পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়ে ইরান প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই চিঠিতে শুধু অনুরোধ ছিল না। ছিল হুমকিও! ট্রাম্পের সেই চিঠি নিয়ে এ বার সরব হলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই। ট্রাম্প প্রশাসনকে নিন্দা করে তিনি বলেন, ‘‘সমস্যা সমাধান লক্ষ্য নয়, ওদের উদ্দেশ্য আধিপত্য বিস্তার করা।’’ শুধু তা-ই নয়, খামেনেইয়ের মতে, ট্রাম্প অন্যদের ‘হেয়’ করতে চান।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতার কথায়, কিছু বিদেশি ব্যক্তিত্ব এবং নেতা আছেন, যাঁরা শুধু অন্যকে হেয়ই করেন। আলোচনা নয়, তাঁদের লক্ষ্য আধিপত্য বিস্তার করা।’’ খামেনেই সরাসরি ট্রাম্পের নাম না করলেও তাঁর নিশানায় যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট, এক বাক্যে তা স্বীকার করছেন অনেকেই। খামেনেইয়ের কথায়, ‘‘উৎপীড়নকারী শক্তিগুলি শুধু তাদের নিজস্ব প্রত্যাশা জাহির করার চেষ্টা করে।’’ ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি জানান, তেহরান কখনই ‘সর্বোচ্চ চাপে’র সামনে নতিস্বীকার করবে না। বসবে না আলোচনায়।
দিন দুয়েক আগেই ট্রাম্প এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠির বিষয়বস্তুই ছিল পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা। চিঠির কথা উল্লেখ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ‘‘আমি আশাবাদী ইরান আলোচনায় রাজি হবে। কারণ, সেটা ওদের পক্ষে ভাল।’’ তবে ইরান যদি তাঁর প্রস্তাব মেনে আলোচনায় না বসে বিকল্প পথের কথা ভাবে, তা মোটেই ফল ভাল হবে না বলেও হুমকি দেন ট্রাম্প। তাঁর কথায়, ‘‘ইরান যদি বিকল্পের কথা ভাবে, তবে অবশ্যই আমরাও পদক্ষেপ করব। কখনই তাদের পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে দিতে পারি না।’’
আরও পড়ুন:
২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জমানায় ইরানের সঙ্গে তিন বছরের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি করেছিল ছয় শক্তিধর রাষ্ট্র— ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি, চিন এবং আমেরিকা। ‘জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত ওই চুক্তিতে স্থির হয়, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি বন্ধ রাখলে তেহরানের উপর বসানো বিপুল আর্থিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে রাষ্ট্রপুঞ্জ, আমেরিকা ও অন্যান্য বেশ কিছু দেশ। যদিও ২০১৮ সালের মে মাসে হোয়াইট হাউসের তরফে একটি টুইট করে বলা হয়, ‘‘আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার পরিপন্থী ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি। তাই এই চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প।’’ এর পর জো বাইডেনের জমানায় ইরানের সঙ্গে নতুন করে পরমাণু সমঝোতার পথ খুলেছিল আমেরিকা। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে সুর চড়াতে শুরু করেন। মাস খানেক আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, যদি ইরান তাঁকে হত্যার চেষ্টা করে, তা হলে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে এ বার ট্রাম্পের নতুন হুমকি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।