স্বামী সুবীরানন্দ। নিজস্ব চিত্র।
প্রথমে গত শনিবার দুপুরে আরামবাগের সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য। তার পর সে রাতেই, জলপাইগুড়ি রামকৃষ্ণ মিশনে হামলার ঘটনা লোকসভা ভোটপর্বের মাঝে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল ফেলেছে। এই আবহে মঙ্গলবার রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন কর্তৃপক্ষ ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ প্রতিষ্ঠানের তরফে প্রতিক্রিয়া জানান।
শনিবার রাত সাড়ে ৩টে নাগাদ ৩০-৩৫ জন দুষ্কৃতী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে জোর করে জলপাইগুড়ি রামকৃষ্ণ মিশনে ঢুকে সন্ন্যাসীদের উপর চড়াও হন। তাঁদের শারীরিক নিগ্রহ করে বাড়ির বাইরে বার করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। শুধু তা-ই নয়, পাঁচ সন্ন্যাসী ও বাড়িটির নিরাপত্তারক্ষীদের তুলে নিয়ে গিয়ে নিউ জলপাইগুড়ি রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। এ নিয়ে মিশনের তরফে থানায় অভিযোগ জানানো হলেও অভিযুক্তেরা গ্রেফতার হননি বলে অভিযোগ। স্বামী সুবীরানন্দ মঙ্গলবার ওই ঘটনা সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, ‘‘জলপাইগুড়ির ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন কি না, তা আমার জানা নেই।’’
এর পরেই রামকৃষ্ণ মিশনের আদর্শ এবং কর্মপরিধি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘আমরা একটি অরাজনৈতিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। যাঁরা আমাদের সন্ন্যাসী এবং ব্রহ্মচারী, তাঁরা রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন না, এমনকি তাঁদের যে ভোটদানের অধিকার আছে তা-ও প্রয়োগ করেন না। ভোটদানে বিরত থাকেন। এই নির্দেশ স্বামীজি মহারাজ (স্বামী বিবেকানন্দ) আমাদের দিয়ে গিয়েছেন, তা আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করি।’’
শনিবার আরামবাগের সভায় রামকৃষ্ণ মিশন এবং ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের কেউ কেউ সরাসরি ‘রাজনীতি’ করছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি আইডেন্টিফাই করেছি কে কে করেছেন। আসানসোলে একটা রামকৃষ্ণ মিশন রয়েছে। আমি রামকৃষ্ণ মিশনকে কী হেল্প করিনি! সিপিএম যখন খাবার বন্ধ করে দিয়েছিল, আপনাদের অস্তিত্ব নিয়ে, স্বাধিকার নিয়ে... তখন কিন্তু আমি পুরো সমর্থন দিয়েছিলাম। মা-বোনেরা আসত। তারা তরকারি কেটে দিত। সিপিএম কিন্তু আপনাদের কাজ করতে দিত না।’’
মঙ্গলবার স্বামী সুবীরানন্দ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, রামকৃষ্ণ মিশন তাদের ভক্তদের মধ্যে কোনও রাজনৈতিক চিন্তাধারা প্রচার করে না। তিনি বলেন, ‘‘ভক্তেরা ভোটের বিষয়ে স্বতন্ত্র। ভক্তদের কী করণীয়, কী করণীয় নয় সে বিষয়ে আমরা কোনও উপদেশ দিই না। কোনও ফতোয়া আমরা জারি করি না।’’
স্বামী বিবেকানন্দ প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীদের জীবনে ‘শিবজ্ঞানে জীবসেবা’ ছাড়া অন্য কোনও লক্ষ্য নেই বলে জানিয়ে স্বামী সুবীরানন্দ বলেন, ‘‘আমাদের কাজের জন্য আমরা কিছু প্রত্যাশা করি না। শুধু চাই, মানুষের কল্যাণ হোক। ধন্যবাদও প্রত্যাশা করি না।’’ শিলিগুড়িতে মিশনের জমি কেন্দ্র করে ‘কিছু সমস্যা’ হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আমি আশা করি প্রশাসন এ বিষয়ে সর্বতোভাবে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সক্রিয় হবে। ওই জমি এবং পরিকাঠামো মানব কল্যাণে নিবেদিত। কোনও সন্ন্যাসী বা ব্রহ্মচারীর ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়।’’