US Presidential Election 2020: Some Interesting Facts about The White House dgtl
the white house
ঘুরে বেড়ায় লিঙ্কনের ‘আত্মা’, হোয়াইট হাউস রক্ষণাবেক্ষণেই বছরে খরচ কয়েকশো কোটি টাকা!
বিদায়ী প্রেসিডেন্ট চলে যাওয়ার পরে নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য এই ভবনকে নতুন করে সাজানো হয়। আসবাবপত্র, শিল্পসামগ্রী-সহ পুরো বাড়ির অন্দরসজ্জাই আমূল পাল্টে যায়।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২০ ১১:০৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
হোয়াইট হাউস। রাজনীতি, কূটনীতি, শক্তি এবং সম্ভ্রমের প্রতীক। ১৬০০, পেনসিলভানিয়া অ্যাভিনিউয়ের এই প্রাসাদ ঘিরে জড়িয়ে আছে বহু আকর্ষণীয় তথ্য। পরবর্তী আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে স্বাগত জানাতে চলেছে বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই ভবন।
০২২০
হোয়াইট হাউসের নির্মাণকারী স্থপতি জেমস হোবান ছিলেন জন্মসূত্রে আইরিশ। তিনি ১৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে ফিলাডেলফিয়ায় কেরিয়ার শুরু করেছিলেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বাসভবন হওয়ার ১০০ বছর পর অবধি এই বাড়ির নাম ছিল ‘এগজিকিউটিভ রেসিডেন্স’।
০৩২০
‘হোয়াইট হাউস’ নামকরণ হয় ১৯০১ সালে, প্রয়াত প্রাক্তন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট টেডি রুজভেল্টের সময়ে। ডাবলিনের লেনস্টার হাউসের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের স্থাপত্যরীতির সাদৃশ্য আছে।
০৪২০
হোয়াইট হাউসের জন্য জমি পছন্দ করা থেকে ফরাসি স্থপতি পিয়ের লেফঁর তৈরি নকশা অনুমোদন, সবই করেছিলেন আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন। কিন্তু তিনি কোনও দিন এই ভবনে পা রাখতে পারেননি।
০৫২০
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওয়াশিংটনের মেয়াদ শেষ হয় ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দে। তার দু’বছর পরে তিনি প্রয়াত হন। হোয়াইট হাউসের নির্মাণপর্ব শেষ হয় ১৮০০ সালে। অর্থাৎ ওয়াশিংটনই একমাত্র আমেরিকান প্রেসিডেন্ট যিনি এই ভবনে কোনও দিন থাকেননি।
০৬২০
১৮০০ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর আমেরিকার দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস প্রথম বার এই ভবনে থাকতে শুরু করেন। ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে গ্রেট ব্রিটেন এবং তার সহযোগী দেশগুলির বিরুদ্ধে আমেরিকার যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধের জেরে ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে এই ভবনে আগুন লাগিয়ে দেয় ব্রিটিশ বাহিনী।
০৭২০
আবার ডাক পরে স্থপতি হোবানের। তাঁর পরিকল্পনায় নতুন করে সেজে ওঠে হোয়াইট হাউস। মেরামতি ও নতুন নির্মাণপর্ব শেষ হয় ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে। পরবর্তী সময়ে হোবান মাঝে মাঝে এসেছেন হোয়াইট হাউসের কোনও অংশের সংযোজন উপলক্ষে।
০৮২০
প্রতি বার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট চলে যাওয়ার পরে নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য এই ভবনকে নতুন করে সাজানো হয়। আসবাবপত্র, শিল্পসামগ্রী-সহ পুরো বাড়ির অন্দরসজ্জাই আমূল পাল্টে যায়।
০৯২০
এই বাড়িতে থাকার জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে কোনও অর্থ দিতে হয় না ঠিকই। কিন্তু অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রেই তাঁকে ব্যয়ভার বহন করতে হয়।
১০২০
আমেরিকার নবম প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন, দ্বাদশ প্রেসিডেন্ট জ্যাকারি টেলর প্রয়াত হয়েছিলেন হোয়াইট হাউসে। এ ছাড়াও দশম প্রেসিডেন্ট জন টাইলারের স্ত্রী লেটিটিয়া টাইলার, ২৩তম প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন হ্যারিসনের স্ত্রী ক্যারোলিন হ্যারিসন এবং ২৮তম প্রেসিডেন্ট উডরো উইলসনের স্ত্রী এলেন উইলসন— এই ৩ জন প্রাক্তন ফার্স্ট লেডিরও মৃত্যু হয় এই বাড়িতেই।
১১২০
অন্যান্য ঐতিহাসিক ভবনের মতো হোয়াইট হাউসের সঙ্গেও জুড়ে গিয়েছে ভৌতিক তকমা। অনেকেরই দাবি, এই বাড়িতে আমেরিকার ষোড়শ প্রেসিডেন্ট প্রয়াত আব্রাহাম লিঙ্কনের অশরীরী আত্মার উপস্থিতি টের পাওয়া গিয়েছে।
১২২০
হোয়াইট হাউসে বিস্তৃত সুইমিং পুল আছে। এ ছাড়া আরও একটি পুল তৈরি হয়েছিল প্রয়াত প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের আমলে। ইন্ডোর সেই পুল বর্তমানে আছে জেমস এস ব্র্যাডি প্রেস ব্রিফিং রুমের নীচে। অথচ শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এই অত্যাধুনিক ভবন প্রথম প্রায় ১০০ বছর ছিল বিদ্যুৎহীন।
১৩২০
১৮৯১ খ্রিস্টাব্দ অবধি হোয়াইট হাউস আলোকিত হত গ্যাসবাতিতে। প্রথম বিদ্যুৎ সংযোগ এসেছিল ২৩তম প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন হ্যারিসনের সময়ে। তবে তিনি এই পরিবর্তন নিয়ে বেশ সন্দিহান ছিলেন। তড়িদাহত হওয়ার ভয় পেতেন। এতটাই আতঙ্কিত থাকতেন যে, তিনি নিজে কোনও দিন সুইচ স্পর্শ করেননি!
১৪২০
আমেরিকার কয়েক জন সেরা রন্ধনশিল্পীর দায়িত্বে পরিচালিত হয় হোয়াইট হাউসের রান্নাঘর। একসঙ্গে ১ হাজারের বেশি অতিথিকে পরিবেশন করার জন্য সব সময় প্রস্তুত এই পাকশাল। দৈনন্দিন রান্না তৈরি হয় অবশ্য বসবাসকারী প্রেসিডেন্টের পছন্দ অনুযায়ীই।
১৫২০
বাইরে থেকে যতই সম্ভ্রম জাগিয়ে তুলুক না কেন, হোয়াইট হাউসের বাসিন্দাদের কাছে এই বাড়ি অনেক সময়েই দমবন্ধকর বলে মনে হয়েছে। প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা বলেছিলেন, তাঁকে কোনও দিন এক মুহূর্তের জন্য ঘরের জানালা খুলতে দেওয়া হয়নি। বাসিন্দাদের প্রতি মুহূর্তে নজরদারিতে রাখা হয়। এক বারের জন্যেও কেউ একা এই ভবনের বাইরে যেতে পারেন না।
১৬২০
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান এই বাড়িকে বলতেন ‘সাদা কারাগার’। প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি জুলি নিক্সনের কাছে আবার এই বাসভবনে প্রাইভেসির অভাব আছে বলে মনে হত। সব সময় নিরাপত্তারক্ষী এবং সংবাদ মাধ্যমের উপস্থিতিতে ব্যক্তি স্বাধীনতা বিঘ্নিত হত বলে তাঁর ধারণা।
১৭২০
বছরভরই চলতে থাকে হোয়াইট হাউসের মেরামতি। সেই পর্বে অন্যতম হল এই ভবনের সাদা রং বজায় রাখা। সতর্ক নজর থাকে, যাতে কোনও ভাবেই এই ভবনের নামকরণ তার অর্থ হারিয়ে না ফেলে। ভবনের ৫৫ হাজার বর্গ ফুট অংশ সাদা রং করতে প্রতি বার প্রয়োজন হয় ৫৭০ গ্যালন রঙের। প্রতি বছর সাড়ে ৭ লক্ষ ডলার থেকে ১৬ লক্ষ ডলার খরচ হয় হোয়াইট হাউসের রক্ষণাবেক্ষণে।
১৮২০
বাকি সব হাই প্রোফাইল ভবনের মতো হোয়াইট হাউসেও গোপন প্রবেশপথ আছে। হোয়াইট হাউসের বেসমেন্ট থেকে সেই গোপনপথ শুরু হয়ে অন্য প্রান্ত গিয়ে খুলেছে ওয়াশিংটন ডিসি-র এইচ স্ট্রিটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই গোপন সুড়ঙ্গ তৈরি হয়। পাশাপাশি তৈরি হয় হোয়াইট হাউসের নীচে বম্ব শেল্টার।
১৯২০
হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা মানেই যে তাঁদের সব ব্যয়ভার দেশের, তা নয়। প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর পরিবারকে নিজেদের খাওয়ার খরচ মেটাতে হয়। পাশাপাশি, ড্রাই ক্লিনিং, কেশসজ্জা, রূপচর্চা এবং কোনও পার্টি আয়োজিত হলে তার খাবার আয়োজনের ব্যয়ভার— সব খরচ বহন করতে হয় সংশ্লিষ্ট প্রেসিডেন্টকেই।
২০২০
শৌর্য এবং গরিমার প্রতীক হোয়াইট হাউস তৈরি হয়েছিল অ্যাফ্রো এশিয়ান ক্রীতদাসদের দিয়ে। সেই ইতিহাস যে তাঁকে পীড়িত করত, বার বার সে কথা স্মৃতিচারণায় বলেছেন মিশেল ওবামা। ( ছবি: আর্কাইভ এবং সোশ্যাল মিডিয়া )