Advertisement
১০ জানুয়ারি ২০২৫
Rashid Khan

‘রাশিদকে সব গুণ দিয়েই পাঠিয়েছিলেন ঈশ্বর’, শিল্পীর প্রথম প্রয়াণ দিবসে লিখলেন সতীর্থ

২০২৪ সালের ৯ জানুয়ারি প্রয়াত হন উস্তাদ রাশিদ খান। শিল্পীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে আনন্দবাজার অনলাইনে স্মৃতিচারণায় দীর্ঘ দিনের সতীর্থ পণ্ডিত সমর সাহা।

image of Rashid Khan

উস্তাদ রাশিদ খান। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

সমর সাহা
সমর সাহা
শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:৪৬
Share: Save:

দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গেল। রাশিদ আর আমাদের মধ্যে নেই। হয়তো একটু ভুল বললাম। অবশ্যই আছে। ওর কাজের মধ্যে দিয়েই প্রত্যেক দিন রাশিদ আমাদের মধ্যে রয়ে গিয়েছে। এক বছর আগে এই দিনটায় সকালে হাসপাতালে পৌঁছে গিয়েছিলাম। মানুষের ভিড়। বিকালের দিকে দুঃসংবাদটা এল! জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ‘এ কোন সকাল রাতের চেয়েও অন্ধকার’ গানটার কথা মনে পড়ছিল বার বার।

খুব ভুল যদি না করি, তা হলে সালটা ছিল ১৯৭৮। রাশিদের তখন মাত্র ১০ বছর বয়স। এসআরএ (সঙ্গীত রিসার্চ অ্যাকেডেমি)-তে অডিশনে একটা ছেলেকে গান গাইতে দেখছি, ওস্তাদ বা বড় গুরুরা কেউই আর কিছু বলছেন না। সবাই চুপ করে শুনছেন। সেই শিশুই রাশিদ। আমি ওর থেকে ১২ বছরের বড়। আলাপ জমে উঠল। নিসার হুসেন খান সাহেবের নাতি রাশিদ। ওরা যে বাড়িতে থাকত, আমি থাকতাম তার থেকে তিন-চারটে বাড়ি পরে। অ্যাকাডেমির ক্লাসে একসঙ্গে বাজানো থেকে শুরু করে একসঙ্গে মাঠে ক্রিকেট-ফুটবল খেলা— অল্প বয়সে রাশিদের সঙ্গে আমার বহু স্মৃতি।

ভাল গুরুর তত্ত্বাবধানে প্রতিভাকে ঘষে মেজে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছনো যায়। কিন্তু এ পৃথিবীতে এমনও কিছু শিল্পী আসেন, যাঁদের ঈশ্বর সব কিছু দিয়েই পাঠান। রাশিদও তেমনই ছিল। তালিম, শিক্ষা, রেওয়াজের বাইরের একটা মানুষ। জ়াকির হুসেনও চলে গেলেন এই সে দিন। তিনিও তো তেমনই এক প্রতিভাধর মানুষ ছিলেন।

Pandit Samar Saha remembers Ustad Rashid Khan on his first death anniversary

অনুষ্ঠানমঞ্চে রাশিদের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করছেন সমর। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

খুব অল্প বয়সেই খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিল রাশিদ। যত দূর মনে পড়ছে, ১৯৮৩ বা ৮৪ সালে ওর প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়। সেখানেও আমিই সঙ্গত করেছিলাম। পরবর্তী সময়ে একসঙ্গে দেশ- বিদেশের একাধিক জায়গায় তবলায় রাশিদকে সঙ্গত করেছি। ও খুব আড্ডা দিতে ভালবাসত। কলকাতার বাইরে কোথাও অনুষ্ঠানে গিয়েছি। রাতে সকলে মিলে আড্ডা শুরু হত। আরও একটা বিষয়, রাশিদ খাদ্যরসিক ছিল। মানুষকে খাওয়াতেও ভালবাসত। রাতে হঠাৎ সবাইকে ওর নাকতলার বাড়িতে ডেকে পাঠাল। কেন? কবাব রান্না করবে। সকলকে নিয়ে ভোর পর্যন্ত চলল দাওয়াত। কোনও দিন মনে হল, সবাইকে বাড়িতে ডেকে নিজে হাতে বিরিয়ানি রান্না করে খাওয়াল। বছর পাঁচেক আগে ওর বাড়িতে শেষ বার ওর হাতের সেই বিরিয়ানি আমি খেয়েছিলাম।

একজন শিল্পী চায় মানুষের ভালবাসা। তার পর একটু অর্থ, নাম, যশ। রাশিদ অল্প বয়সে সব কিছু পেয়েছিল। বাড়ি, গাড়ি, সরকারি সম্মান— সব কিছু। চাইলে তো অন্য ভাবেও জীবনযাপন করতে পারত, কিন্তু করেনি। দুঃস্থ শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। কারও কোনও সমস্যা হলেই তাঁর সাহায্যে পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা তো ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে থাকতাম। পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, জগদীশ প্রসাদ, শুভ্রা গুহ, মশকুর আলি খান— আমরা তো সকলেই একসঙ্গে থাকতাম। পরবর্তী সময়ে হয়তো আমাদের চলার পথ আলাদা হয়েছিল। কিন্তু আমরা কেউ কারও থেকে দূরে সরে যাইনি।

রবীন্দ্রনাথ বা স্বামীজিকে আমি চোখে দেখিনি। কিন্তু তাঁরা যা রেখে গিয়েছেন, আগামী আরও কয়েক হাজার বছর মানুষ তা মনে রাখবেন। রাশিদও হয়তো চলে গিয়েছে। কিন্তু ওর গান তো মন থেকে যায়নি। রাশিদের গান সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে। এখনকার অনেক শিল্পী ওকে নকল করছেন। ওর ঘরানার অনুকরণ করেই দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী দিনেও হয়তো আরও অনেককেই অনুপ্রাণিত করবে রাশিদের সঙ্গীত। আজ থেকে পাঁচশো বছর পরেও আমার বিশ্বাস, রাশিদের নাম মানুষ সমান ভাবে উচ্চারণ করবেন। যত দিন বেঁচে থাকব, মনে রাখব যে রাশিদ বলে আমার একজন বন্ধু ছিল। সে দারুণ গান গাইত।

(লেখক বিশিষ্ট তবলিয়া। সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত।)

অন্য বিষয়গুলি:

Rashid Khan classical singer Classical Music Death Anniversary Samar Saha tribute Tollywood News
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy