যুদ্ধবিধ্বস্ত মারিয়ুপোল। রাশিয়ার গুলি-বোমার হাত থেকে রেহাই পায়নি গির্জাও। তার মধ্যেই অর্থোডক্স ইস্টারের প্রার্থনায় যোগ দিলেন বাসিন্দারা। রয়টার্স
রুশ বোমায় ঘরবাড়ি-আস্তানা বলতে কিছুই প্রায় অক্ষত নেই। আচমকা হামলা থেকে বাঁচতে মাটিতে গর্ত খুঁড়ে, তার আড়ালে রান্না-খাওয়া-শোওয়া। আগ্নেয়াস্ত্র হাতের মুঠোয় ধরে এ ভাবেই দিন কাটছে ইউক্রেনের বেশির ভাগ এলাকাবাসীর। আর এ ভাবেই বছরের সবচেয়ে বড় উৎসব অর্থোডক্স ইস্টার পালন করলেন তাঁরা। দেশের সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষের বার্তা, ‘‘শক্ত থাকতেই হবে।’’
২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। আজ ঠিক দু’মাস। কার্যত ধ্বংসস্তূপের উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইউক্রেন। এর মধ্যেই সমস্ত নিয়ম মেনে ইস্টার পালন করা হল। ক্যাথিড্রাল থেকে ভিডিয়ো বার্তায় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘জয় আসবেই।’’ রাশিয়াতেও ইস্টার পালন হচ্ছে। দু’দেশের ভাষা, বেশ, খাদ্য— সবই প্রায় এক। উৎসব তাদেরও। যদিও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দিনটিতেও একই রকম বিধ্বংসী মস্কো। মারিয়ুপোলের আজ়ভস্টল কারখানায় ফের গোলাবর্ষণ শুরু হয়েছে। হামলা চলছে অন্যত্রও। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিকাইলো পোডোলিয়াক বলেন, ‘‘রাশিয়া যা-ই বলুক, ওরা আজ়ভস্টল ইস্পাত কারখানাটিকে সম্পূর্ণ ভাবে ঘিরে রেখে টানা গোলাগুলি চালিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার বোমার হাত থেকে বাঁচতে কারখানার নীচে বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছিলেন সেনাবাহিনী ও সাধারণ মানুষ। তাঁরা এখনও আটকে রয়েছেন। রুশ বাহিনী তাঁদের উপরে হামলা চালিয়েই যাচ্ছে। কে যেন নির্দেশ দিয়েছিল, হামলা না চালাতে...!’’ গত পরশু রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা করেন, মারিয়ুপোল ‘স্বাধীন’ ও তাঁর বাহিনীর দখলে চলে এসেছে। আজ়ভস্টল কারখানা থেকে বেরনোর সব পথ বন্ধ করে দিয়ে, হামলা না চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন পুতিন। পোডোলিয়াক বলেন, ‘‘রুশ ফেডারেশনের অন্তত তাদের বেঁচে থাকা মান-সম্মানের কথা ভাবা উচিত।’’ ইস্টারের কথা মাথায় রেখে রাশিয়াকে সন্ধি করার আবেদনও জানিয়েছেন তিনি। সাধারণ মানুষকে উদ্ধারে তাঁরা সমঝোতা করতেও রাজি বলে জানিয়েছেন পোডোলিয়াক। রাশিয়ার পক্ষ থেকে অবশ্য এর কোনও সদুত্তর মেলেনি। আজও রুশ বাহিনীর বাধায় মারিয়ুপোল থেকে সাধারণ মানুষকে উদ্ধার করা যায়নি। লাগাতার গোলাবর্ষণে মারিয়ুপোল-জ়াপুরিজিয়া মানব করিডর বন্ধ হয়ে পড়েছিল।
জ়েলেনস্কি জানিয়েছেন, কিভে আসছেন আমেরিকার বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং প্রতিরক্ষা সচিব লিয়ড অস্টিন। ওয়াশিংটনের তরফে অবশ্য এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। জ়েলেনস্কি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি আর একটু নিরাপদ মনে হলে আশা করি আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও কিভে আসবেন।’’
ইস্টার পালন করতে কিভে এসেছেন আমেরিকান কংগ্রেসের সদস্য, ইন্ডিয়ানার রিপাবলিকান প্রতিনিধি ভিক্টোরিয়া স্পার্ৎজ়। ইউক্রেনীয় বংশোদ্ভূত এই কংগ্রেস সদস্য জানিয়েছেন, যুদ্ধের মধ্যে ইস্টারে ৮৮ বছর বয়সি দিদিমার পাশে দাঁড়াতে তিনি দেশে এসেছেন। ভিক্টোরিয়ার আর এক দিদিমার বয়স ৯৫। দু’জনেই ইউক্রেনে রয়েছেন। দেশ ছেড়ে পালাতে চাননি। ভিক্টোরিয়া বলেন, ‘‘বিশ্বাস করতে পারছি না। স্তালিন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, এ বার রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ। ...সকলে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy