Valley of Death in Kamchatka Peninsula of Russia is mysterious dgtl
Russia
এক বার ঢুকলে বেঁচে ফেরে না কোনও প্রাণী, রাশিয়ার এই বরফঢাকা উপত্যকা আজও এক রহস্য
কী ভাবে মৃত্যু হয় প্রাণীগুলির? তীব্র ঠান্ডায় তাদের নিথর দেহগুলি অবিকৃত থাকে। বাইরে থেকে কোনও অসুখ এবং আঘাতের চিহ্নও দেখা যায় না। তবে তাদের মৃত্যুর জন্য কে দায়ী?
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৪:৪৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৪
বরফে মোড়া আগ্নেয়গিরির উপত্যকা। আর সেখানেই লুকিয়ে হাজারো রহস্য। রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপ এ রকমই এক রহস্যের আধার। সেখানে রহস্য এবং জীববৈচিত্র একে অপরকে পাল্লা দেয়।
০২১৪
হিমশীতল এই প্রান্তের একটি ছোট উপত্যকায় রহস্য ছড়িয়ে আছে পরতে পরতে। সেখানে জীবজন্তু প্রবেশ করে। কিন্তু আর বাইরে বার হতে পারে না। গ্রীষ্মে যখন বরফ গলতে শুরু করে, এই উপত্যকায় ঢোকে খরগোস, পাখি-সহ বিভিন্ন জীবজন্তু।
০৩১৪
তাদের মধ্যে বেশির ভাগই তৎক্ষণাৎ সেখানে মারা যায়। নেকড়ের মতো শিকারি ঝাড়ুদার পশুরা সেখানে সহজেই খাবার পেয়ে যায়। শিয়াল, ঈগল থেকে শুরু করে ভল্লুকের মতো বড় প্রাণীও ১.২ মাইল লম্বা মৃত্যুফাঁদে পা দিয়েছে।
০৪১৪
কী ভাবে মৃত্যু হয় প্রাণীগুলির? তীব্র ঠান্ডায় তাদের নিথর দেহগুলি অবিকৃত থাকে। বাইরে থেকে কোনও অসুখ এবং আঘাতের চিহ্নও দেখা যায় না। তবে তাদের মৃত্যুর জন্য কে দায়ী?
০৫১৪
রাশিয়ার ইনস্টিটিউট অব ভলক্যানোলজি অ্যান্ড সিসমোলজি-র আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ ভ্লাদিমির লিয়োনোভের ধারণা, প্রাণীগুলির মৃত্যুরহস্যের কারণ হল আগ্নেয়গিরি। এই মত তিনি প্রচার করেছিলেন ১৯৭৫ সালে। সে বছরই তিনি এই উপত্যকার অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন।
০৬১৪
জনশ্রুতি, এই উপত্যকা থেকে মৃত জীবজন্তুর দেহ নিয়মিত ভাবে সরিয়ে নেওয়া হয়। কে করে সেই কাজ? সে তথ্য আজও অন্ধকারে। সাতের দশকের মাঝে লিয়োনোভের ছাত্র এবং গবেষণায় সহকারী ভিক্টর দেরিয়াজিন দাবি করেন, রুশ সেনাবাহিনী এই উপত্যকার অস্তিত্ব জানতে পেরেই সক্রিয় হয়ে ওঠে। হেলিকপ্টার পাঠিয়ে উপত্যকা থেকে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।
০৭১৪
কামচাটকা উপদ্বীপের জনসংখ্যা সাড়ে ৩ লাখেরও কম। এখানে বেশির ভাগ আগ্নেয়গিরিই অতি সক্রিয়। বরফে ঢাকা আগ্নোগিরির এই উপত্যকাকে ইউনেস্কো ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ এর তকমা দিয়েছে। অনুমতি সাপেক্ষে এর বহু অংশেই যাওয়া যায়। উৎসাহী, গবেষক এবং পর্যটকরা যানও এই উপদ্বীপে।
০৮১৪
তবে উপত্যকার ‘ভ্যালি অব ডেথ’ অংশে সাধারণের প্রবেশ কার্যত নিষিদ্ধ। গেজারনায়া নদীর কাছে এই অংশে আছে বিপজ্জনক তুষারখাঁড়ি। সব জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে হিমশীতল প্রাণীর দেহ।
০৯১৪
সোভিয়েত আমলে এই মৃত্যু উপত্যকার খবর দেওয়া হয়েছিল রুশ সরকারকে। ভূবিজ্ঞানীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে তড়িঘড়ি সেখানে পাঠানো হয়েছিল হেলিকপ্টার। ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল মৃত প্রাণীদের। তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।
১০১৪
এই উপত্যকায় পা রাখলেই নাকি মাথা ঝিমঝিম করে। ঘুম পায়। এমনকি, মাথাব্যথাও করে। এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে বহু বিজ্ঞানী এবং গবেষকেরই। কিন্তু এখনও অবধি কোনও মানুষের মৃত্যু সেখানে হয়নি।
১১১৪
বিজ্ঞানীদের ধারণা, সালফার ডাই অক্সাইড, হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের মতো গ্যাসের কারণেই জীবজন্তুরা মারা গিয়েছে। যে পরিমাণ গ্যাস এই উপদ্বীপে আছে, তার থেকে বেশি থাকলে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
১২১৪
মৃত্যুর কারণ হিসেবে কার্বন ডাই অক্সাইডের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা। মৃত্যু উপত্যকার বাতাসে এই মারণগ্যাসের উপস্থিতি এতটাই বেশি যে, জীবজন্তুরা শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে নিজেদের অজান্তেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ফলে তাদের দেহে কোনও আঘাতের চিহ্নই থাকে না।
১৩১৪
রাশিয়ার মৃত্যু উপত্যকা আবিষ্কার হওয়ার পরে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জল্পনা কল্পনা। লিয়োনোভ যখন এই উপত্যকা আবিষ্কার করেছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন এখানে যারা আসে, তারা সকলেই আতঙ্কিত হয়ে থাকে।
১৪১৪
পাশাপাশি, তিনি এও চেয়েছিলেন উপত্যকা ঘিরে রহস্য দ্রুত দূর হয়ে প্রকাশিত হোক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। তাঁর আশা এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। প্রত্যন্ত এবং ভয়ঙ্কর এই উপত্যকা ঘিরে বিজ্ঞানীদের গবেষণা চলছে। ভবিষ্যতেও এই উপত্যকা আরও অনেক গবেষণার আকর হয়ে উঠবে বলে আশা বিজ্ঞানীদের।