতে দাবি করেছে হিন্দুপক্ষ। সেই ফরমান সংক্রান্ত শিলালিপির সন্ধান এএসআই সমীক্ষায় মিলেছে বলেও তাদের দাবি। এএসআই রিপোর্টের ভিত্তিতে গত ৩১ জানুয়ারি, বারাণসী জেলা আদালত হিন্দুপক্ষকে জ্ঞানবাপীর ব্যাস কি তহখানায় পূজার্চনার অনুমতি দিয়েছে। ইলাহাবাদ হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টও সেই নির্দেশ বহাল রেখেছে। ‘অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া (জ্ঞানবাপী) মসজিদ কমিটি’র তরফে তহখানায় পূজার্চনা বন্ধের আবেদন জানানো হলেও তা খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত।
অন্য দিকে, মথুরার প্রাচীন কাটরা স্তূপ (যা কাটরা কেশবদাস নামে পরিচিত) এলাকায় শ্রীকৃষ্ণ জন্মস্থান কমপ্লেক্সের পাশেই রয়েছে শাহি ইদগাহ মসজিদ। হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, ইদগাহের ওই জমিতে কৃষ্ণের জন্মস্থানে ছিল প্রাচীন কেশবদাস মন্দির। অভিযোগ, কাশীর ‘আসল বিশ্বনাথ মন্দিরের’ মতোই মথুরার মন্দিরটিও ধ্বংস করেছিলেন অওরঙ্গজেব। তাঁর নির্দেশে ১৬৬৯ থেকে ১৬৭০ সালের মধ্যে তৈরি করা হয়েছিল মসজিদটি, কাটরা কেশবদাস মন্দিরের ১৩.৩৭ একর জমিতে। সেই জমির মালিকানা নিয়ে বিবাদও এখন ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারাধীন। লোকসভা ভোটপর্ব চলাকালীন হিমন্ত সেই প্রসঙ্গ খুঁচিয়ে কৌশলে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ উস্কে দিতে চাইছেন বলে অভিযোগ বিরোধীদের।