ফাইল চিত্র।
সরকার গঠন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। কিন্তু তালিবানের আশ্বাস কি আদৌ ভরসা করার মতো? বিশ্বাস করতে চাইছেন না আফগানদের অনেকেই। কথার আর কাজের যে বিস্তর ফারাক, তার ছবি ইতিমধ্যেই আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উঠে আসছে। সরকার গঠন হলে কী আইন বলবৎ হবে, আরও কী কী নিষেধাজ্ঞা জারি হবে সেই আতঙ্কই কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে আফগানদের।
সূত্রের খবর, সংবিধান বদলের চিন্তাভাবনা শুরু করেছে তালিবান। নতুন তালিবানি সরকারের কাছে ২০০৪-এর সেই সংবিধান ‘বিদেশি’দের তৈরি। অতএব তা বদলের প্রয়োজন বলে মনে করছেন তালিবানের শীর্ষ নেতারা। পরিবর্তে ১৯৬৪ সালের সংবিধানকে ফের কায়েম করার একটা প্রচেষ্টা চলছে বলে ওই সূত্রের দাবি।
আফগান সংবিধানের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদে সমানাধিকারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ১৯৯৬ সালে তালিবান যখন ক্ষমতায় আসে, তা কার্যক্ষেত্রে মানেনি তারা। পরিবর্তে শরিয়তি আইন কায়েম করে মেয়েদের স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেয়। কোনও পুরুষ ছাড়া মহিলাদের বাড়ির বাইরে বেরোতে নিষেধ করা হয়। মহিলাদের মুখ সর্বদা ঢেকে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। ২০২১-এ দ্বিতীয় বার তালিবান ক্ষমতায় ফিরতেই ফের একই নিষেধাজ্ঞা নেমে এসেছে মহিলাদের উপর। হাই হিল জুতো পরতে পারবেন না, পায়ের আওয়াজ করা যাবে না, অপরিচিত কোনও পুরুষের সঙ্গে কথা বলা যাবে না... ছবি তোলা, সিনেমা এবং কোনও সংবাদমাধ্যম বা ম্যাগাজিনে মহিলাদের ছবি রাখাতেও জারি হয় নিষেধাজ্ঞা।
২৬ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে একমাত্র আদালতই শাস্তি দিতে পারবে। কোনও ব্যক্তিকে অত্যাচার করা যাবে না। কিন্তু বাস্তবে ছবিটা সম্পূর্ণ আলাদা। তালিবান ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাস্তায় দেহ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। জোর করে মেয়েদের অপহরণ করে জঙ্গিদের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া কোনও ভাবেই তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালাতে পারবে না প্রশাসন। তা ছাড়া আদালতের নির্দেশ থাকলে তবে তল্লাশি চালানো যাবে। কিন্তু তালিবান ক্ষমতায় আসার পর ছবিটা সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। এক সাংবাদিকের দাবি, ঘরে ঘরে ঢুকে মহিলাদের তল্লাশি করা হচ্ছে।
২৯ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আদালতের অনুমতি ছাড়া কারও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা যাবে না। কিন্তু শরিয়তি আইনের দোহাই দিয়ে মহিলাদের সম্পত্তির অধিকার তালিবান কেড়ে নিয়েছে বলে বেশ কিছু রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। ৩৪ নম্বর অনুচ্ছেদে শিক্ষাক্ষেত্রে সব আফগানের অধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তালিবান আসার পর স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে, ছেলে মেয়ে এক সঙ্গে একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে পারবে না। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে শরিয়তি আইন অনুসরণ করতে হবে।
আফগান সংবিধানে যে অধিকারের কথা বলা হয়েছে, তালিবান আসায় তা কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগ হচ্ছে না বলে বিভিন্ন সূত্র মারফৎ দাবি করা হয়েছে। সংবিধান বদলের যে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে তালিবান, নতুন সংবিধান কী হবে তা নিয়ে আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে আফগানিস্তান জুড়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy