চলছে ভোটগণনা। ছবি: এএফপি।
প্রচার চলাকালীন ক্রমাগত ভোটারদের মনে ভোট-পদ্ধতি নিয়ে ভয় দেখিয়ে গিয়েছেন তিনি। তাতিয়ে গিয়েছেন অনুগামীদের। গণনা শেষ হওয়ার আগেই তিনি নিজেকে জয়ী ঘোষণা করে দেবেন বলে আশঙ্কা করেছিল ডেমোক্র্যাট শিবির। আজ সেটাই করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, এই ভোটে তিনি হারলে দাঙ্গা বাধা আশ্চর্য নয় গোটা দেশে।
সারা বিশ্বের চোখ এখন আমেরিকার দিকে। ট্রাম্প ফিরছেন, না বাইডেন আসছেন, এ নিয়ে উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা আজ তুঙ্গে। এ বারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ব্যতিক্রমী কয়েকটি বিশেষ কারণে। প্রথমত, করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর নিরিখে আমেরিকা এখন প্রথম। দ্বিতীয়ত, রাজনীতি, কূটনীতি ও অর্থনীতির পরিবর্তে এই নির্বাচনের প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্ণবৈষম্য, লিঙ্গবৈষম্য, সামাজিক মানদণ্ড, ও মূল্যবোধের মতো কিছু প্রশ্ন। আমেরিকা কি পারবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে পাল্টাতে? নাকি জাত্যাভিমান আর সনাতন ধ্যানধারণাকে আঁকড়ে থাকারই জয় হবে আবার?
এই নির্বাচন তাই আক্ষরিক অর্থে আমেরিকার ধর্মসঙ্কট।
গত কাল প্রথম ভোট দিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রূপসা ইকবাল। নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনের বাসিন্দা রূপসা জানিয়েছেন, প্রথমবার ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা তাঁর অসাধারণ। আমেরিকায় এই প্রথম বার তিনি ভোট দিচ্ছেন জেনে বুথে উপস্থিত স্বেচ্ছাসেবী ও ভোটকর্মীরা হাততালি দিয়ে তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ডেমোক্র্যাট সমর্থক রূপসা আগেও বিল ক্লিন্টনের হয়ে প্রচারের কাজ করেছেন। এ বার সরাসরি ভোটের কাজে অংশ নিতে না পেরে ফোন ব্যাঙ্কিংয়ের কাজ করেছেন। রূপসা জানিয়েছেন, তিনি প্রত্যয়ী, তাঁর দলই ক্ষমতায় আসবে। ভোট দেওয়ার সময়ে সস্তায় স্বাস্থ্য আর শিক্ষা পরিষেবা, মধ্যবিত্তদের করে ছাড়, মেয়েদের সমানাধিকারের বিষয়গুলিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। রূপসার মতো প্রথম বার ভোট দিল আমার পরিচিত অনন্যাদির মেয়ে প্রতীতিও। ওঁরাও নিউ জার্সিতে থাকেন। তবে আমাদের মন্টগোমেরিতে বুথে যাওয়া বারণ ছিল। ভোটারদের আগেই মেল করে বলা হয়েছে, ভোট যেন তাঁরা ব্যালটে পাঠান।
আমার ডেমোক্র্যাটপন্থী বন্ধুরা মনে করে, ২০১৬ সালে ট্রাম্প জিতেছিলেন কিছু চরমপন্থা অবলম্বন করে। তাঁর প্রস্তাবিত অভিবাসী ও শরণার্থী সংক্রান্ত বিধিনিষেধ তিনি আংশিক বাস্তবায়িতও করেছেন। যদিও মেক্সিকোর সঙ্গে দেওয়াল তৈরি এখনও অধরা। পরিচিত ডেমোক্র্যাট সমর্থকেরা বলে থাকেন, ট্রাম্প আসলে হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার নব্য সংস্করণ। তাঁর সমর্থকেরা অর্থনীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ে মাতোয়ারা, কিন্তু ট্রাম্পের ব্যবহার, দুর্নীতি, স্বজনপোষণ নিয়ে তাঁরা উদাসীন, কখনও খুশিও। এঁরা কট্টর দক্ষিণপন্থী না হলেও কট্টর ট্রাম্পপন্থী এবং এটাই ট্রাম্পের কৃতিত্ব যে, তিনি রিপাবলিকান দলটাকে পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছেন।
অন্য দিকে, বামপন্থীরা ট্রাম্পের উপর তিতিবিরক্ত বললে কম বলা হয়। তাঁরা চান, নির্ভরশীল নেতৃত্বের হাত ধরে এ দেশের রাজনীতি ও জনজীবনে ফিরে আসুক সততা, সাম্য, শ্রদ্ধা ও বিনয়ের মতো মূল্যবোধ, আসুক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। তাই তাঁরা চাইছেন বাইডেনকে, যিনি ক্লিন্টন-ওবামা ঘরানার অভিজ্ঞ ডেমোক্র্যাট। তাঁর পক্ষে আছেন উদারপন্থীরা ও এমন বহু মানুষ, যাঁরা বর্তমান প্রেসিডেন্টের আচরণে লজ্জিত, ক্রুদ্ধও।
বাকি রইলেন তুলনায় সংখ্যালঘু কিন্তু ফল নির্ধারক মধ্যপন্থীরা। অনেক মধ্যপন্থী আছেন, যাঁরা হয়তো বাইডেনের সমর্থক নন, কিন্তু যে ভাবেই হোক, ট্রাম্পের অপসারণ চান। আবার ডেমোক্র্যাট দলে চরম বামপন্থী নব্য তুর্কিদের উত্থান অনেক মধ্যপন্থীকে চিন্তায় ফেলেছে। যেমন রব (পদবি প্রকাশে অনিচ্ছুক)। ওহায়োর রিপাবলিকান পরিবারে বড় হওয়া ও বর্তমানে নিউ জার্সি নিবাসী রব বললেন, ‘‘আমি অর্থনীতির ব্যাপারে দক্ষিণপন্থী, কিন্তু সামাজিক প্রশ্নে উদার। মনে করি না যে, কেউ এসেই দেশের অবস্থা পুরো পাল্টে দেবেন। আমি দু’দলের খবরই পড়ি। দেখি কী ভাবে একই খবর দু’ভাবে পরিবেশিত হয়। তার পরে নিরপেক্ষ ভাবে গবেষণা করি নিজের মতো। পরিশেষে সবটাই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়।’’
রেকর্ড সংখ্যক আমেরিকান এ বার আগে ভাগে ডাক যোগে ভোট দিয়েছেন। বেশির ভাগ নির্বাচনী সমীক্ষা বাইডেনকে এগিয়ে রেখেছেিল দশ শতাংশের বেশি ভোটে। পরে অবশ্য ফারাকটা কমে যায়। ২০১৬-র মতো এ বারও দুই পক্ষের লড়াই হচ্ছে সূচ্যগ্র মেদিনী না-ছাড়ার, এবং তা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy