লড়াইটা ছিল ১০০ বছরের একটি আখরোট গাছ নিয়ে। গাছের প্রতিপক্ষ ছিল ছ’বছরের এক শিশু কন্যা। আদালতে আার্জি জানিয়েছিলেন শিশুটির মা স্যানতাল বেক।
শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২১ ১০:৩৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
গাছ আগে না মানুষ! এই বিতর্কে ইংল্যান্ডের এক গ্রামের গ্রামবাসীরা অবশ্য গাছকেই বেছে নিয়েছেন।
০২২১
গাছ বনাম মানুষের ওই লড়াই আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। গাছের পক্ষে রায় দিয়েছে আদালতও।
০৩২১
লড়াইটা ছিল ১০০ বছরের একটি আখরোট গাছ নিয়ে। গাছের ‘প্রতিপক্ষ’ ছ’বছরের এক শিশু। গাছটি শিশুটির প্রাণ সংশয়ের কারণ হতে পারে জানিয়ে আদালতে আার্জি জানিয়েছিলেন শিশুটির মা স্যানতাল বেক।
০৪২১
তার পরও অবশ্য রায় গিয়েছে তাঁর বিরুদ্ধেই। স্যানতালকে আদালত জানিয়েছে, পরিস্থিতির সঙ্গে তাঁকেই মানিয়ে নিতে হবে।
০৫২১
স্যানতালের বয়স ৪১। তিনি দুই কন্যার মা। বাড়ি ইংল্যান্ডের নরফোক কাউন্টির ট্রাউজে। আদালতের রায়ে বিস্মিত স্যানতাল প্রশ্ন তুলেছেন, ছ’বছরের শিশুর জীবনের কি কোনও গুরুত্বই নেই আইনের কাছে?
০৬২১
ট্রাউজের গ্রামবাসীরা অবশ্য এতে দোষের কিছু দেখছেন না। বরং তাদের কথায় আদালত যথার্থ রায়ই দিয়েছে। কেন না ১০০ বছরের পুরনো গাছটির ফলন প্রচুর। তা ছাড়া এই গাছের ফল না কি আকারেও সাধারণ আখরোটের থেকে বড়।
০৭২১
১০০ বছরের গাছটির উচ্চতা ৫৫ ফুট। প্রায় পাঁচতলা বাড়ির সমান গাছটির বেশির ভাগটাই ঝুঁকে থাকে স্যানতালের বাগানের উপর। ফলও পড়ে সেখানে। আর সেটাই স্যানতালের চিন্তার বড় কারণ।
০৮২১
স্যানতাল জানিয়েছেন, তাঁর দুই কন্যা ছ’বছরের বনি এবং পাঁচ বছরের বিউ এই বাগানেই খেলা করে। বনির আাখরোটে মারাত্মক রকমের অ্যালার্জি আছে। স্যানতালের দাবি, এই অ্যালার্জি এতটাই গুরুতর যে তা প্রাণ সংশয়ও করতে পারে শিশুটির।
০৯২১
সাধারণত অ্যালার্জি থাকা খাবার খেলেই তার প্রভাব দেখা যায় শরীরে। তবে বনির ক্ষেত্রে আখরোট বা তার খোসা গায়ে লাগলেই সমস্যা শুরু হয়।
১০২১
বিষয়টি বছর দু’য়েক আগে প্রথম আবিষ্কার করেন স্যানতাল। বনির বয়স তখন ৪। বাগানে খেলতে খেলতে হঠাৎই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে সে।
১১২১
স্যানতাল জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ের কান, চোখ এমনকি গলাও ফুলে উঠেছিল। সারা শরীর ভরে গিয়েছিল হাইভস বা এক ধরনের লালচে র্যাশে। দম বন্ধ হয়ে আসছিল বনির। দু’হাতে গলা ধরে মায়ের কাছে ছুটে এসেছিল সে।
প্রতীকী ছবি।
১২২১
সেই ঘটনার পরই স্যানতালের উদ্বেগ বাড়ে। তার আগে অবশ্য মেয়েদের বাগানে খেলা নিয়ে চিন্তা করতেন না স্যানতাল। তিনি ভেবেছিলেন বনি যখন আখরোটের খোলই ভাঙতে পারে না, তবে খাবে কী করে? আখরোট গায়ে লেগেও যে এমনটা হতে পারে ভাবতে পারেননি তিনি।
১৩২১
চিকিৎসক তাঁকে জানিয়েছিলেন, বনির ওপর আখরোটের এই প্রভাব শুধু অ্যালার্জিক নয় অ্যানাফিলাকটিক। প্রাণ সংশয়ের কারণ হতে পারে এমন অ্যালার্জির প্রভাবকে অ্যানাফিলাকটিক বলে।
১৪২১
সেই ঘটনার পরই ১০০ বছরের গাছটির কিছু ডাল ছোঁটে ফেলার আর্জি জানিয়েছিলেন স্যানতাল। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছেই বিষয়টি জানিয়েছিলেন তিনি। মেয়ের অসুস্থতার কথাও জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন গাছটির যে অংশটি তাঁর বাগানের উপর ঝুঁকে রয়েছে, সেই অংশটির ডালপালা কেটে দেওয়া হোক। প্রতিবেশীরা সেই প্রস্তাবে রাজি হননি। বরং আদালত থেকে অনুমতি জোগার করতে গেলে একাধিক মামলার মুখে পড়তে হয় স্যানতালকে।
১৫২১
প্রতি দিন মেয়েদের খেলার আগে নিজে বাগানে ঘুরে ছড়িয়ে থাকা আখরোট এবং আখরোটের খোলা একটি বালতিতে সংগ্রহ করে রাখেন স্যানতাল। তার পর মেয়েদের খেলতে যেতে দেন বাগানে। এতটা সাবধান থাকলেও খেলার সময় মেয়েদের গায়ে যে আখরোট প়ড়বে না তার নিশ্চয়তা নেই।
১৬২১
আদালতকে স্যানতাল জানান, তিনি গাছটির উচ্চতা ১৬ ফুট কমাতে চান। এবং প্রায় ৫০ বর্গ ফুট জুড়ে ছ়ড়িয়ে থাকা গাছটির শাখা প্রশাখা কমিয়ে ২০ ফুটে আনতে চান। আদালত স্যানতালের আবেদন খারিজ করে দেয়।
১৭২১
আদালতের এই সংক্রান্ত বিশেষ কাউন্সিল জানিয়ে দেয়, গাছটি ঘিরে এলাকার মানুষের জোরালো আবেগের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের কাছে এ নিয়ে অনেকে আবেদনও করেছেন।
১৮২১
স্যানতালেরই এলাকার ১১ জন বাসিন্দা গাছটি ছেঁটে ফেলার বিরোধিতা করে চিঠি দিয়েছেন আদালতকে। কেউ লিখেছেন, ‘গাছটির ফলন প্রচুর। তা ছাড়া ১০০ বছরের পুরনো গাছটির ফলগুলিও সাধারণের থেকে আকারে বড়।’ কেউ আবার জানিয়েছেন, ‘আমি এক জন শিল্পী। প্রতি দিন এই গাছটার একটা ছবি আঁকি বা ছবি তুলি। গাছটির বয়স, আভিজাত্য এবং সুন্দর আকৃতি আমাকে মুগ্ধ করে।’
১৯২১
স্যানতালের সমর্থনেও চিঠি লিখেছেন ১৭ জন। এঁদের মধ্যে এক জন জানিয়েছেন, ‘গাছটি ছাঁটা হলে এলাকাটি দেখতে খারাপ লাগবে, এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই। তবে একটি ছ’বছরের শিশুর প্রাণ সংশয়ের কথা যদি বিবেচনা করা হয়, তবে কারও আপত্তি করার কথা নয়।’
২০২১
কাউন্সিল জানিয়েছে, গাছটি যতটা ছেঁটে ফেলার দাবি স্যানতাল জানিয়েছেন, তাতে গাছটির ক্ষতি হওয়ার বা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
২১২১
দু’দিক বিবেচনা করে শেষে স্থানীয় কাউন্সিলর জানিয়েছেন, তিনি ওই শিশুটির মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনুরোধ করেছেন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে এমন কোনও বোঝাপড়ায় আসতে যাতে দু’পক্ষেরই কোনও ক্ষতি না হয়। যদিও মেয়েকে বাঁচিয়ে সেটা কী ভাবে সম্ভব তা এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না স্যানতাল।