ক্যাথি গ্যান্নন ও (ডান দিকে) নিহত আঙ্গা নাইদ্রিঙ্গহোউস। —ফাইল চিত্র।
পুলিশ, সেনা আর গোয়েন্দা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল সরকারি কনভয়টিতে। তার মধ্যেই গুলি চালিয়ে সংবাদসংস্থা এপি-র মহিলা চিত্রসাংবাদিককে হত্যা করল আফগান পুলিশবাহিনীর এক কর্মী। শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে আফগানিস্তানের খোস্ত প্রদেশের টানি জেলায়। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম আঙ্গা নাইদ্রিঙ্গহোউস। ওই ঘটনায় এপি-র আর এক মহিলা সাংবাদিকও আহত হয়েছেন। নাম ক্যাথি গ্যান্নন। তবে আপাতত তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল।
শনিবার আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তা বানচাল করার জন্য নাশকতার সমস্ত রকম চেষ্টা চলবে এমন হুমকি আগে থাকতেই দিয়ে রেখেছিল তালিবান। কিন্তু এ দিনের ঘটনায় অভিযুক্ত তো এক জন পুলিশ অফিসার। নাম নাকিবুল্লাহ। হঠাৎ কেন সে দুই বিদেশি মহিলা সাংবাদিকের উপর গুলি চালাল, তার ব্যাখ্যা এখনও পর্যন্ত মেলেনি। আপাতত তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে এই ঘটনার পর আফগানিস্তানের পুলিশি নিরাপত্তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেই গেল সাংবাদিক মহলে।
ঠিক কী হয়েছিল এ দিন?
খোস্ত প্রদেশের সরকারি মুখপাত্র মুবারেজ জারদান জানিয়েছেন, শুক্রবার সকালে ভোটকর্মীদের কনভয়ের সঙ্গেই নিজেদের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন আঙ্গা এবং ক্যাথি। তাঁদের সঙ্গে ওই গাড়িতে ছিলেন ড্রাইভার এবং আর এক আফগান ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। দিব্যি এগোচ্ছিল কনভয়। এক সময় তা দাঁড়িয়ে যায় টানি জেলার এক প্রশাসনিক চত্বরের সামনে। ঠিক এমন সময়ই গাড়ির দিকে এগিয়ে আসে নাকিবুল্লাহ। প্রথমে কাচের জানলার বাইরে থেকে ভিতরে কে আছে দেখে নেয় সে। তার পর একে-৪৭টি সোজা তাক করে গাড়ির পিছনের আসনে বসে থাকা আঙ্গা এবং ক্যাথির দিকে। মাথায় গুলির আঘাত লেগে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় আদতে জার্মান নাগরিক আঙ্গার। দু’জায়গায় আঘাত পান কানাডার বাসিন্দা ক্যাথি। তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আত্মসমর্পণ করে নাকিবুল্লাহ। ওই প্রশাসনিক চত্বরে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরাই তাকে গ্রেফতার করে।
এপি জানিয়েছে, বেশ কয়েক দশক ধরে ইরাক, আফগানিস্তানের যুদ্ধবিধ্বস্ত শোচনীয় অবস্থা নিজের লেন্সে ধরেছেন আঙ্গা। এমনকী ২০০৫ সালে এপি-র যে দল চিত্রসাংবাদিকতার জন্য পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিল, তার অন্যতম সদস্য ছিলেন আঙ্গা। গত ক’বছর ধরে ৪৮ বছরের এই চিত্রসাংবাদিকের কর্মভূমি ছিল আফগানিস্তান। আর এই কাজে তাঁর সঙ্গী ছিলেন ক্যাথি। তিন দশক ধরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের করুণ, শোচনীয় অবস্থার কথা লিখে চলেছেন তিনি। এমনকী, ক্যাথি সেই হাতেগোনা সাংবাদিকদের এক জন যাঁকে তালিবানও আফগানিস্তানে ঢোকার অনুমতি দিয়েছিল। তা হলে কেন তাঁর এই পরিণতি?
অনেকের ধারণা শুধু তালিবান নয়, সেনা এবং পুলিশবাহিনীর একাংশ মনে করেন আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে বিদেশি সেনাবাহিনী। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে একটা আক্রোশও কাজ করে আফগান সেনা-পুলিশের একাংশের মধ্যে। সেই চাপা ক্ষোভই হয়তো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল নাকিবুল্লার মধ্যে। আর তার জেরেই এই কাণ্ড। তবে এর পিছনে ব্যক্তিগত শত্রুতাও থাকতে পারে বলে অনেকের ধারণা।
কারণ যা-ই হোক না কেন, তথ্য বলছে, আফগানিস্তানে এই নিয়ে গত এক মাসে অন্তত তিন তিনটি সাংবাদিক হত্যার ঘটনা ঘটল। এ হেন অবস্থায় ঘুরেফিরে আসছে সেই পুরনো প্রশ্নই। চলতি বছরের শেষে ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান ছাড়লে নিরাপত্তা-ব্যবস্থা ঠিক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? উত্তর জানা নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy