সেই ভবিষ্যতের চালকবিহীন গাড়ি।
হয়তো মঙ্গলের মাটিতে মানুষ নামার আগেই পৃথিবীর মাটি থেকে মুছে যাবে পেট্রল, ডিজেলে চলা গাড়ি, বাস, মিনিবাস, ট্যাক্সি আর ট্রাক! বিশ্বের সব প্রান্তের সবক’টি সড়কপথই ভরে যাবে ইলেকট্রিক্যাল ভেহিকল (ইভি) বা বৈদ্যুতিক যানবাহনে!
এক সময় কলকাতার চৌরঙ্গির মতো রাস্তায় দাপিয়ে বেড়ানো ঘোড়ার গাড়ির মতোই পেট্রল, ডিজেলে চলা গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন শুধুই ছবি হয়ে থেকে যাবে বইয়ের পাতায় ‘আদ্যিকালের শহর’-এর ‘স্মৃতিচিহ্ন’ হয়ে!
পেট্রল, ডিজেলকে ‘বাই বাই’ জানাবে, জানাতে বাধ্য হবে যানবাহন, সম্প্রতি এই পূর্বাভাস করেছেন বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোগী ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ টনি সেবা ও জেমস আরবিব, তাঁদের হালের গবেষণায়। তাঁদের দাবি, আমেরিকা ও জার্মানির বড় বড় গাড়ি নির্মাতা সংস্থাগুলিকে বেঁচেবর্তে থাকার নতুন নতুন পথ ভাবতে হবে। নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পথে হাঁটতে হবে। বাজারে তেলের চাহিদা তুলনায় অনেকটাই কমে যাবে বলে তেল-নির্ভর অর্থনীতির দেশগুলি পড়বে গভীর সংকটে, যদি না তারা বিকল্প অর্থনীতির বিকাশের দিশা খুঁজে পায়। আপাতত বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলে দেওয়া ওই গবেষণাপত্রটির শিরোনাম- ‘রিথিঙ্কিং ট্রান্সপোর্টেশন: ২০২০-২০৩০’।
শিল্পোদ্যাগী টনি সেবা ও তাঁর সহযোগীর দাবি, পেট্রল, ডিজেলে চলা গাড়ি রাস্তা থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় তেলের চাহিদা ঝপ করে নেমে যাবে বলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম পড়বে হু হু করে। পেট্রোলিয়াম শিল্পে সংকট গভীর থেকে গভীরতর হবে। অপরিশোধিত তেলের দাম কমে হবে ব্যারেল পিছু ২৫ ডলার। তা আরও কমতে পারে। ফলে, তেল উত্তোলন আর লাভজনক হবে না। গভীর সংকটে পড়বে রাশিয়া, সৌদি আরব, নাইজেরিয়া, ভেনিজুয়েলা ও আরব দেশগুলির অর্থনীতি। ২০২০ সালের মধ্যেই বিশ্বে তেলের চাহিদা কমে গিয়ে দিনে গড়ে ১০ কোটি ব্যারেলে পৌঁছবে। আর ২০৩০ সালে সেটা কমে হবে ৭ কোটি ব্যারেল। পেট্রোলিয়াম শিল্পের প্রয়োজনীয়তা থাকবে শুধুই বিমান পরিবহণ ও রাসায়নিক শিল্পে। পেট্রল পাম্প, পাম্পের ডিলার, স্পেয়ার মোটর পার্টসের দোকান পৃথিবীর আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
শিল্পোদ্যোগী টনি সেবার পূর্বাভাস
শিল্পোদ্যোগী টনি সেবা ও তাঁর সহযোগী গবেষক আরবিব যে অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের ছবি এঁকেছেন, তাতে বলা হয়েছে, রাস্তার ধারে ধারে আর থাকবে না পেট্রল পাম্প। তন্নতন্ন তল্লাশি চালিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না স্পেয়ার মোটর পার্টসের দোকান। গাড়ির ভারী ভারী ইঞ্জিন মেরামতি, রক্ষণাবেক্ষণের আর দরকার হবে না। পেট্রল, ডিজেল নেওয়ার জন্য আর গাড়ি নিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না পেট্রল পাম্পে। আর সেই গাড়ি চালানোর জন্য কোনও চালক লাগবে না। কম্পিউটারেই রাস্তা দিয়ে ছুটবে গাড়ি। দিক বদলাবে, পথ বদলাবে। পাশ কাটাবে অন্য গাড়ির, পথচারীদেরও।
স্টেশনে স্টেশনে প্ল্যাটফর্মগুলিকেও আর কেঁপে উঠতে হবে না ডিজেল ইঞ্জিনে টানা এক্সপ্রেসগুলির দুরন্ত গতিতে ছুটে যাওয়ার ‘পদধ্বনি’তে!
অনেকটা ‘সায়েন্স ফিকশন’-এর মতো শুনতে লাগলেও এটাই ভবিষ্যৎ হতে চলেছে পৃথিবীর সড়ক ও রেল পরিবহণের। তা ৮ বছরের মধ্যে হতে পারে, ভারতে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে হতে পারে। আগামী ৫০/৬০ বছরের মধ্যে তো এটাই হতে চলেছে অনিবার্য ভবিষ্যৎ। শুধু টনি সেবাই নয়, প্রায় একই কথা বলছেন অর্থনীতিবিদদের একটা অংশ, অটোমোবাইল বিশেষজ্ঞরাও।
তবে যাঁরা অনেক দূর ভবিষ্যতের কথা বলেন, সমসময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে পূর্বাভাস করেন, তাঁদের নিয়ে বিশ্বের সর্বত্রই, সর্ব কালেই বিতর্ক হয়েছে। এখনও হচ্ছে শিল্পোদ্যোগী টনি সেবার ওই পূর্বাভাস নিয়ে। কেউ কেউ বলছেন, ‘বড্ড বেশি ফিউচারিস্টিক’, কেউ বলছেন, ‘লম্বা-চওড়া দাবি বা লার্জ ক্লেম’। আবার কেউ বলছেন, ‘এটাই অনিবার্য ভবিষ্যত। সময়টা হয়তো একটু বেশি এগিয়ে এনেছেন অর্থনীতিবিদ টনি সেবা। কিন্তু পূর্বাভাস যা করেছেন, সেই দিকেই এগিয়ে চলেছে পৃথিবী।’
২০২৪ সালের পর আর পেট্রল, ডিজেলে চলা গাড়ি, বাস, ট্রাক রাস্তায় দেখা যাবে না। চলবে শুধুই বৈদ্যুতিক গাড়ি। আর সেই গাড়ি হবে চালকবিহীন। সেই গাড়ি চালাবে কম্পিউটারই। এখনকার সর্বাধুনিক গাড়ির চেয়ে যা দামে অন্তত ১০ গুণ সস্তা হবে। যার আয়ুষ্কাল হবে অন্তত ১০ লক্ষ মাইল বা ১৬ লক্ষ কিলোমিটার। এখনকার গাড়ির ইঞ্জিনে মুভিং পার্টসের সংখ্যা থাকে প্রায় ২ হাজার। নতুন বৈদ্যুতিক গাড়িতে তা হবে ১৮টি। সেটাও কমিয়ে ২ করা যেতে পারে। ২০২২ সালের মধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম নেমে আসবে ২০ হাজার মার্কিন ডলারে। আর ২০২০ সালের মধ্যেই এমন উন্নত মানের ব্যাটারি বাজারে আসবে, যা এক বার চার্জ দিলেই ওই বৈদ্যুতিক গাড়ি তার জোরে ছুটতে পারবে কম করে ২০০ মাইল। যে গাড়ি চালাতে মাইল পিছু খরচ হবে ৬.৮ সেন্ট। তাতে গাড়ি বিমার খরচ কমবে ৯০ শতাংশ। তাতে গাড়ি আচে, এমন মার্কিন পরিবারে বছরে গড়ে ৫ হাজার ৬০০ ডলার সাশ্রয় হবে। তবে জ্বালানি কর বাবদ মার্কিন সরকারের লোকসান হবে বছরে ৫ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি। প্রচুর লোকসান হবে ব্রিটেন ও জার্মানিরও। বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য শুধুই মার্কিন মুলুকে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে ১৮ শতাংশ। এখনকার চালু গাড়ির মডেলগুলিকে বাতিল করে দিয়ে ফোর্ড, জেনারেল মোটরসের মতো মার্কিন বহুজাতিক বা জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেনের বড় বড় গাড়ি নির্মাতা সংস্থাগুলিকে বৈদ্যুতিক গাড়ি বানানো শুরু করতে হবে, বাজারে আনতে হবে, ঢালাও ভাবে। হাজারো খুঁজেও সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কেনার খদ্দের পাওয়া যাবে না।
শিল্পোদ্যোগী টনি সেবার পূর্বাভাস
কী ভাবে এই পূর্বাভাস করতে পারছেন টনি?
আনন্দবাজারের পাঠানো প্রশ্নের জবাবে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ শিল্পোদ্যোগী টনি সেবা ই-মেলে লিখেছেন, ‘‘প্রযুক্তি আর বিশ্ব অর্থনীতির ওপর দীর্ঘ দিন গবেষণা চালিয়েই আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। আমরা দেখেছি, অর্থনীতির এই বৈপ্লবিক পরিবর্তনে মূল ভূমিকা নেবে প্রযুক্তি। ক্লাইমেট চেঞ্জ বা জলবায়ু পরিবর্তন নয়। প্রযুক্তিই আমূল বদলে দিতে চলেছে বিশ্ব অর্থনীতির গতিপথ।’’
অর্থনীতিবিদ দীপঙ্কর দাশগুপ্ত বলছেন, ‘‘অসম্ভব নয়। ভারত সরকারও তো এমন একটা কর্মসূচি নিয়েছে। ২০৩২ সালের মধ্যেই যাতে দেশের সড়কপথে রাজত্ব করতে পারে বৈদ্যুতিক গাড়ি। তবে ভারতের মতো অর্থনীতির দেশগুলিতে এটা চট করে হয়ে যাবে বলে মনে হয় না। আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানিতে এখনকার মডেলের গাড়িগুলি বাতিল হয়ে গেলে সেই সব দেশের বড় বড় গাড়ি নার্মাতা সংস্থাগুলি তাদের স্টক ক্লিয়ার করতে সেই সব গাড়ি অনেক কম দামে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলিতে আরও বেশি করে পাঠাবে। আমরা তখন ওই গাড়িগুলি আরও সস্তায় কিনতে পারব।’’
পেট্রল, ডিজেলে চলে না, টোটোর মতো এমন গাড়ি তো ইতিমধ্যেই রাজ্যের জেলায় জেলায় এসে গিয়েছে। তবে বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা ভারতে এখনও খুবই কম। চট করে তা বাড়ার সম্ভাবনাও নেই। ‘‘কারণ, সেই প্রযুক্তি বিদেশ থেকে কিনতে গেলে এখন তার দামও হবে বেশ চড়া’’, বলছেন দীপঙ্করবাবু।
পড়ুন- ‘জোনাকি’ ব্যাকটেরিয়ারাই এ বার খুঁজে দিতে পারবে ল্যান্ডমাইন!
বিশিষ্ট অটোমোবাইল বিশেষজ্ঞ হরিশ অগ্রবাল যদিও এই বক্তব্য মানতে চাইছেন না। লন্ডন থেকে টেলিফোনে বললেন, ‘‘২০৩০ সালের মধ্যে পেট্রল, ডিজেলে চলা গাড়ি রাস্তা থেকে পুরোপুরি উধাও না হয়ে গেলেও, ওই গাড়িগুলি ‘নভেলটি আইটেমে’ পরিণত হবে। লোকে তা বাড়িতে সাজিয়ে রাখতে পারে। কিন্তু তা ব্যবহার করতে চাইবেন না।’’
কেন চাইবেন না?
এই যানজট থাকবে না চিনে?
অটোমোবাইল বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, অনেক কম দামে বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনা যাবে। তার মেরামতি, রক্ষণাবেক্ষণের খরচও বাজার-চলতি সর্বাধুনিক গাড়িগুলির চেয়ে অনেকটাই কম হবে। যখন আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেনের বড় বড় গাড়ি নির্মাতা সংস্থাগুলি ঢালাও ভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ি বানাতে শুরু করবে, তখন বিশ্বজোড়া প্রতিযোগিতার ধাক্কায় তার দাম আরও কমবে। কমবে তার ব্যাটারির দামও। বাড়বে ব্যাটারিগুলির সক্ষমতার পাল্লাও। সাধারণ ভারতীয়ের অর্থনীতির যা হাল, তাতে ভারত সরকারও অনতিদূর ভবিষ্যতে ওই গাড়ি ঢালাও ভাবে বাজারে আনতে উৎসাহিত হবে।
তবে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ভারতের পক্ষে এই অনিবার্য ভবিষ্যৎকে সার্বিক ভাবে গ্রহণ করাটা বোধহয় একটু অসম্ভবই হবে, এমনটাও মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।
ভারতের পক্ষে কাজটা কি কঠিন হবে?
কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টের (আইআইএম) অধ্যাপক, অর্থনীতিবিদ সৌমেন শিকদারের কথায়, ‘‘এটা একটা ভাল সায়েন্স ফিকশন হয়ে উঠতে পারতো। কিন্তু আমি বলব, ততটা ভাল সায়েন্স ফিকশন এটা হয়ে উঠতে পারেনি। কারণ, ভাল সায়েন্স ফিকশনকে খুব বেশি করে বাস্তব-নির্ভর হতে হয়। বাস্তবের বাইরে গিয়ে ভাল সায়েন্স ফিকশন হয় না কখনওই। ৮ বছরের মধ্যেই পৃথিবীর সব সড়কপথ থেকে পেট্র্ল, ডিজেল চলা গাড়ি উধাও হয়ে যাবে, এটা আমি কল্পনাও করতে পারি না। শিল্পোদ্যোগী (টনি সেবা) নিশ্চয়ই ভারত, চিনের মতো দেশগুলির কথা মাথায় রাখেননি। মাথায় রাখেননি আরও পিছিয়ে থাকা অর্থনীতির দেশগুলির কথাও।’’
তেলের দাম এখনই পড়তির দিকে। ফলে তেল থেকে বিশ্বের নজর বিকল্প শক্তি বা জ্বালানির দিকে চট করে ঘুরে যাওয়ার সম্ভাবনাটা কমই মনে হচ্ছে সৌমেনবাবুর মতো অর্থনীতিবিদদের একাংশের। তাঁর কথায়, ‘‘চট করে এটা হলে বড় বড় গাড়ি তৈরির সংস্থাগুলিতে ছাঁটাই হবে। বেকারের সংখ্যা বাড়বে। তেলের লবি রাজনীতিকদের ওপর প্রভাব খাটিয়ে এটাকে রোখার চেষ্টা করবেই। ভুললে চলবে না, চিনি আমদানি আর কৃষি ভর্তুকি কমানো নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল আমেরিকায়। তাই আমার মনে হয় আগামী ২০ বছরে বৈদ্যুতিক গাড়ি হয়তো আমাদের কৌতূহল আরও বাড়াবে। কিন্তু ওই টুকুই, তার বেশি কিছু হবে না।’’
যানজটে নাকাল দিল্লি
ভারতের পক্ষে কেন চট করে ওই বৈপ্লবিক প্রযুক্তির হাত ধরে আমূল রদবদল ঘটিয়ে ফেলা সম্ভব হবে না, তার আরও কয়েকটি যুক্তি দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টের (আইআইএম) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতিবিদ অনুপ সিংহের কথায়, ‘‘কলকাতার মতো ভারতের বেশির ভাগ রাস্তাঘাটই জনবহুল। চিনের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। সেই রাস্তায় চালকবিহীন বৈদ্যুতিক গাড়ি চালানোর ভাবনাটাই তো মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে! যদিও সম্প্রতি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি সম্মেলনে ডেনমার্কের মতো কয়েকটি দেশ জানিয়ে দিয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যেই তারা সেই সব দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি পুরোদস্তুর চালু করে দেবে। বিশ্বের তেলের লবির বাধার ব্যাপারটা না হয় ছেড়েই দিলাম। কিন্ত ওই গাড়িগুলি চালাতে গেলে যদি ১০০ মাইল গিয়ে কোনও চার্জিং স্টেশনে (ব্যাটারি চার্জ করানোর জন্য) পৌঁছতে হয়, তা হলে অনেকেই সেই ধকল নিয়ে বৈদ্যুতিক গাড়ি কিনতে চাইবেন না। ফলে, সড়ক পরিবহণের পরিকাঠামোও দ্রুত বদলাতে হবে। এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে খুব অল্প দূরত্বের মধ্যে রাস্তায় নামা কোনও বৈদ্যুতিক গাড়ি তার ব্যাটারি চার্জ করিয়ে নিতে পারে।’’
এখনকার বৈদ্যুতিক গাড়িগুলিতে ২০ শতাংশ ব্যাটারির চার্জ করতে লাগে ১ ঘণ্টা সময়। এটা অনেকের পক্ষেই খুব অসুবিধার হবে বলে মনে করছেন অটোমোবাইল বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, ব্যাটারিকে দু’ভাবে চার্জ করা যেতে পারে। প্রচলিত পদ্ধতিতে। সৌরশক্তির সাহায্যেও। সেই সৌরশক্তির সাহায্যে দ্রুত, আরও বেশি পরিমাণে চার্জ করিয়ে নেওয়ার জন্য নতুন নতুন ব্যাটারি-প্রযুক্তির উদ্ভাবনও খুব জরুরি।
ভারতে যানবাহনের জন্য এখন মাসে কতটা পেট্রল, ডিজেল লাগে?
ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের এক শীর্ষ স্তরের কর্তার দেওয়া হিসেব জানাচ্ছে, এই মুহূর্তে যানবাহনের জন্য ভারতে মাসে পেট্রল লাগে ১১ লক্ষ ৮১ হাজার কিলো লিটার। আর ডিজেল লাগে ২৮ লক্ষ ১৯ হাজার কিলো লিটার। পশ্চিমবঙ্গে পেট্রল লাগে মাসে ৮৩ হাজার কিলো লিটার, ডিজেল লাগে ২ লক্ষ ৬৬ হাজার কিলো লিটার। চট করে এই চাহিদা শূন্যের কাছাকাছি চলে যাবে, এমনটা বিশ্বাস করা একটু শক্তই। এখন ৫৩ হাজার পেট্রল পাম্প রয়েছে সারা দেশে, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে ৩ হাজার পেট্রল পাম্প। আর ২/৩ বছরের মধ্যে আরও ১৮ হাজার পেট্রল পাম্প বসানো হবে সারা দেশে। ইন্ডিয়ান অয়েলের সব পেট্রল পাম্পে চার্জিংয়ের ব্যবস্থা নেই এখন। রাজ্যে ইন্ডিয়ান অয়েলের ১ হাজার ৫০টি পেট্রল পাম্পের মধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি চার্জ করার সমান্তরাল ব্যবস্থা রয়েছে মাত্র ২০০টিতে। তবে নতুন যে পেট্রল পাম্পগুলি বসানো হবে ২/৩ বছরের মধ্যে, তার বেশির ভাগেই ব্যাটারি চার্জিং ব্যবস্থা থাকবে।
তবু ‘‘আগামী ১০০ বছরেও ভারতের রাস্তায় রাস্তায় বৈদ্যুতিক গাড়ির রমরমা দেখব, এমন আশা করার দুঃসাহস নেই আমার!’’, বললেন পশ্চিমবঙ্গ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তুষারকান্তি সেন।
এই অর্থনৈতিক পালাবদল কি কোনও রাজনৈতিক পরিবর্তনেরও ভিত গড়ে দিতে পারে?
সমাজবিজ্ঞানী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপকদের একাংশের বিশ্বাস তেমনটাই। তাঁদের বক্তব্য, চট করে নিজেদের জমিটা ছেড়ে দিতে চাইবে না বিশ্বের তেল লবি। তেল বেচেই তারা অস্ত্র কেনে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের চাহিদা মেটায় সেগুলি উন্নত দেশগুলি থেকে আমদানি করে। কিন্তু রাশিয়াকে বাদ দিলে ওই তেল-নির্ভর দেশগুলির সেনাবাহিনী বা সামরিক শক্তির জোর অনেকটাই কম। তাই এর ফলে কোনও বড় আঞ্চলিক সংঘর্ষ বা ‘রিজিওন্যাল কনফ্লিক্ট’-এর ঘটনা হয়তো ঘটবে না। কিন্তু ওই সব দেশগুলিই আমেরিকা, জার্মানির মতো দেশগুলিতে তেলকে কেন্দ্র করে রাজনীতির অন্তর্বিরোধটাকে আরও উসকে দেবে। সেই অন্তর্বিরোধকে আরও গভীর আরও জটিল করে তুলতে পারে।
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক শিবাজীপ্রতীম বসুর কথায়, ‘‘এ বার লড়াইটা হতে পারে আমেরিকার বিরুদ্ধে আমেরিকারই! কারণ, বড় বড় গাড়ি নির্মাতা সংস্থাগুলির বেশির ভাগই আমেরিকার। জার্মানিরও আছে। বৈদ্যুতিক গাড়ি ঢালাও ভাবে বানানো আর তা বাজারে আনতে গেলে তাদের এখনকার গাড়ি বানানোর প্রযুক্তি বদলাতে হবে। তাতে কর্মী ছাঁটাই হতেই হবে। শিল্পপতিরা যেমন ইকোনমিক অডিট করেন, তেমনই রাজনীতিকরা করেন পলিটিক্যাল অডিট। তাঁরা দেখতে, বুঝতে চাইবেন, বৈদ্যুতিক গাড়ি ঢালাও ভাবে বাজারে আনতে গিয়ে মানুষ চটে যাচ্ছেন কি না। ভোট বড় বালাই! ফলে, আমেরিকার মতো পুঁজিবাদী দেশগুলিতে অর্থনৈতিক শক্তির অন্তর্বিরোধটা আরও জোরালো হবে।’’
বাঁচার জন্য, অস্তিত্বরক্ষার জন্য আর ১০০ বছরের মধ্যেই মানবসভ্যতাকে ভিন গ্রহের ভিন মুলুকে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে নিতে হবে- মাসখানেক আগেই এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। এ বার অনিবার্য অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের ছবি আঁকলেন শিল্পোদ্যোগী টনি সেবা। যেহেতু দু’টিই মূলত দূর-দর্শন, তাই আমাদের কিছুটা সময় অপেক্ষা করতেই হবে কী হয়, তা দেখার জন্য!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy