নাতালিয়া গ্রেস। ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি।
এ কোনও সিনেমার চিত্রনাট্যের থেকে কম নয়। যাকে ছ’বছরের শিশু ভেবে দত্তক নিয়েছিলেন, সে নাকি আসলে ২২ বছরের এক বামন মহিলা। আর ওই বামন মহিলার জালিয়াতি ধরা পড়ে যাওয়ায় সে নাকি দত্তক বাবা মাকেই খুন করার চেষ্টা করছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার এক দম্পতি ক্রিস্টিন ও মাইকেল বার্নেট ২০০৯ সালে ‘ছয় বছর বয়সি’ এক শিশু কন্যা নাতালিয়া গ্রেসকে দত্তক নেন। নাতালিয়া জন্মসূত্রে ইউক্রেনিয়ান। কিন্তু ওই দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে ২০১৩ সালেই নাতালিয়াকে একটি ঘরে ফেলে রেখে তাঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডা পালিয়ে যান।
শিশুকে ফেলে রেখে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে ওঠারপরই গোটা কাহিনীর উপর থেকে একের পর এক পর্দা উঠতে থাকে। ক্রিস্টিন জানিয়েছেন, ছ’বছরের শিশু বলে যাকে তাঁরা দত্তক নেন আসলে সে ছিল ২২ বছরের এক ‘প্রতারক’ বামন মহিলা। দত্তক নেওয়ার কিছু দিনের পর থেকেই ধীরে ধীরে বিষয়টি তাঁদের কাছে পরিষ্কার হতে থাকে।
আরও পড়ুন : গোপন ক্যামেরায় স্বামীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ধরতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেলেন মহিলা
বার্নেট দম্পতি নাতালিয়াকে যখন দত্তক নিয়ে ফেরেন, দেখেন সে চলতে পারে না। কিন্তু তার দত্তকের কাগজপত্রে সে কথা উল্লেখ ছিল না। যাই হোক তাঁরা মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। মেনে নেন যে তাঁরা একটি চলতে অক্ষম শিশুকেই দত্তক নিয়েছেন। সেই সঙ্গে নাতালিয়ার প্রতি যাতে ভালবাসায় কোনও খামতি না থাকে সে দিকে নজর রাখেন। বার্নেট দম্পতির এর আগেই তিন ছেলে ছিল। তাদের সঙ্গেই মানুষ করতে থাকেন নাতালিয়াকে।
আরও পড়ুন : এমআরআই মেশিনে রোগীকে ঢুকিয়ে ভুলে গেলেন টেকনিশিয়ান! তার পর...
একদিন গোটা বার্নেট পরিবার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যায়। বার্নেট দম্পতির তিন ছেলে সমুদ্রে ঢেউ খাচ্ছিল। নাতালিয়া তার বাবাকে বার বার বলছিল তাকেও ভাইদের কাছে নিয়ে যেতে। কিন্তু ক্রিস্টিন ও মাইকেল তখন এতটাই ক্লান্ত ছিলেন যে নাতালিয়াকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলেন। কিন্তু নাতালিয়ার তর সইছিল না। হঠাত্ই নাতালিয়া উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়তে দৌড়তে সমুদ্রে নেমে যায়। নিজেদের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তাঁরা। যে একটু আগে পর্যন্ত হাঁটতে পারছিল না। সে এখন দৌড়ে গিয়ে সমুদ্রে নেমে গেল? সেই প্রথমবার, চমকে গিয়েছিলেন বার্নেট দম্পতি।
ক্রিস্টিন জানিয়েছেন, পরে নাতালিয়াকে স্নান করাতে গিয়ে লক্ষ্য করেন, তার শরীরে বিভিন্ন জায়গায় যে রোমের উপস্থিতি, তা কোনও ছ’বছরের শিশুর শরীরে থাকা সম্ভব নয়। তারও পরে ক্রিস্টিন আবিষ্কার করেন, নাতালিয়ার অন্তর্বাসে রক্তের দাগ। তা দেখে ক্রিস্টিনের সন্দেহ হয়, নাতালিয়া মোটেই ছ’বছরের শিশু নয়, তার বয়স অনেক বেশি। আর নাতালিয়াও পুতুল, খেলনা নিয়ে খেলতে মোটেই পছন্দ করত না। বরং সে বয়স্ক মহিলাদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করত। আর তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় নাতালিয়ার শব্দ চয়নও মোটেই ছ’বছরের শিশুর মতো ছিল না, সে অনেক পরিণত কথা বলত।
এরপরেও আরও সন্দেহজনক সূত্র পান বার্নেট দম্পতি। তাঁরা একরকম নিশ্চিত হন, নাতালিয়া মোটেই শিশু নয়, তার থেকে অনেক বেশি তার বয়স। এই বিষয়ে বার বার প্রশ্ন করা হয় নাতালিয়াকে। নাতালিয়া বুঝতে পারে তার জারিজুরি ধরা পড়ে যাচ্ছে।
এরপর নাতালিয়া নাকি ক্রিস্টিন ও মাইকেলকে একাধিক বার খুনের চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ। বার্নেট দম্পতির অন্য তিন ছেলেকেও খুনের হুমকি দিতে থাকে নাতালিয়া। এই পরিস্থিতিতে ২০১২ সালে নাতালিয়ার মানসিক চিকিত্সার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানেই মানসিক ও শারীরিক পরীক্ষার পর চিকিত্সকরা জানিয়ে দেন, নাতালিয়ার বয়স মোটেই ছ’বছর নয়, তার বয়স অন্তত ২২ বছর। বার্নেট দম্পতি নিজেদের চেষ্টায় কিছু নথিপত্রও জোগাড় করে ফেলেন। যেখান থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়, নাতালিয়া ১৯৮৯ সালে জন্মেছিল। নাতালিয়াকে বাড়িতে একা ফেলে পালিয়ে যাওয়ার জন্য, বার্নেট দম্পতির বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতে মামলা চলতে থাকে। আদালতে গোটা ঘটনার সব দিক সামনে আসতে থাকে।
এর মধ্যে মাইকেল ও ক্রিস্টিনের বিচ্ছেদও হয়ে যায়। ক্রিস্টিন বার্নেট বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর আত্মসমর্পণ করে সাড়ে পাঁচ হাজার ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় তিন লক্ষ ৮৮ হাজার টাকায় জামিন পান। মাইকেলও আত্মসমর্পণ করার পর তিন লক্ষ ৫৩ হাজার টাকায় জামিন পেয়ে যান।
ব্রিটেনের সংবাদপত্র ডেইলি মেলে ২৪ সেপ্টেম্বর গোটা ঘটনা নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy