Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
Ukraine

Ukraine: ইউক্রেন সীমান্তে রুশ ফৌজের আস্ফালন! ইতিহাস, গা-জোয়ারি এবং আমেরিকা-চিন

ইউক্রেনের সীমান্ত জুড়ে রাশিয়ার লক্ষ সেনা বাহিনীর সমাবেশ। ইউরোপে আবারও যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব। আপাতত চলছে পারস্পরিক আক্রমণ ও হুঁশিয়ারির পালা।

ইউক্রেন-সঙ্কটের কোথায় শুরু, কোথায় বা শেষ?

ইউক্রেন-সঙ্কটের কোথায় শুরু, কোথায় বা শেষ? অলংকরণ: সনৎ সিংহ।

সংবাদ সংস্থা
সেভাস্তোপোল (ইউক্রেন) শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৯:৫৬
Share: Save:

ইউক্রেনের সীমান্ত জুড়ে রাশিয়ার লক্ষ সেনা বাহিনীর সমাবেশ। আর তাতেই উদ্বিগ্ন আমেরিকা-সহ পশ্চিমের দেশগুলি। ইউরোপে আবারও যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব। আপাতত চলছে পারস্পরিক আক্রমণ ও হুঁশিয়ারির পালা। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কড়া বার্তা দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি জানাচ্ছেন, রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে আবার এক বিশ্বযুদ্ধ-পরিস্থিতি তৈরি হবে। রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালালে, চুপ থাকবে না তারাও। পুতিনের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও হুমকি দিয়েছেন বাইডেন। চুপ নেই রাশিয়াও। তবে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তারা। বলা যায়, আট বছর পর আবার ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়া ও পশ্চিমের দেশগুলির মধ্যে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক চাপানউতোর। কিন্তু এই রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক অস্থিরতার শুরু কোথায়? কী নিয়েই বা পশ্চিমের দেশ ও রাশিয়ার সঙ্ঘাতের শুরু?

ইউক্রেন, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বর্তমান দ্বন্দ্ব

মস্কো এখন ইউক্রেন সরকারকে মিনস্ক চুক্তি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ার জন্য দোষারোপ করছে। ২০১৪ সালে দক্ষিণ ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রাশিয়া নিজেদের দেশে অন্তর্ভুক্ত করার অনেক আগেই অবশ্য এই ইউক্রেন-সঙ্কটের সূত্রপাত। সে জন্য ফিরে তাকাতে হবে একটু পিছনে। তখন, ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ। গোড়া থেকে ইউক্রেনের একটা অংশ চায় পশ্চিম ইউরোপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। তারা চায় ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদান করুক। আর প্রতিরক্ষার জন্য নেটো সামরিক জোটের সদস্য হোক। অন্য অংশ ঠিক এর উল্টোপথে। এঁরা জাতিগত ভাবে রুশ, ভাষাও রুশ।

ইউক্রেন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের অংশ থাকার সময় ’৫৪ সালে রাশিয়ার মধ্যে থাকা ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের অধীনস্থ করা হয়। কিন্তু সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ ধারণাও করতে পারেননি যে, কয়েক দশকের মধ্যে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে সাধের সোভিয়েত ইউনিয়ন। আঁচ করতে পারেননি, ক্রিমিয়ার উপর মস্কোর আর কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। যে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রাশিয়া, ইউক্রেন জটিলতা চলবে বছরের পর বছর।

আবার সেনার সমাবেশ, যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতি।

আবার সেনার সমাবেশ, যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতি। ছবি-সংবাদ সংস্থা

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও স্বাধীন ইউক্রেন

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ইউক্রেন স্বাধীন দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করল বটে, কিন্তু সেখানে বসবাসকারীদের মধ্যে গড়ে উঠল দুই শিবির। রাশিয়া সীমান্তের কাছে উপস্থিত ইউক্রেনে বহু রুশ নাগরিক বসবাস করেন। তাঁরা রাশিয়ার পক্ষে। অন্য পক্ষ আবার পশ্চিমি দেশগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ থাকতে চেয়েছে। তারা চায় ইউক্রেন নেটো-তে যুক্ত হোক। বাধে জট। ২০১৪ সালে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ছিলেন ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে গেলে তাঁকে চাপ দিতে শুরু করে রাশিয়া। অবশেষে আর চুক্তি হয়নি। এ দিকে পুতিনের চাপে কেন এত বড় বাণিজ্য চুক্তি থেকে ইউক্রেন বঞ্চিত হল এ নিয়ে দেশের মধ্যে শুরু হয়ে গেল সঙ্ঘাত। অবস্থা এমন দাঁড়াল যে, ইয়ানুকোভিচ সরকারের পতন হল এবং তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। এর মধ্যে ইউক্রেনে বসবাসকারী রুশরা ইউক্রেন সরকারের বিরুদ্ধাচারণ শুরু করলে তার সুযোগ নেয় রাশিয়া। পুতিন ক্রিমিয়া দখল করেন এবং তাকে রাশিয়ার ভূখণ্ড বলে ঘোষণা করেন।

আট বছর পর আবার কেন জটিলতা?

আট বছর পর আবার কেন জটিলতা? ছবি-সংগৃহীত।

রাশিয়া ইউক্রেন নিয়ে এত চিন্তিত কেন?

সাংস্কৃতিক যোগাযোগের ব্যাপার তো রয়েইছে। কিন্তু রাশিয়ার মতো এত বড় এবং শক্তিধর রাষ্ট্র কেন ইউক্রেন নিয়ে এত ভাবিত, এই প্রশ্ন উঠতেই পারে। উত্তর হল, এর সঙ্গে জড়িত রাশিয়ার নিজস্ব কিছু স্বার্থ। ক্রিমিয়ার সেভেস্তাপোলে রাশিয়ার নৌ-ঘাঁটি রয়েছে। এটাই রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগরে ঢোকার একমাত্র পথ। তাই ইউক্রেন নেটো-তে যোগ দিলে এই সুযোগ আর রাশিয়ার হাতে থাকবে না। ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বের কথা চিন্তা করে রাশিয়া কোনও ভাবেই চায় না ইউক্রেন নেটোয় যোগ দিক। তা ছাড়া, ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়া ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলির সীমান্ত রয়েছে। গোটা রাশিয়ায় সারা বছর সচল রাখা যায় এমন গুরুত্বপূর্ণ উষ্ণ জলের বন্দর আর কোথাও নেই। সেটা রয়েছে ক্রিমিয়ায়। শুধু কী তাই। বাল্টিক সাগরে রাশিয়ার প্রবেশপথই তো এই বন্দর। তাই ইউক্রেন যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেয়, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়বে পুতিনের দেশ। এখন ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলির দিকে ইউক্রেনের সাম্প্রতিক মাখামাখিতে তাই অসন্তুষ্ট পুতিন। আবার, আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি এবং নেটো-মিত্রদের সমন্বয়ে গঠিত পশ্চিমি জোট রাশিয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। এ নিয়েই শুরু হয়েছে আমেরিকার সঙ্গে রাশিয়ার বিরোধ।

ইউক্রেন নিয়ে কেন এত ভাবিত রাশিয়া?

ইউক্রেন নিয়ে কেন এত ভাবিত রাশিয়া? ছবি-সংগৃহীত।

রাশিয়ার পাশে চিন

ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া নিয়ে নেওয়ার পর আমেরিকা এবং পশ্চিমি দেশগুলি যখন রাশিয়ার উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করে, তখন প্রেসিডেন্ট পুতিন চিনের দিকে তাকিয়েছিলেন। আশাতীত সাড়াও মিলেছিল। আমেরিকাকে উপেক্ষা করেই চিন তেল এবং গ্যাস কেনা নিয়েই রাশিয়ার সঙ্গে প্রায় চারশো বিলিয়ন ডলারের চুক্তি সই করে। যা সেই সময়ে রাশিয়াকে অর্থনৈতিক ভরাডুবি থেকে থেকে বাঁচিয়েছিল। আবার যখন ইউক্রেন নিয়ে সঙ্ঘাতের পরিস্থিতি শুরু হয়েছে, তখন আবার চিনকে পাশে পেতে চায় রাশিয়া। সম্প্রতি বেজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট। তবে কূটনৈতিক মহলের মতে, পুতিনের চিন সফর তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সেই ইউক্রেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Ukraine Russia america
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy