Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
america

Schools: ফিরছে পড়ুয়ারা, কিন্তু পড়াবে কে

২০২১-এর সেপ্টেম্বর থেকে আমেরিকান পড়ুয়ারা ফের শিক্ষাপ্রাঙ্গণে ফিরেছে এবং সেটা সম্ভব হয়েছে মূলত ভ্যাকসিনের জন্যই।

পড়ুয়ারা ফের শিক্ষাপ্রাঙ্গণে

পড়ুয়ারা ফের শিক্ষাপ্রাঙ্গণে

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
বস্টন শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:২৭
Share: Save:

আশঙ্কা আর আতঙ্কে ভরা ২০২০-র শিক্ষাবর্ষ আজ অতীত। ২০২১-এর সেপ্টেম্বর থেকে আমেরিকান পড়ুয়ারা ফের শিক্ষাপ্রাঙ্গণে ফিরেছে এবং সেটা সম্ভব হয়েছে মূলত ভ্যাকসিনের জন্যই। সেপ্টেম্বরে শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার পরে স্কুলে ছাত্রছাত্রীরা ফিরে এসেছে পূর্ণ সংখ্যায়। মুখে মাস্ক থাকলেও, তাদের কথাবার্তা, হাসি, খেলাধুলোয় আবার প্রাণ ফিরে এসেছে স্কুলে। কিন্তু অতিমারি তো এখনও যায়নি, তাই তার ছায়াতেই চলছে সব কিছু। স্কুলে নিয়মিত কোভিড পরীক্ষা হয়ে চলেছে, তার সাথে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং (কেউ সংক্রমিত হলে তার সংস্পর্শে কারা এসেছিল, সেই তথ্য জানা), প্রয়োজনে কোয়রান্টিনে পাঠানো, পড়ুয়া, শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের ভ্যাকসিন রেকর্ড আপডেট, এই অত্যাবশ্যক কাজগুলো চালিয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে আমাদের।

এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে একটা বড় সমস্যা— স্কুলে সব ধরনের কর্মীর ঘাটতি। প্রত্যেক দিনের অভিজ্ঞতায় দেখছি, স্কুলের সব শিক্ষাকর্মী নিজেদের কাজ ছাড়াও পরিস্থিতি অনুযায়ী যা প্রয়োজন করছেন, সাধারণ পরিস্থিতির থেকে অনেক বেশিই করছেন। অনুপস্থিত শিক্ষকদের বিকল্প হিসাবে অন্য শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক, গাইডেন্স কাউন্সিলাররা, অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, সবাই-ই নিজেদের দায়িত্ব অতিক্রম করে কাজ করছেন।

আমাদের এলাকার স্কুলগুলির মতো আমেরিকার বহু স্কুলেই এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এই সঙ্কটের শিকড় লুকিয়ে রয়েছে ২০২০-তে। অতিমারির তুঙ্গে বহু প্রবীণ শিক্ষক-শিক্ষিকা অসুস্থতার জন্য বা সংক্রমণের ভয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই অবসর নিয়ে নিয়েছিলেন। কিছু স্কুল আবার অর্থাভাবে কর্মীদের ছাঁটাই করেছিল। স্কুল বন্ধ থাকায় অনেকে অন্য চাকরিতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। সম্প্রতি এখানকার একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে পড়লাম, এই কর্মী সঙ্কটে ভুগছে দেশের প্রায় সমস্ত প্রদেশের ছোট-বড় সব ধরনের স্কুলই।

এই শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছিল প্রচুর শূন্য পদ দিয়ে— আরিজ়োনায় প্রায় দেড় হাজার, ফ্লরিডা এডুকেশন বোর্ডের হিসাবে প্রায় পাঁচ হাজার
শূন্য শিক্ষক পদ তৈরি হয়েছিল।

গত মাসে থ্যাংক্সগিভিংয়ের ছুটির পরে প্রায় কুড়ি শতাংশ শিক্ষাকর্মীর অনুপস্থিতির জন্য মিশিগানের বেশ কয়েকটি স্কুলে দু’দিন বাড়তি ছুটি দিতে হয়েছিল। কলোরাডোয় কয়েকটি স্কুল বন্ধ করে ফের অনলাইন ক্লাস নেওয়া শুরু হয়েছে, স্কুল কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, অনলাইনে অনেক বেশি সংখ্যক পড়ুয়াকে এক সঙ্গে পড়াতে পারবেন শিক্ষক। সিয়্যাটল এবং ওয়াশিংটন প্রদেশেও বন্ধ রাখতে হয়েছে বেশ কিছু স্কুল।

পড়ুয়ারা ক্লাসঘরে ফিরছে, অথচ তাদের পড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা নেই। কী ভাবে এই সমস্যার মোকাবিলা করা যাবে? এই পরিস্থিতিতে মিশিগান বোর্ড অব এডুকেশন তাদের প্রদেশের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের কাজে ফের যোগ দিতে অনুরোধ করছে। অন্য একটি পন্থা নিয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেস স্কুল ডিস্ট্রিক্ট। তারা টিচার্স ট্রেনিং কোর্স পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষক পদে নিযুক্ত করছে। ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার একটি এলিমেন্টারি স্কুলে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রিন্সিপাল (যাঁর ভূমিকা শুধুই প্রশাসনিক হওয়ার কথা) তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিয়মিত ক্লাস নিয়ে পরিস্থিতি সামলাচ্ছেন। মিশিগানে একটি স্কুল ডিস্ট্রিক্টে এগিয়ে এসেছেন অভিভাবকেরাও— ‘বিকল্প শিক্ষকের’ ভূমিকায়।

এই পরিস্থিতিতে লড়ে যাচ্ছেন স্কুলের সাফাইকর্মীরাও। তাঁদেরও অনেকের চাকরি গিয়েছে গত বছরে। কেউ কেউ অন্য চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। যাঁরা রয়ে গিয়েছেন, তাঁরা প্রাণপাত করে স্কুলগুলিকে জীবাণুমুক্ত করে চলেছেন। নির্ধারিত সময়ের থেকে অনেক বেশি কাজ করছেন এখন। এঁদের হাড়ভাঙা খাটুনি ছাড়া শিক্ষার জাহাজটাকে ভাসিয়ে রাখা যেত না। ছুটির পরে বেরোনোর সময়ে অনেক দিনই আমার স্কুলের সাফাইকর্মী রবার্টের সঙ্গে দেখা হয়। বিদায় সম্ভাষণ বিনিময় হওয়ার সময়ে বুঝতে পারি, স্কুল পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করার দায়িত্ব নেওয়া এই মানুষটার দিন শেষ হতে তখনও অনেক দেরি। বুঝতে পারি, এই রবার্টদের ছাড়া অতিমারির এই পৃথিবীতে কোনও স্কুল চালানো সম্ভব হত না।

অন্য বিষয়গুলি:

america Schools Students Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy