ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসি। —ফাইল চিত্র।
বিতর্কিত তো ছিলেনই। কট্টর মৌলবাদীও ছিলেন। প্রতিবাদীদের ফাঁসিতে ঝোলানো থেকে শুরু করে মেয়েদের উপরে নীতি- পুলিশের অত্যাচার— সবই ছিল ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসির শাসনে। কাল কপ্টার দুর্ঘটনায় রইসির আকস্মিক মৃত্যুর পরে আমেরিকা কোনও সমবেদনার পথে না হেঁটে সরাসরিই বলল, ‘‘এই মানুষটির হাতে যে অনেক রক্ত লেগে রয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।’’ কারও কারও প্রশ্ন, গাজ়ার মানুষের রক্ত তা হলে কার হাতে লেগে? ইজ়রায়েল, না তাদের অস্ত্র জোগানো আমেরিকা?
রইসির কপ্টার গত কাল নিখোঁজ হওয়ার পরে আমেরিকা জানিয়েছিল, তারা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকেও সব জানানো হয়েছে। এর পর আজ হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র জন কার্বি ওই মন্তব্যটি করেন রইসি সম্পর্কে। সেই সঙ্গে আরও বলেন, ‘‘এলাকার চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলিকে মদত দিচ্ছিলেন তিনি। গোটা অঞ্চলকে অস্থির করে রাখার অভিযোগ ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকা ভবিষ্যতেও তুলবে।’’
ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে শোরগোল ফেলা পরপর কয়েকটি ঘটনায় চর্চিত হয়ে রইল রইসির জীবনের শেষ অধ্যায়। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে ইরানের কলকাঠিতেই জঙ্গি গোষ্ঠী হিজ়বুল্লা তাদের উপরে হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছিল ইজ়রায়েল। সিরিয়ার দামাস্কাসে ইরানের দূতাবাসে বোমা ফেলেছিল তারা। ইজ়রায়েলকে নিশানা করে ইরান পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। এর পর ইস্পাহানের কাছে ইরানের বায়ুসেনার পরিকাঠামো লক্ষ্য করে বোমা ফেলে আসে ইজ়রায়েলের যুদ্ধবিমান। ইতিমধ্যে হরমুজ় প্রণালীতে ইজ়রায়েলি মালিকের একটি জাহাজকে পণবন্দিও করে ইরানের বাহিনী। আপাতত অস্ত্র সংবরণ করেও তাল ঠুকছিল দু’দেশ।
ঠিক এই সময়ে কপ্টার ভেঙে রইসির মৃত্যু, যাকে এখনও পর্যন্ত ‘দুর্ঘটনা’ই বলছে ইরান। কিন্তু কোনও ভাবে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ উঠলে গোটা পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, আমেরিকাও পরোক্ষে ইরানকে মাঝেমধ্যেই বার্তা পাঠিয়েছে, যাতে পশ্চিম এশিয়ায় উত্তেজনা না বাড়ে। নিজের দেশের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে কড়া দর-কষাকষিরই পক্ষপাতী ছিলেন রইসি। আমেরিকাকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছিলেন শেষ দিন পর্যন্ত। আমেরিকার ‘বন্ধু’ যে পাকিস্তানের সঙ্গে গত জানুয়ারিতে ইরানের যুদ্ধ বাধার উপক্রম হয়েছিল, শাহবাজ় শরিফের সরকার গঠনের পরে তিন দিন ধরে সে দেশেই সস্ত্রীক সফর করে দ্বিপাক্ষিক একাধিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার অঙ্গীকার করে এসেছিলেন রইসি। স্পষ্টতই, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিতে শত্রুতা ভুলে বন্ধুতার প্রয়োজন বুঝেছিল দুই দেশই।
আমেরিকা অবশ্য তার পরেই পাকিস্তানকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছিল। সেই হুঁশিয়ারির সুর আবার শোনা গিয়েছিল চাবাহার বন্দর নিয়ে ভারতের সঙ্গে ইরানের চুক্তির পরে। শোনা যাচ্ছে, ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গেও চুক্তির পথে হাঁটছিলেন রইসি। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, দু’জনেই রইসির মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে তাঁকে ‘প্রকৃত বন্ধু’ বলেছেন। কট্টর মৌলবাদী হয়েও কি দেশের ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কমিউনিস্ট চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা বুঝেছিলেন রইসি? না কি সেই সিদ্ধান্তও আসলে দেশের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের? অনেকেই বলছেন, ইরানের নীতি তো প্রেসিডেন্ট তৈরি করেন না। স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তাঁর নেই। তিনি খামেনেইয়ের আজ্ঞাবহ। কাজেই রইসির মৃত্যুতেও ইরানের জাতীয় নীতির খুব একটা বদল হওয়ার সম্ভাবনা কম। বস্তুত, খামেনেই গত কাল তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
পশ্চিম এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে একরাশ প্রশ্ন রেখেই শেষ হল রইসির জীবন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy