পাকিস্তান সীমান্তে আফগান শরণার্থীরা। ছবি: রয়টার্স।
চরম সময়সীমা শেষ হওয়ার পরেই খাইবার-পাখতুনখোয়া এবং বালুচিস্তানে আশ্রয় নেওয়া আফগান শরণার্থীদের জোর করে ফেরত পাঠাতে শুরু করেছে পাকিস্তান সরকার। আফিগানিস্তানের তালিবান সরকার বুধবার ইসলামাবাদের এই পদক্ষেপে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তালিবান সরকারের অনুরোধ, জোর করে সীমান্ত পেরোতে বাধ্য না করে আফগান শরণার্থীদের কিছুটা বাড়তি সময় দেওয়া হোক। তালিবান সরকারের বিদেশ দফতরের তরফে বুধবার এই বার্তা পাঠানো হয়েছে ইসলামাবাদে।
অক্টোবরের গোড়াতেই পাক সরকার জানিয়েছে নভেম্বর শুরুর আগেই নিজেদের দেশে ফিরতে হবে পাকিস্তানে বসবাসকারী আফগানিস্তানের নাগরিকদের। মঙ্গলবার সেই ‘চরম সময়সীমা’র অন্তিম মূহূর্ত ঘনিয়ে আসতেই পাক-আফগান সীমান্তে শুরু হয়েছে প্রশাসনিক তৎপরতা। সীমান্তে পাক সেনা এবং ফ্রন্টিয়ার কোর বাহিনীর বাড়তি মোতায়েন করা হয়। সেই সঙ্গে আফগান সীমান্তবর্তী এলাকাগুলি থেকে শরণার্থীদের দেশে ফিরে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হতে থাকে।
পাক ফৌজের হাতে হেনস্থার সম্ভাবনায় আতঙ্কিত বহু আফগান শরণার্থী মঙ্গলবার সীমান্ত পেরিয়ে দেশে ফিরতে শুরু করেছেন। পাক-আফগান সীমান্তবর্তী খাইবার-পাখতুনখোয়া এবং বালুচিস্তান প্রদেশের বিভিন্ন চেকপোস্টে দেখা গিয়েছে আফগানিস্তানের মানুষ ও যানবাহনের দীর্ঘ সারি। মঙ্গলবার ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ সীমান্ত পেরিয়েছেন বলে পাক সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি। পাক সরকার বুধবার জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই এক লক্ষ ৩০ হাজার শরণার্থী আফগানিস্তানে ফিরে গিয়েছেন।
আশির দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত সেনার অনুপ্রবেশ এবং মুজাহিদ বাহিনীর সঙ্গে তাদের লড়াই শুরুর পর থেকে পাকিস্তানে মূলত পাশতুন জনগোষ্ঠীর শরণার্থীদের ভিড় শুরু হয়েছিল। দু’দশক আগে আফগানিস্তানে আমেরিকার সেনা অভিযান শুরুর পরেও কয়েক লক্ষ আফগান নাগরিক প্রাণভয়ে পাকিস্তানে চলে এসেছিলেন। মূলত পাক-আফগান সীমান্ত লাগোয়া খাইবার-পাখতুনখোয়া এবং বালুচিস্তান প্রদেশে তাঁদের বসবাস। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সমীক্ষায় তাঁদের সংখ্যা সাড়ে ১৭ লক্ষের আশপাশে।
দীর্ঘ দিন ধরে আফগান শরণার্থীদের জন্য বিপুল অঙ্কের আন্তর্জাতিক অর্থসাহায্য এবং ত্রাণ পেয়েছে ইসলামাবাদ। কিন্তু ২০২১ সালের অগস্টে কাবুলে তালিবানের ক্ষমতা দখলের পরে সীমান্ত চিহ্নিতকরণ নিয়ে দু’দেশের বিরোধ শুরু হয়। সেই সঙ্গে পাক সেনার সঙ্গে লড়াইয়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালিবান (টিটিপি)-কে কাবুলের মদতের অভিযোগ ঘিরেও দু’তরফের টানাপড়েন শুরু হয়। অক্টোবরের গোড়ায় পাক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি একটি সরকারি নির্দেশিকা প্রকাশ করে বলেন, ‘‘পাকিস্তানের মাটিতে অবৈধ ভাবে বসবাসকারীদের কোনও জায়গা হবে না। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সকলকে পাকিস্তানের মাটি ছাড়তে হবে। তা না হলে প্রয়োজনে আমরা বলপ্রয়োগের পথে হাঁটব।’’
পাক সংবাদমাধ্যমের একাংশ জানাচ্ছে, মূলত দু’টি কারণে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামাবাদ। প্রথমত, দেশের বেহাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বাড়তি ব্যয়বহনে অক্ষমতা। দ্বিতীয়ত, নিরাপত্তা সংক্রান্ত সঙ্কট। পাশতুন বিদ্রোহী গোষ্ঠী টিটিপির সঙ্গে আফগান নাগরিকদের একাংশের ‘যোগাযোগ’। ইসলামাবাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর গত বছরের নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে পাকিস্তান সরকার এবং সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে তারা। টিপিপিকে আফগান তালিবানদের একাংশ সরাসরি মদত দিচ্ছে বলেও অভিযোগ। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি আত্মঘাতী মানববোমা হামলায় আফগান শরণার্থীদের জড়িত থাকার প্রমাণও মিলেছে।
পাক খাইবার-পাখতুনখোয়া এবং বালুচিস্তান প্রদেশের পাশতুন গরিষ্ঠ এলাকার একাংশকে দীর্ঘ দিন ধরেই নিজেদের বলে দাবি করে আফগানিস্তান। তালিবান জমানাতেও সেই দাবি প্রত্যাহার করা হয়নি। গত বছরের অগস্টে কাবুলে তালিবানের ক্ষমতা দখলের পরে পাকিস্তান ২,৭০০ কিলোমিটার সীমান্তে কাঁটাতার বসাতে উদ্যোগী হয়েছিল। কিন্তু তালিবান শাসকদের প্রবল বাধায় সেই কাজ শুরু করা যায়নি। পাক সেনার সাম্প্রতিক বিরোধী অভিযানের সময় সীমান্তে বেশ কয়েক বার বাধাও দিয়েছে আফগানিস্তানের তালিবান ফৌজ। ফলে সীমান্ত সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy