Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Mahsa Amini

নিঃসঙ্গ সেলে বন্দি  মহিলা সাংবাদিক

নিলুফারের তোলা ছবি প্রকাশ্যে আসতেই প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সূচনা হয় ইরানে। ব্যক্তি স্বাধীনতার দাবিতে পথে নামেন তরুণীরা। বিক্ষোভ থামাতে পাল্টা বলপ্রয়োগ শুরু করে প্রশাসন।

নিলুফার হামেদি।

নিলুফার হামেদি। ছবি সংগৃহীত।

তেহরান শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২২ ০৬:১৭
Share: Save:

যাঁর তোলা ছবির হাত ধরে ইরানে হিজাব বিরোধী আন্দোলনের সূচনা, সেই মহিলা সাংবাদিক নিলুফার হামেদির স্থান আপাতত ইরানের কারাগারে। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আনেনি ইরান প্রশাসন, তা-ও নিলুফারের দিন কাটছে নিঃসঙ্গ সেলে বন্দি হয়েই।

বরাবর মহিলাদের অধিকার নিয়ে লেখালিখি করেছেন নিলুফার। সেই তাগিদেই গত ১৬ সেপ্টেম্বর মাহশার বাবা-মায়ের ছবি তুলে টুইটারে পোস্ট করেন তিনি। হাসপাতালের মধ্যে তখন কোমায় আচ্ছন্ন মাহশা, বাইরে অপেক্ষায় তাঁর অসহায় বাবা-মা... নিলুফারের মনে হয়েছিল বি‌শ্বের কাছে এই ছবি পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন। সেই ছবির হাত ধরেই বিক্ষোভ শুরু হয় ইরানে। আর তার কয়েক দিন পরে, ২২ সেপ্টেম্বর ইরানের গোয়েন্দা দফতর হানা দেয় নিলুফারের বাড়িতে। তল্লাশি চালিয়ে তাঁর লেখার সরঞ্জাম ও জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়। তারপর গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। তাঁর আইনজীবী মহম্মদ আলি কামফিরৌজ়ি টুইটারে পোস্ট করেন বিষয়টি।

নিলুফারের তোলা ছবি প্রকাশ্যে আসতেই প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সূচনা হয় ইরানে। ব্যক্তি স্বাধীনতার দাবিতে পথে নামেন তরুণীরা। বিক্ষোভ থামাতে পাল্টা বলপ্রয়োগ শুরু করে প্রশাসন। এখনও পর্যন্ত ১৮৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন বিক্ষোভে, তাঁদের মধ্যে ১৯ জন নাবালক-নাবালিকা। তাদেরই এক জন নিকা শাকরমি।প্রকাশ্য রাস্তায় মাথার হিজাব খুলে আগুন ধরিয়ে স্বাধীনতার দাবিতে সরব হয়েছিল এই কিশোরী মেয়েটি। সেই আন্দোলনের ঠিক দশ দিন বাদে সোমবার একটি মর্গে পাওয়া গেল তার মৃতদেহ। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, দশ দিন আগে নিখোঁজ হয়ে যায় নিকা। ওই কিশোরীর পরিবারের দাবি, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতেই প্রাণ গিয়েছে তার।

এই খবর প্রকাশ হতেই নতুন করে আন্দোলনে জোয়ার এসেছে ইরানে। বিশেষ করে দেশের পশ্চিমাংশের কুর্দ-অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে সব চেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ। সোমবার পশ্চিম ইরানের সনন্দাজ শহরে বিক্ষোভ রুখতে গুলি চালাল বাহিনী। বিস্ফোরণ হল একাধিক। সংবাদমাধ্যমে সূত্রে খবর, সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত এক জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। অন্য শহরগুলির সংঘর্ষের চিত্র একই রকম।

এই নিয়ে চতুর্থ সপ্তাহে পড়ল হিজাব-বিরোধী স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ‘সঠিক ভাবে’ হিজাব না পরার ‘অপরাধে’ নীতি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন বছর ২২-এর মাহশা আমিনি। ১৬ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে রহস্যমৃত্যু হয় তাঁর। অভিযোগ ওঠে, নির্যাতন চালিয়ে তাঁকে মেরে ফেলেছে নীতিপুলিশ। আন্দোলনের সূচনা হয় তার পরেই। যদিও, প্রশাসন বার বার দাবি করে এসেছে শারীরিক অসুস্থতার ফলেই মৃত্যু হয়েছে মাহশার। বিশেষজ্ঞদের মতে, মাহশার মৃত্যুতে এই আন্দোলনের সূচনা হলেও পরবর্তীতে ইরানবাসীর বিভিন্ন পুঞ্জীভূত ক্ষোভের প্রকাশ হয়ে উঠেছে সেটি। তার মধ্যে রয়েছে দারিদ্র, দেশের নেতাদের দুর্নীতি ও কর্মহীনতার প্রতিবাদ। সোমবারই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন তৈল ও প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রকের বেশ কয়েক জন কর্মী।

এ দিকে, ইরানের নীতি পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী ও তাদের আধিকারিকদের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে ব্রিটেন। পাল্টা ইরানের প্রশাসনের দাবি, এই নিষেধাজ্ঞা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এই প্রসঙ্গের ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূতকে তেহরানে ডেকে বৈঠক করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে।

সংবাদ সংস্থা

অন্য বিষয়গুলি:

Mahsa Amini Iran Journalist detained
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy