ভোটের রাতে: স্ত্রী জিল-কে সঙ্গে নিয়ে বক্তৃতায় জো বাইডেন। ডেলাওয়্যারের উইলমিংটনে। হোয়াইট হাউসে ভাষণের ফাঁকে হাততালি দিতে দেখা গেল সস্ত্রীক ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। এএফপি
বিলম্বিত ফল
• আমেরিকায় ইভিএম নয়, ভোট হয় ব্যালটে
• এ বার সংক্রমণের আশঙ্কায় ১০ কোটি আমেরিকান ভোট দিয়েছেন পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে
• এই বিপুল সংখ্যক পোস্টাল ব্যালট এখনও গোনা শেষ হয়নি, সময় লাগছে
• ভোট শেষ হয়েছে রাত ৮টায়, কোনও কোনও প্রদেশে ৯টায়। মঙ্গলবার রাতে ভোট গণনা বন্ধ ছিল, শুরু হয়েছে বুধবার ভোর থেকে
• পাঁচটি রাজ্যে এখনও সমানে সমানে টক্কর চলছে
ঝড়ের চোখ। ভোট-পর্ব শেষ হওয়ার পরে আমেরিকার রাজধানীর চেহারাটা ঠিক এ রকম।
যখন কোনও জায়গার উপর দিয়ে প্রবল ঝড় বয়ে যায়, প্রথমে বেশ কয়েক ঘণ্টা দাপট চলে। তার পরে হঠাৎ সব স্তব্ধ হয়ে যায়। রোদ ওঠে। মনে হয়, বুঝি ঝঞ্ঝা মিটল। কিন্তু তার পরে ফের শুরু হয় তাণ্ডব। দ্বিতীয় দফার ঝড়ের। আজ সকাল থেকে ডিসি-র অবস্থাটা ঠিক সে রকম। অনেক হইচইয়ের পরে আপাত নিস্তরঙ্গ। কিন্তু সেই নৈঃশব্দ্যের মধ্যে যেন লুকিয়ে আছে দ্বিতীয় দফার ঝড়ের পূর্বাভাস।
প্রথম দফার ঝড়টা কাল মাঝরাতেই তুলেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথমে টুইটারে লিখলেন— নির্বাচন ‘চুরি’ হয়ে গিয়েছে। টুইটার কর্তৃপক্ষ সেই টুইট মুছে দেওয়ার পরেও শান্ত হলেন না প্রেসিডেন্ট। রাত আড়াইটের সময়ে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বলে দিলেন, ‘‘কোটি কোটি মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু এক দল হতভাগ্য সেই ভোটকে গ্রাহ্যই করছে না। আমরা কিছুতেই এটা মেনে নেব না।’’ এখানেই না-থেমে তাঁর দাবি, ‘‘আমি তো জিতেই গিয়েছি। এ বার সুপ্রিম কোর্টে যাব।’’
আরও পড়ুন: ভোটগণনার মাঝেই জেতার দাবি, ট্রাম্প-বাইডেনকে ফেসবুকের ‘হুঁশিয়ারি’
নানা কারণে ঐতিহাসিক এই নির্বাচনে নতুন ইতিহাস গড়লেন প্রেসিডেন্ট। ভোট গণনার মাঝপথে বললেন, ‘‘জোচ্চুরি হচ্ছে, আমেরিকার মানুষকে ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে।’’ বিশ্বের প্রাচীনতম আধুনিক এই গণতন্ত্রে কোনও রাষ্ট্রনেতা কখনও কি এ ভাবে ভোট-প্রক্রিয়া সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন? মনে তো পড়ে না। তাঁর ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী, রেকর্ড সংখ্যক ভোট পাওয়া জো বাইডেনও অবশ্য চুপ থাকেননি। বলেছেন, তাঁর আইনজীবীরাও সুপ্রিম কোর্টে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। পরে দুই নেতাই বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেন, কেউ পরাজয় মেনে নেবেন না। আমেরিকার নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, পরাজিতকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিবৃতি দিয়ে জানাতে হয় যে, তিনি তাঁর পরাজয় মেনে নিচ্ছেন। তার পরেই বিজয়ীর বক্তৃতা দেন অন্য জন।
প্রেসিডেন্ট যখন মাঝরাতে এই ঘোষণা করছেন, তখন গণনা চলছে। দেখা যাচ্ছে বাইডেনের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি টক্কর চলছে প্রেসিডেন্টের। আর সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ (ভারতীয় সময় রাত সাড়ে এগারোটা) যখন এই লেখাটা শেষ করছি, তখনও টিভির পর্দায় সেই একই সংখ্যা— বাইডেন ২৪৮, ট্রাম্প ২১৪। ইতিমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ ফ্লরিডার ২৯টি এবং ওহায়োর ১৮টি ইলেক্টোরাল ভোট জিতে নিয়েছেন ট্রাম্প। আর রিপাবলিকানদের শক্ত ঘাঁটি টেক্সাসের ৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোট যে তাঁর দিকেই যাবে, তা তো প্রত্যাশিতই ছিল। অন্য দিকে, ক্যালিফর্নিয়ার ৫৫টি ভোট যে বাইডেন জিতে নেবেন, তা নিয়েও কোনও সংশয় ছিল না। দুপুরে ঘোষণা করা হল, উইসকনসিন (১০) এবং আরিজ়োনা (১১) যাচ্ছে বাইডেনের ঝুলিতেই। যদিও উইসকনসিনে দু’জনের মধ্যে মাত্র এক শতাংশের ফারাক থাকায় সেখানে পুনর্গণনার দাবি তুলেছেন ট্রাম্প। মিশিগানে গণনা বন্ধ রাখার আর্জি জানিয়ে আদালতে গিয়েছে ট্রাম্প শিবির। তাদের দাবি, কী ভাবে গণনা হচ্ছে, তা দেখার সুযোগ দিতে হবে। কারণ ১৬ আসনের এই প্রদেশটি জেতা ট্রাম্পের জন্য খুব জরুরি। সব মিলিয়ে নজর এখন পাঁচ প্রদেশে— জর্জিয়া (১৬), মিশিগান (১৬), নেভাডা (৬) , নর্থ ক্যারোলাইনা (১৫) এবং পেনসিলভেনিয়া (২০)। বাইডেন বা ট্রাম্প, যিনিই ২৭০-এ পৌঁছন না কেন, তাঁকে এই পাঁচটি প্রদেশের অধিকাংশে জিততেই হবে।
অতিমারি-আবহে সংক্রমণের আশঙ্কায় এ বার বিপুল সংখ্যক পোস্টাল ভোট পড়েছে। গণনা কেন্দ্রে ঠিক সময়ের মধ্যে সেই ভোট পৌঁছে দেওয়ার প্রায় দুঃসাধ্য কাজটা চালিয়ে যাচ্ছে ডাক বিভাগ। টিম-ট্রাম্পের অনুমান, পোস্টাল ব্যালট যাঁরা দিয়েছেন, তাঁরা অধিকাংশ ডেমোক্র্যাট। ফলে ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে পোস্টাল ভোট গণনা সম্পূর্ণ না হয়।
আরও পড়ুন: ‘কারচুপি’র অভিযোগ তুলে কোর্টে যাওয়ার হুমকি ট্রাম্পের, প্রস্তুত বাইডেনও
দু’দিন আগে পর্যন্ত জনমত সমীক্ষা বলছিল, ট্রাম্পের থেকে অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। ছবিটা পাল্টে গেল কী করে? আজকের বুথফেরত সমীক্ষা বলছে, ল্যাটিনো ও হিসপ্যানিকদের (মেক্সিকো ও ল্যাটিন আমেরিকার বংশোদ্ভূত, স্প্যানিশভাষী) ভোট গিয়েছে ট্রাম্পের দিকেই। তাঁরা কিন্তু সাধারণ ভাবে ডেমোক্র্যাট সমর্থক বলেই পরিচিত।
কী ভাবে নিজের দিকে হিসপ্যানিক ভোট টানলেন প্রেসিডেন্ট?
এইট১বি ভিসা নিয়ে নানা নিষেধাজ্ঞার জন্য ট্রাম্পের ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভোটব্যাঙ্কে টান পড়ছিল। তার পরে কমলা হ্যারিসকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী করে বাজিমাত করার চেষ্টা করেছেন বাইডেন। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প তাঁর আদত ভোটব্যাঙ্ক, অর্থাৎ শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছিলেন স্প্যানিশভাষী ভোটদাতাদের উপরে। ভোট প্রচারের শেষ লগ্ন পর্যন্ত হিসপ্যানিক-অধ্যুষিত ফ্লরিডাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন তিনি। করেছিলেন একাধিক সভা। বার বার জিজ্ঞাসা করেছেন, তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার কথা। এই ‘টাগের্ট-ভিত্তিক’ অর্থাৎ বিশেষ জনগোষ্ঠীর উপরে নজর দিয়ে প্রচার চালানোয় যে কাজ হয়েছে, তার প্রমাণ, ফ্লরিডা ট্রাম্পের দখলে।
ট্রাম্পের জন্য সমর্থন আদায় করতে সফল হয়েছেন ‘কিউঅ্যানন’রাও। অতি দক্ষিণপন্থী এই দলটি একটি ‘কনস্পিরেসি থিয়োরি’ বা ষড়যন্ত্র-তত্ত্বের জনক। তারা লাগাতার প্রচার চালিয়েছে যে, সারা পৃথিবী জুড়ে শিশুদের যৌন হেনস্থাকারীরা দল পাকাচ্ছে এবং ট্রাম্পকে গদিচ্যুত করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র আঁটছে। তাদের হাত থেকে আমেরিকাকে বাঁচাতে ট্রাম্পকেই মসনদে রাখা প্রয়োজন। সেই ষড়যন্ত্র-তত্ত্বেও কাজ হয়েছে বলে মনে করছেন ভোট-পর্যালোচকেরা।
গত কাল রাত থেকে হোয়াইট হাউসের সামনে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছেন ডেমোক্র্যাট সমর্থকেরা। ‘ট্রাম্প বিদায়’ পার্টি করবেন বলে। বিক্ষোভের আঁচ থেকে প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনকে বাঁচাতে সেটি অস্থায়ী প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। এই দু’দিন শহরে গাড়ি পার্কিংয়ের উপরেও নানা নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। অন্য দিকে শোনা যাচ্ছে, কট্টর দক্ষিণপন্থীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ট্রাম্প হেরে গেলেই রাস্তায় মেশিন গান নিয়ে নেমে পড়বেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy