শত্রুবাহিনী যে কোনও সময়ে শহরের দখল নিতে পারে। ছবি: টুইটার থেকে।
গত কাল সীমান্ত পেরিয়ে ইউক্রেনে ঢুকে পড়েছিল রুশ সেনা। আজ ভ্লাদিমির পুতিনের ফৌজ রাজধানী কিভের দোরগোড়ায় পৌঁছতেই আতঙ্ক বেড়েছে রাজধানীর বাসিন্দাদের মধ্যে। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরেও একই চিত্র দেখা গিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
আজ সকালেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দফতর জানায় কিভের উপকণ্ঠে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গিয়েছে। ভোরের আকাশে কুণ্ডলী পাকানো ধোঁয়ার ছবি ও ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। আতঙ্কে বাড়ি ছাড়ার হিড়িক পড়ে যায়। গত কালের মতো আজও প্রাণ বাঁচাতে পাতালে প্রবেশ করেছেন অনেকে। তার জেরে ভূগর্ভস্থ মেট্রো স্টেশন আজও ছিল ভিড়ে ঠাসা। সঙ্গে ছিল পোশাক, গুরুত্বপূর্ণ নথি, স্লিপিং ব্যাগ, খাবার, ওষুধ এবং পোষ্য। এর পাশাপাশি বাঙ্কার ও বাড়ির বেসমেন্টেও থাকতে শুরু করেছেন বহু মানুষ। সেখানে ক্রসওয়ার্ড পাজ়ল হাতেও দেখা গিয়েছে অনেককে। বহু ভারতীয় পড়ুয়ারও ঠাঁই মিলেছে বাঙ্কারে। রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, রুশ অভিযানের জেরে ভিটেছাড়া লক্ষাধিক মানুষ। আজও প্রাণ বাঁচাতে রাজধানী ছেড়ে বেরোতে মরিয়া ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা অংশ। কিভ থেকে অন্যত্র যাওয়ার ট্রেনও ছিল ভর্তি।
কিভে যাঁরা রয়ে গিয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশে প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জ়েলেনস্কি জানিয়েছেন, শত্রুবাহিনী যে কোনও সময়ে শহরের দখল নিতে পারে। তাই কার্ফু জারির নির্দেশ দেন। গত কাল তিনি শহরবাসীকে বাড়িতে থাকার আবেদন জানালেও আজ বলেছেন, ‘বম্ব শেল্টার’-এ আশ্রয় নিতে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ইউক্রেন শাখার ডিরেক্টর ওকসানা পোকালচুক এখন রয়েছেন বম্ব শেল্টারে। তিনি বলেন, ‘‘আমি ভীত। এখানে সকলেই আতঙ্কিত। ভেবেছিলাম, দেশের পূর্বাংশেই সীমিত থাকবে লড়াই। সমস্ত প্রদেশই যে এ ভাবে রুশ সেনার হামলার মুখে পড়বে ভাবতেই পারিনি।’’
ইতিমধ্যেই ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সি পুরুষদের দেশ ছাড়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এই বয়ঃসীমার মধ্যে যাঁরা সক্ষম, তাঁদের দেশের কাজে ব্যবহার করা হবে। আজ কিভের মেয়র ভিটালি ক্লিটস্কো জানিয়েছেন, শহরের উপকণ্ঠে রুশ বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিধ্বস্ত একটি বহুতল। যে কোনও মুহূর্তে সেটি ধসে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
রাষ্ট্রপুঞ্জ জানাচ্ছে, জ্বালানি, ওষুধ, নগদ অর্থ ক্রমশ কমে আসছে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে। জিনিসপত্রের সরবরাহ না থাকায় এমনটা চললে কয়েক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি ভয়ানক আকার নেবে।
তবে এই যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেও ডেটিং অ্যাপে বহু রুশ সেনার থেকে প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন দাসা সাইনেলনিকোভা নামে ইউক্রেনের এক তরুণী। রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে মহিলাদের আপত্তিকর বার্তা পাঠানোর অভিযোগও উঠেছে সেখানে।
যুদ্ধে যাওয়ার আগে ইউক্রেনের এক সেনা ও তাঁর বান্ধবীর আবেগঘন মুহূর্তের ভিডিয়োও নজরে এসেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, গোলাপ হাতে ওই সেনা তাঁর বান্ধবীকে আলিঙ্গন করছেন। বান্ধবীর চোখে জল। অন্য দিকে, অশান্ত পরিস্থিতিতে মেয়েকে নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দেশের স্বার্থে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এক বাবা। মেয়েকে বিদায় জানানোর সময়ে ওই ব্যক্তির কান্নার ভিডিয়োও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রক্তাক্ত মুখে চুহুয়িভ শহরের এক মহিলার আর্তিও নেটনাগরিকদের চর্চায় উঠে এসেছে। ওলেনা কুরিলো নামে ইতিহাসের ওই শিক্ষিকার কথায়, ‘‘ইতিহাসে যুদ্ধের অনেক ঘটনা পড়েছি। স্বচক্ষে যে এমনটা দেখতে হবে কল্পনাতেও ছিল না। ভাগ্যবান যে প্রাণে বেঁচে গিয়েছি।’’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy