Grand Hotel of Kolkata has witnessed many chapters of History dgtl
ছিল বোর্ডিং হাউস, সৈন্যদের আস্তানাও, হাত বদলে কর্নেল গ্র্যান্ডের বাড়িই হল গ্র্যান্ড হোটেল
অর্পিতা রায়চৌধুরী
শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১০:৫৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
১। উপনিবেশে চাকরি করতে এসে সাসেক্সে নিজের বাড়ির কথা খুব মনে পড়ত। সেই বাড়ির আদলে কলকাতাতেও বাসভবন তৈরি করালেন কর্নেল গ্র্যান্ড।
০২১৬
২। স্থপতির নাম জানা না গেলেও নিও ক্লাসিক্যাল প্রাসাদোপম এই বাড়ি নজর কাড়ত চৌরঙ্গি এলাকার। স্বভাবতই বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে গেল কর্নেল গ্র্যান্ডের নাম।
০৩১৬
৩। এক দিন শুরু হল হাতবদলের পালা। কর্নেল গ্র্যান্ডের পরে বাড়ির মালকিন হলেন এক আইরিশ। তিনি পরিচিত ছিলেন মিসেস অ্যানি মঙ্ক নামে।
০৪১৬
৪। তিনি এই বাড়িকে বানালেন বোর্ডিং হাউস। খুব অল্প দিনের মধ্যে জমে উঠল তাঁর ব্যবসা। তাঁর আমলে বাসভবন থেকে বোর্ডিং হওয়া ভবন বৃদ্ধি পেল কলেবরেও।
০৫১৬
৫। পর পর ১৪, ১৫ এবং ১৭— এই তিনটি নম্বরের বাড়িও কিনে নিলেন মিসেস মঙ্ক। বাকি থাকল ১৬, চৌরঙ্গি রোড। সেখানে থিয়েটার ছিল অ্যারাটুন স্টিফেনের। তিনি ছিলেন আর্মেনিয়ান। ইরানের ইস্পাহানে কাঠের গাড়িতে বিক্রি করতেন রকমারি গয়না। সেখান থেকে ভারতে আসেন। গয়নার ব্যবসা শুরু করে ধীরে ধীরে ধনকুবের হয়ে ওঠেন তিনি।
০৬১৬
৬। শূন্য থেকে শুরু করে খ্যাতি ও বিত্তের শীর্ষে পৌঁছনো অ্যারাটুন কলকাতাকে নানা ভাবে সাজিয়েছিলেন। এক সময় তিনি কিনে নিয়েছিলেন মিসেস মঙ্কের বোর্ডিং হাউসটি। তার আগে অ্যারাটুনের থিয়েটার-বাড়িটি রহস্যজনক ভাবে আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। সেই বাড়িটিকে সারিয়ে নিয়ে তিনি জুড়ে দিলেন বোর্ডিং হাউসের সঙ্গে।
০৭১৬
৭। তবে এ বার আর বোর্ডিং হাউস থাকল না। রূপান্তরিত হল হোটেলে। অ্যারাটুন সাহেব তাঁর নতুন হোটেলের নাম রাখলেন ‘গ্র্যান্ড হোটেল’। দ্রুত এই হোটেল হয়ে উঠল ব্রিটিশ ও অন্যান্য ইউরোপীয়দের অবসরযাপনের পছন্দের ঠিকানা।
০৮১৬
৮। ব্রিটিশ উপনিবেশ কলকাতার অন্যতম আকর্ষণ ছিল গ্র্যান্ড হোটেলের নববর্ষের পার্টি। সেখানে শ্যাম্পেনের ফোয়ারা ছুটত। দামি উপহারের পাহাড় জমত। অভিনব ছিল বলরুমের আসর। বলা হয়, সেখানে ছেড়ে দেওয়া হত ১২টি শূকরছানাকে। অতিথিদের মধ্যে যদি কেউ একটিকে ধরতে পারে, তবে সেটি তাঁর।
০৯১৬
৯। ১৯২৭ সালে অ্যারাটুন প্রয়াত হওয়ার পরেও গ্র্যান্ড হোটেলের রমরমা বজায় থাকে। কিন্তু তার পর তিনের দশকে দেখা দিল সমস্যা। কলকাতায় কলেরা মহামারি হয়ে দেখা দিল। কলেরায় মারা গেলেন গ্র্যান্ড হোটেলের ৬ জন অতিথিও।
১০১৬
১০। অভিযোগ উঠল হোটেলের নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে। শেষে ১৯৩৭ সালে বন্ধই করে দেওয়া হয় গ্র্যান্ড হোটেল। পরে এই আইকনিক হোটেল লিজ নেন হোটেল ব্যবসায়ী মোহনসিংহ ওবেরয়।
১১১৬
১১। দিল্লি স্টেশনে এক বন্ধুর কাছে তিনি শুনেছিলেন কলকাতার গ্র্যান্ড হোটেল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। কার্যত পরের ট্রেনেই মোহন তড়িঘড়ি পৌঁছন কলকাতায়। তাঁর দূরদৃষ্টি বুঝেছিল, এই হোটেলের সম্ভাবনা।
১২১৬
১২। সে সময় হোটেল ব্যবসা শুরু করে দিয়েছিলেন কলেজছুট মোহন। তিনি লিজ নেন গ্র্যান্ড হোটেল। ১৯৩৯ সালে তাঁর হাতে আবার খুলে যায় গ্র্যান্ড হোটেলের দরজা। কিন্তু এখানে ব্যবসার সূত্রপাত অত সহজ ছিল না। কারণ কলেরার ভয়ে অতিথিরা তখন গ্র্যান্ডে পা রাখতেই চাইতেন না।
১৩১৬
১৩। মোহন ওবেরয় নিজে অতিথিদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের আশ্বস্ত করতেন। অভয় দিতেন গ্র্যান্ড হোটেলের নিরাপত্তা নিয়ে। ধীরে ধীরে আবার ছন্দে ফিরল গ্র্যান্ড হোটেল। ১৯৪৩ সালে মোহন ওবেরয় ৫০০টি ঘরের এই হোটেল কিনে নেন।
১৪১৬
১৪। কলকাতায় যে কয়েকটি ভবনে প্রথম লিফ্ট বসেছিল, সেগুলির মধ্যে একটি গ্র্যান্ড হোটেল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই হোটেল ছিল ব্রিটিশ সৈন্যদের অস্থায়ী ছাউনি। সব সময় দেড় হাজার শয্যা রাখা থাকত তাঁদের জন্য।
১৫১৬
১৫। থামের মাঝখান দিয়ে উঁকি দেওয়া সবুজ পামগাছের সারি, লম্বা টানা বারান্দা থেকে গাড়িবারান্দা— এই হোটেলের সর্বত্র ইউরোপীয় আভিজাত্যের ছাপ স্পষ্ট। বলা হয়, এই হোটেলের কোনও একটি ঘরের সঙ্গে সাজসজ্জার দিক দিয়ে অন্য দ্বিতীয় ঘরের সাদৃশ্য নেই।
১৬১৬
১৬। ইউরোপীয়দের কাছে এক সময়ে এই হোটেল ছিল ‘দ্য গ্রন্দ ডেম’। ফরাসি ভাষায় যার অর্থ, ‘মহীয়সী’। মালিকানায় হাতবদল হলেও, বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই অভিজাত অতিথি নিবাস আজও রূপেগুণে স্বতন্ত্র।