শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পাঠানো কূটনৈতিক বার্তার ‘আইনি বৈধতা’ কতটা, খতিয়ে দেখবে নয়াদিল্লি। কোনও অন্তর্বর্তী সরকার অন্য রাষ্ট্রের নির্বাচিত সরকারের কাছে কোনও রাজনৈতিক নেতার প্রত্যর্পণ চাইলে, তার সমস্ত আইনি দিকগুলি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলেই বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের কূটনৈতিক বার্তার (নোট ভার্বাল) উত্তর অবশ্যই দেওয়া হবে ‘যথাসময়ে’। কিন্তু তার জন্য কোনও তাড়াহুড়ো করা হবে না। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, সব দিক খতিয়ে দেখে জবাব দিতে কয়েক মাস লাগতে পারে।
নয়াদিল্লির একাংশের বক্তব্য, বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রীর ঢাকা সফরের পরে পরিবেশের যে উন্নতির সম্ভাবনা আশা করা হয়েছিল, এই ‘নোট ভার্বাল’টি তার সঙ্গে মানানসই নয়। এক কর্তার কথায়, “ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকুক বা না থাকুক, রাজনৈতিক কারণে আশ্রয় নেওয়া কোনও নেতা বা নেত্রীকে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফেরত পাঠাতে কোনও দেশ বাধ্য কি না, তার আইনি দিক দেখা হবে। ভারতের তরফে অন্তত ৫০টি প্রত্যর্পণের আবেদন পড়ে রয়েছে ওয়াশিংটনে। গোটা বিশ্ব ধরলে যার সংখ্যা (প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত ভারতীয় অনুরোধ) একশোর বেশি।’’ পাশাপাশি কূটনৈতিক সূত্রে এ কথাও বলা হচ্ছে, ভারত যদি শেখ হাসিনাকে তাঁর জীবননাশের সম্ভাবনার আশঙ্কা সত্ত্বেও (বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি যেমন, তাতে শেখ মুজিবরের হত্যার ইতিহাসকেও ফিরে দেখা হচ্ছে) ফেরত পাঠিয়ে দেয়, তা হলে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ শক্তি হিসাবে তার কূটনৈতিক অবস্থান অনেকটাই লঘু হয়ে যাবে ভুটান, শ্রীলঙ্কা, নেপালের মতো দেশের কাছে।
নয়াদিল্লি সূত্র মনে করছে, বাংলাদেশের বর্তমান সঙ্কটজনক পরিস্থিতি থেকে নজর ঘোরাতে এবং সে দেশের ভারত-বিরোধিতার পালে বাতাস লাগাতেই এই ‘নোট ভার্বাল’ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে দেশের প্রধান শিল্পক্ষেত্র, বস্ত্র কারখানাগুলি থেকে হাজারে হাজারে ছাঁটাই চলছে। বিদেশে রফতানি কমেছে প্রায় ৪ শতাংশ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ারে টান, বাজারে আগুন দাম। সব মিলিয়ে কোণঠাসা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদের স্বার্থেই আওয়ামী লীগ-বিরোধী জাতীয়তাবাদের তাস খেলছে। অন্তর্বর্তী সরকার গত চার মাসে এমন কিছু দিতে পারেনি যাতে বাংলাদেশের মানুষের স্বস্তি মেলে।
বিদেশ মন্ত্রকের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্তার কথায়, “হাসিনা এখানে যে আশ্রয় চেয়েছেন এবং সেটা যে ভারতের সুপ্রাচীন ‘অতিথি দেবো ভব’ নীতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ— এ কথা স্পষ্ট ভাবেই বলে এসেছিলেন বিদেশসচিব। তার সঙ্গে এটাও বলেছিলেন, বাংলাদেশের স্বার্থের কথা ভেবেই ভারত যা করার করতে চায়। বাংলাদেশে আগুন জ্বললে তার ধোঁয়া সবার আগে ভারতের রাজ্যগুলিতেই আসবে। ফলে দু’দেশের স্বার্থেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শান্তিপূর্ণ ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। সে দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার দিকটিকেও মাথায় রাখতে হবে।” বাংলাদেশের সরকারকে চাপে রাখার উদ্দেশ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় রফতানি বন্ধ করার পথেও যে হাঁটা হবে না, সে কথা বারবার জানিয়েছে সাউথ ব্লক। কারণ, সেই পদক্ষেপ বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থকে ব্যাহত করবে। কালক্রমে তা ভারত-বিরোধিতায় উস্কানি দেবে।
সূত্রের বক্তব্য, ভারতও চায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দ্রুত নির্বাচন সম্পন্ন করুক অন্তর্বর্তী সরকার। বিএনপি-র একাংশ যোগাযোগ রাখছেন ভারতীয়নেতৃত্বের সঙ্গে।
বিএনপি-ও ইউনূস সরকারের উপর চাপ দিচ্ছে ভোটের জন্য। আপাতত নজর রাখা হচ্ছে, আগামী ২০ জানুয়ারির দিকে। অর্থাৎ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্প বসার পর বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের গতিবিধিতে কিছু পরিবর্তন আসে কি না, তার দিকে। বারবার ভারতের উপর নানা ভাবে চাপ তৈরি করা এবং উগ্র ভারত-বিরোধী আবেগ জিইয়ে রাখার ব্যাপারে পাকিস্তানকে সামনে রেখে চিনের কোনও ভূমিকা রয়েছে কি না, সেটাও খতিয়েদেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy