প্রতীকী ছবি।
দেদার নারী পাচার হচ্ছে পাকিস্তান থেকে চিনে। দালালরা চিনা ‘পাত্রে’র কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ ডলার নিয়ে পাকিস্তানি কিশোরী ও মহিলাদের ‘পাত্রস্থ’ করার নামে চিনে পাঠাচ্ছে। ২০১৮ থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত ওই পাচার চক্রের শিকার হয়েছেন ৬২৯ জন পাক মহিলা। তদন্তকারী ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের মাধ্যমে এই ঢালাও নারী পাচারের কথা প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সরকারের কানে পৌঁছছে। কিন্তু চিনের সঙ্গে দহরম মহরমে চিড় ধরার ভয়ে পাক সরকার রয়েছে ‘নিধিরাম সর্দার’ হয়ে।
কোনও তদন্ত শুরু হলে তা ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে। মামলা হলে আদালতকেও প্রভাবিত করা হচ্ছে। ওই সব মামলায় অভিযুক্ত ৩১ জন চিনা নাগরিককে গত অক্টোবরেই বেকসুর খালাস ঘোষণা করেছে ফয়জলাবাদের একটি আদালত। তাদের চিনে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)’-এর একটি তদন্তমূলক প্রতিবেদনে এই তথ্য মিলেছে। সেই রিপোর্ট বলছে, দালালরা এই ভাবে ২০১৮-র গোড়ার দিক থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৬২৯ জন পাক কিশোরী ও মহিলাকে চিনে পাচার করেছে। বিয়ে দেওয়ার নামে।
পাকিস্তানের ‘ফেডারাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ)’-ই ওই তালিকা তৈরি করেছে। সেখানে কাকে কাকে কবে বিক্রি করে চিনে পাঠানো হয়েছে, তাঁরা চিনে গিয়ে কবে বিয়ে করেছেন, এখন কোথায় রয়েছেন, তাঁদের কোন কোন পেশায় নিয়োগ করা হয়েছে, এফআইএ-র কাছে সে সবের খুঁটিনাটি তথ্য রয়েছে। তবে ‘এফআইএ-র এমন কোনও তালিকার কথা জানা নেই’ বলে চিনের বিদেশমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে।
তদন্তকারী অফিসাররা জানিয়েছেন, এক এক জন পাক মহিলা-পিছু চিনা ‘পাত্র’দের কাছ থেকে দালালরা ৪০ লক্ষ থেকে ১ কোটি পাকিস্তানি টাকা কামিয়েছে। আর ‘নির্ঝঞ্ঝাটে’ মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁদের মা-বাবাদের পকেটে দালালরা গুঁজে দিয়েছে বড়জোর ২ লক্ষ পাকিস্তানি টাকার ‘ঘুষ’। তার পর পাচার করা সেই পাক মহিলাদের চিনে নিয়ে গিয়ে নামানো হয়েছে দেহব্যবসায়। পাচারের জন্য টার্গেট করা হচ্ছে পাকিস্তানে অর্থনৈতিক ভাবে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মহিলাদের।
চিন ও পাকিস্তান, দালালরা রয়েছেন দু’দেশেই। নিজেদের মধ্যে যোগসাজশ রেখেই তাঁরা নারী পাচারের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পাক তদন্তকারীদের এক জন এপি-কে জানিয়েছেন, ‘‘তদন্ত বেশি দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। উপরমহল থেকে চাপ আসছে। নানা ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। প্রাণনাশেরও। তদন্তকারী অফিসারদের বদলি করা হচ্ছে দূরদূরান্তে। তদন্তের সময় পুলিশ যাঁদের সঙ্গে কথা বলেছিল, সেই পাক মহিলাদের অনেকেই পরে সংশ্লিষ্ট মামলায় গরহাজির থাকছেন বা আদালতে গিয়ে উল্টো কথা বলছেন। উপরমহলের হুমকি বা অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে তাঁদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।’’
পাকিস্তানে খ্রিস্টানদের মানবাধিকার রক্ষায় লড়াইয়ের মুখ বলে পরিচিত সালিম ইকবাল সংবাদ সংস্থা ‘এপি’-কে বলেছেন, ‘‘পাকিস্তানের ফেডারাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির তদন্তকারী অফিসারদের উপর অসম্ভব চাপ সৃষ্টি করছে ইমরান খান সরকারের উপরমহল। অফিসারদের নানা ভাবে ভয় দেখানো হচ্ছে। বদলি করা হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলির তদন্ত বন্ধ করার জন্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy