Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

ঢাক পিটিয়ে হাসির পাত্র, রাষ্ট্রপুঞ্জে অপ্রস্তুত ট্রাম্প

‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নিয়ে ফিরিস্তি দিতে গিয়েই একটা সময়ে তিনি বলে বসেন, ‘‘দক্ষতা ও ক্ষমতার বিচারে আমাদের সেনা এখন সর্বকালের সেরা। আর তা ছাড়া দু’বছরেরও কম সময়ে আমার সরকার যা করেছে, আমেরিকার ইতিহাসে কোনও প্রশাসনই তা করতে পারেনি।’’

স্বাস্থ্যসচেতন: ওয়াইন নয়, ডায়েট কোলা দিয়ে ‘চিয়ার্স’ করলেন  মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাষ্ট্রপুঞ্জের বার্ষিক সাধারণ সভায় রাষ্ট্রনেতাদের নৈশভোজে। ছবি: রয়টার্স

স্বাস্থ্যসচেতন: ওয়াইন নয়, ডায়েট কোলা দিয়ে ‘চিয়ার্স’ করলেন  মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাষ্ট্রপুঞ্জের বার্ষিক সাধারণ সভায় রাষ্ট্রনেতাদের নৈশভোজে। ছবি: রয়টার্স

সংবাদ সংস্থা
রাষ্ট্রপুঞ্জ শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:২১
Share: Save:

পুরনো একটা টুইট। ঠিক চার বছরের মাথায় সেটাই ব্যুমেরাং হয়ে গেল ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে। তখনও অবশ্য ট্রাম্প শুধুই ধনকুবের। চুটিয়ে ব্যবসা করছেন, আর একটু একটু করে ভোটে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করছেন। সময়টা ২০১৪-র অগস্ট। বারাক ওবামাকে বিঁধতে গিয়ে ট্রাম্প লিখেছিলেন, ‘‘আমাদের এমন এক প্রেসিডেন্ট দরকার, যিনি বিশ্বের কাছে হাসির পাত্র হবেন না।’’ অথচ কাল যখন রাষ্ট্রপুঞ্জের সভায় হাসির রোল উঠল, পোডিয়ামে তখন দাঁড়িয়ে ট্রাম্পই।

নিজের গুণ গাইতে গিয়েই কাল লোক হাসালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এ দিন আধ ঘণ্টা দেরিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের বার্ষিক সাধারণ সভায় এসে পৌঁছন ট্রাম্প। পরনে কালো স্যুট, লাল টাই। বুকে ব্যাজ— মার্কিন পতাকা। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নিয়ে ফিরিস্তি দিতে গিয়েই একটা সময়ে তিনি বলে বসেন, ‘‘দক্ষতা ও ক্ষমতার বিচারে আমাদের সেনা এখন সর্বকালের সেরা। আর তা ছাড়া দু’বছরেরও কম সময়ে আমার সরকার যা করেছে, আমেরিকার ইতিহাসে কোনও প্রশাসনই তা করতে পারেনি।’’ টেলি-প্রম্পটার দেখে বলছিলেন ট্রাম্প। পুরো বাক্যটাও তখনও শেষ হয়নি, হঠাৎ শোনা গেল হাসির রোল। ব্যাপার কী! ক্যামেরা রোল করতেই নজরে এল, মুখ টিপেও হাসছেন অনেকে। এমনটা ওবামার ক্ষেত্রে কখনও ঘটেছে বলে মনে করতে পারছেন না মার্কিন কূটনীতিকদের একাংশ। তাঁরা বলছেন, ‘‘ট্রাম্পই ফার্স্ট। গত বার এই সভায় হুঙ্কার দিয়ে তিনি চমকে দিয়েছিলেন বিশ্ব নেতাদের। এ বার নিজেই হাসির খোরাক হলেন।’’

পোডিয়ামে স্পষ্টতই অপ্রস্তুত দেখায় ট্রাম্পকে। খানিক পরে বলেন, ‘‘এমন প্রতিক্রিয়া আশা করিনি, তবে ঠিক আছে।’’ পরে সাংবাদিকদেরও জানান, ব্যাপারটাকে তিনি সহজ ভাবেই নিয়েছেন। কূটনীতিকদের একাংশ কিন্তু দাবি করছেন, ট্রাম্প এতটাও সরল নন। নানাবিধ কারণে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এমনিতেই আমেরিকার অবস্থান এখন নড়বড়ে। এই হাসির রেশ সেই জল আরও ঘোলা করবে বলেই আশঙ্কা তাঁদের।

আত্মপ্রচারে ট্রাম্প আগেও এ ভাবে বহু বার উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। বেশির ভাগটাই দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ভিড়ে ঠাসা প্রচারসভায়। সেখানে হাততালিই পেয়েছেন। এখানে ঘটল উল্টোটা। বক্তৃতার একটা সময়ে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘জার্মানি এখনই নিজেদের কৌশল না-বদলালে, জ্বালানির ব্যাপারে তাদের রাশিয়া-নির্ভর হতে হবে।’’ এর প্রতিক্রিয়াতেও জার্মান প্রতিনিধিদের মুখ চেপে হাসতে দেখা গিয়েছে।

তবে ট্রাম্প যে ভাবে এ দিন আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের ধারণাকে নস্যাৎ করে মার্কিন সার্বভৌমত্ব রক্ষার পক্ষে সওয়াল করেছেন, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বিস্তর। তাঁর কথায়, ‘‘আমেরিকা চালাবে মার্কিনরাই।’’ সবুজ মার্বেলের পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে ইরানকেও একহাত নেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাঁর দাবি, ইয়েমেন এবং সিরিয়ায় ‘রক্তপাতের কর্মসূচি’ চালাচ্ছে তেহরান। ইরান-বিরোধী জোটে শামিল হওয়ার ডাক দেন বাকি বিশ্বকে। এ নিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁকে অবশ্য সরাসরিই জবাব দিতে শোনা যায়। ইরান চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার মতো ট্রাম্পের নানাবিধ গা-জোয়ারি সিদ্ধান্তে বিশ্বে সংঘাত আরও বাড়বে বলেই মন্তব্য করেন তিনি।

প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে ট্রাম্পের বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েও সুর চড়ান মাকরঁ। আমেরিকার নাম না-করেই তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ‘‘জলবায়ু চুক্তিতে সমর্থন আছে কি না জেনেই কোনও দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করবে ফ্রান্স।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Embarrassment Donald Trump United Nation Meeting
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE