কোথায় এলাম! জলমগ্ন চিড়িয়াখানা থেকে রাস্তায় নেমে এসে হতবাক জলহস্তী। রবিবার জর্জিয়ার তিবলিসিতে। ছবি: এপি
শহরের প্রাণকেন্দ্রে জমা জল-কাদায় হাঁসফাস করছে মস্ত জলহস্তী। রাস্তায় জলের তোড়ে এ দিক-ও দিক সাঁতরে বেড়াচ্ছে কুমির। বাড়ির জানলায় লাগানো এয়ার কন্ডিশন মেশিনে ঝুলে পড়ে গা-বাঁচানোর চেষ্টা করছে প্রকাণ্ড ভালুক। অচেনা জায়গায় ভেসে এসে প্রাণ ভয়ে কাবু সকলেই।
এরা সকলেই জর্জিয়ার রাজধানী তিবলিসির একটি চিড়িয়াখানার বাসিন্দা। রাতব্যাপী প্রবল বৃষ্টি এবং হড়পা বানে ভেসে গিয়েছে তাদের আশ্রয়। ফলে চিড়িয়াখানার অধিকাংশ জীবজন্তুই এখন শহরের রাস্তায়। কেউ জীবিত। কেউ মৃত। কাউকে বা চেষ্টা চলছে ধরার।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বানভাসি চিড়িয়াখানায় ঘর-ছাড়া পশুদের তালিকায় রয়েছে বাঘ, সিংহ, জাগুয়ার, ভালুক, শিয়াল, জলহস্তী এমনকী নেকড়েও। মাছ, পাখি-সহ চিড়িয়াখানার ৬০০ পশু-পাখির অর্ধেকই নিখোঁজ। হিংস্র পশুরা ঘুরছে লোকালয়ে। কোথাও রাস্তায় জল থেকে উঁকি মারছে কুমিরের মাথা। কোথাও বা মুখ উঁচিয়ে গাছের পাতা পেড়ে খাচ্ছে জলহস্তী। এই সব দৃশ্যের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। সেই রকমই একটি ছবিতে দেখা গিয়েছে, শহরের প্রাণকেন্দ্রে বড় রাস্তায় এলোমেলো ঘুরে বেড়াচ্ছে জলহস্তী। অচেনা জায়গায় এসে পড়ে কিছুটা যেন দিশাহারা। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানান, বহু চেষ্টায় সেটিকে কোণঠাসা করে ফেলে পুলিশের বিশেষ বাহিনী। ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে ধরে ফেলা হয় তাকে। তার পর জল-কাদা ঠেলে অতি কষ্টে উদ্ধার করা হয় সেটিকে।
তবে সব পশুই যে জীবিত উদ্ধার হয়েছে এমনটা নয়। রুশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, অনেক হিংস্র পশুকেই ধরতে না পারায় গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে। শিশুদের একটি হাসপাতালের আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিল ছ’টি নেকড়ে। গুলি করে মারা হয়েছে সেগুলিকে। গুলি করে পশু হত্যায় আপত্তি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু পুলিশের বক্তব্য, কিছু পশু এতটাই হিংস্র যে সেগুলিকে ধরা সম্ভব নয়। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, একটি বাড়ির এয়ার কন্ডিশন মেশিনের উপর আশ্রয় নেওয়া একটি ভালুককে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন স্থানীয় মানুষ।
তিবলিসি চিড়িয়াখানার মুখপাত্র জানান, চিড়িয়াখানার সিংহভাগই জলের তলায়। ২০টি নেকড়ে, আটটি সিংহ, বাঘ, সাদা বাঘ, শিয়াল এবং জাগুয়ারকে হয় গুলি করে মারা হয়েছে, নয়তো তারা নিখোঁজ। ১৭টি পেঙ্গুইনের মধ্যে প্রাণে বেঁচেছে তিনটি। নিখোঁজ পশুদের সন্ধানে শহরের উপর দিয়ে উড়ছে হেলিকপ্টার।
রাস্তায় বেলাগাম ঘুরে বেড়াচ্ছে হিংস্র চারপেয়েরা। তাই শহরের দশ লাখের বেশি বাসিন্দাকে আপাতত ঘর-বন্দি থাকতে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। গত কাল রাত থেকে প্রবল বৃষ্টি আর হাওয়ায় ওলটপালট তিবলিসি। পার্বত্য শহরটির বুকে বয়ে চলা ছোট একটি নদী সেই বৃষ্টিতেই ফুলেফেঁপে ভাসিয়ে দিয়েছে শহরের বহু অংশ। তিবলিসির প্রধান হাইওয়েটিতেও জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে বহু গাড়ি। শহরের মেয়র জানিয়েছেন, বন্যায় বারো জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন চিড়িয়াখানায় তিন কর্মীও। খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না আরও দশ জনের। আশ্রয়হীন হয়ে খোলা আকাশের তলায় বহু পরিবার। জল এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে শহরের একটা বড় অংশে।
মে মাসে বাঘের থাবায় একটি হাত খোয়া গিয়েছিল বছর পঁচিশের এক চিড়িয়াখানা কর্মীর। বানে ভেসে যাওয়া পশুদের বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে সেই যুবকের। রবিবারের এই বিপদের পিছনে জর্জিয়ার প্রাক্তন কমিউনিস্ট শাসকদের দায়ী করেছেন দেশের রক্ষণশীল চার্চের প্রধান দ্বিতীয় প্যাট্রিয়াক ইলিয়া। তিনি দাবি করেছেন, এ দেশে যখন কমিউনিস্টরা আসেন, তখন তারা হুকুম দিয়েছিলেন চার্চের সব ক্রস এবং বেল নষ্ট করে ফেলে সেই টাকায় চিড়িয়াখানা বানাতে। আজ সেই পাপেরই শাস্তি হল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy