আফগানিস্তানে আতঙ্কে দিন কাটছে উইঘুরদের। প্রতীকী ছবি
১৯৭৬ সাল। আফগানিস্তানে তখন পাশ্চাত্যের খোলা বাতাস বইছে। রাজধানী কাবুলকে অনেকেই 'প্রাচ্যের প্যারিস' বলে ডাকছেন। তেমনই একদিন বাবা-মায়ের হাত ধরে আফগান ভূমে পা রেখেছিলেন তুহান। তার পর পেরিয়ে গিয়েছে বহু দশক। কত বার বদলেছে আফগান তখতের দাবিদার। সাম্প্রতিকতম বদলের সূত্র ধরেই নতুন বিপদ ঘাড়ে চেপেছে তুহানের।
চিনের লাল সরকারের অত্যাচারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ৪৫ বছর আগে মা-বাবার হাত ধরে ঘর ছেড়ে আফগানিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিলেন তুহান। আজ সেই চিনের লাল সরকারের সঙ্গেই মৈত্রী পোক্ত করতে বাড়তি উদ্যোগ নিচ্ছে কাবুলের বর্তমান শাসক তালিবান। আর তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন তুহানের মতো ‘ঘর পোড়া গরু’রা। তা হলে কি তাঁদের চিনে ফেরত পাঠাবে তালিবান?
তুহান এখন বাড়ির কর্ত্রী। সেলাই মেশিনে দিন কাটে। স্বামী এলাকায় রং মিস্ত্রীর কাজ করেন। চার হাতের আয়ে কোনওক্রমে দিন গুজরান হয়। কিন্তু জুলাই মাসে তালিবান প্রতিনিধিদলের তিয়াংজিনে চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে বৈঠকের পর বদলে গিয়েছে চালচিত্র। তালিবানকে আফগানিস্তানের ‘গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তি’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন চিনের বিদেশমন্ত্রী। পাল্টা তালিবান নেতৃত্ব চিনকে ‘ভাল বন্ধু’ বলে বার্তা দেয়।
আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শন রবার্টসের মতে, আফগানিস্তানে ৩ হাজারের বেশি উইঘুর মুসলিম বসবাস করেন। ১৯৪৯ সালে চিনের কমিউনিস্ট পার্টি জিনজিয়াং-এর দখল নেওয়ার পরই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক উইঘুর সম্প্রদায়ের মানুষ চিনের সীমান্ত পেরিয়ে আফগানিস্তানে আশ্রয় নেন। আবার অনেকে সত্তরের দশকের শেষার্ধে চিন ছেড়ে আফগান ভূমে পালিয়ে আসেন। এর মধ্যে অনেকের আফগান নাগরিকত্বও রয়েছে। কিন্তু প্রত্যেকের পরিচয়পত্রে 'চিনা শরণার্থী' কথাটি লেখা আছে।
নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে যখন তালিবান প্রথম বারের জন্য আফগানিস্তান দখল করে, সেই সময় থেকেই চিনের সঙ্গে তাদের ভাল সম্পর্ক। আফগান সীমান্ত এলাকা, বিশেষ করে জিনজিয়াং প্রদেশে যাতে ‘ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট’ বা ‘ইটিআইএম’ মাথাচাড়া দিতে না পারে, সে জন্য তালিবানের উপর নিরন্তর চাপ বাড়িয়েছে চিন। গত জুলাই মাসে তিয়াংজিনের বৈঠকেও চিনা বিদেশমন্ত্রী তুলেছেন উইঘুর প্রসঙ্গ।
চিনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে যে তালিবান উদগ্রীব, তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। কিন্তু তালিবান-চিন বন্ধুত্বের মাশুল তুহানদের দিতে হবে কি? এখন এটাই রাতের ঘুম কেড়েছে আফগানিস্তানে বসবাসকারী হাজার তিনেক উইঘুর মুসলিমের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy