Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
taliban

Taliban: স্বমূর্তিতে তালিবান

কাবুলে আটকে পড়া ভারতীয়দের ফেরানোর বিষয়ে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

‘মানবিক মুখ’ দেখানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তালিবান।

‘মানবিক মুখ’ দেখানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তালিবান। ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২১ ০৬:০৩
Share: Save:

দু’দশক পরে কাবুলের মসনদে ফিরে এ দফায় কিছুটা ‘মানবিক মুখ’ দেখানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তালিবান। কখনও সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়ার কথা বলেছে, তো কখনও বলেছে কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের বাধা না দেওয়ার কথা। কিন্তু তখ্‌ত দখলের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই যেন খোলস ছেড়ে বেরোতে শুরু করেছেন তালিব যোদ্ধারা। তখড় প্রদেশের এক মহিলাকে বোরখা না পরার জন্য খুন, বল্‌খ প্রদেশের প্রাক্তন মহিলা গভর্নর সালিমা মাজ়ারির ‘বেপাত্তা হয়ে যাওয়া’ থেকে শুরু করে জালালাবাদের রাস্তায় প্রতিবাদী মানুষের উপরে গুলি এবং হত্যা— আফগানদের আশঙ্কা, ফের সেই তাণ্ডবের পথেই হাঁটছে তালিবান।

কাবুলে আটকে পড়া ভারতীয়দের ফেরানোর বিষয়ে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। নিজেদের আটকে পড়া নাগরিকদের নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে ভারত-সহ সব দেশেরই। কারণ, আফগান মুলুকের রাজধানীতে হামিদ কারজ়াই বিমানবন্দর বন্দুক ও গ্রেনেড লঞ্চার হাতে ঘিরে রেখেছে তালিব যোদ্ধারা। প্রাণভয়ে দেশ ছাড়তে মরিয়া আফগানদের উপরে চালিয়েছে গুলি। কারও আবার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে রডের আঘাতে। হিঁচড়ে টেনে নিয়ে গিয়েছে মহিলাদের। পরিস্থিতি বুঝে ওই বিমানবন্দর ঘিরে রেখে নিজেদের বাকি লোকেদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে ৫,০০০ সেনা পাঠাচ্ছে আমেরিকা।

বামিয়ানে আফগান হাজ়ারা নেতা আব্দুল আলি মাজ়ারির মূর্তি বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছে তালিবান। সেই বামিয়ান, গত জমানায় যেখানে বুদ্ধমূর্তি ধ্বংস করেছিল জঙ্গিরা। নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল দেশের একাধিক ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। আফগান মানবাধিকার কর্মী সালিম জাভেদ টুইট করেন, ‘‘গত বার মাজ়ারিকে হত্যা করেছিল ওরা। এ বার ওর মূর্তি ধ্বংস করল।’’ সংখ্যালঘু হাজ়ারা সম্প্রদায় বার বার তালিবানি হামলার শিকার হয়েছে। চেঙ্গিস খানের উত্তরসূরি বলে পরিচিত হাজ়ারা সম্প্রদায়ের অন্তত ৪০ লক্ষ মানুষের বাস আফগানিস্তানে। এ দিনের ঘটনায় তাঁরা আতঙ্কিত। এই সম্প্রদায়েরই সেলিমা মাজ়ারি (প্রাক্তন মহিলা গভর্নর) এখন তালিবানের হেফাজতে বন্দি।

উঁকি দিচ্ছে গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনাও। কারণ, এ দিন জালালাবাদের রাস্তায় প্রাণ হাতে করে তালিবান-বিরোধী বিক্ষোভ-মিছিলে নেমেছেন কয়েকশো মানুষ। তালিবানের পতাকা নামিয়ে জাতীয় পতাকা তুলেছেন তাঁরা। তা ক্যামেরাবন্দি করেছে আফগান সংবাদমাধ্যম। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ওই মিছিল লক্ষ্য করে গুলি চালায় তালিবান। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা ‘পাঝওক আফগান নিউজ়’ জানিয়েছে, অনেকে জখম হয়েছেন। দু’জনের মৃত্যুর কথা জানা গিয়েছে। কিন্তু ওই সংখ্যা বাড়তে পারে।

উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানের পঞ্জশিরেও আজ ‘নর্দার্ন অ্যালায়েন্স’-এর বাধার মুখে পড়েছে তালিবান। তালিবান-বিরোধী এই দলের প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ শাহ মাসুদ এবং আব্দুল শাহ দস্তুম। মাসুদের ‘শিষ্য’ বলে পরিচিত প্রাক্তন আফগান ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লা সালে। তিনি গত কালই জানিয়েছেন, তালিবানি শাসন মানবেন না। শোনা যাচ্ছে, পঞ্জশিরে নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের ঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছেন সালে। সেখান থেকে দেশের তালিবান-বিরোধী শক্তিগুলিকে এক জোট করার চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।

এরই মধ্যে সরকার গঠনের তোড়জোড় শুরু করেছে তালিবান। আজ তালিবান কমান্ডার ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হক্কানি নেটওয়ার্কের নেতা আনাস হক্কানি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজ়াইয়ের সঙ্গে দেখা করেন। ছিলেন সদ্য প্রাক্তন সরকারের শান্তিদূত আবদুল্লা আবদুল্লাও। আন্তর্জাতিক আঙিনায় নিজেদের ভাবমূর্তি সংশোধনের জন্য কাবুলে তবু কিছুটা ‘নরম’ মুখ দেখাচ্ছে তালিবান। আফগানরা বলছেন, আসল অত্যাচার শুরু হয়েছে গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে। চুরির অভিযোগে এক ব্যক্তিকে ট্রাকের সঙ্গে বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় খাস কাবুলের রাস্তায়। মুখে লেপে দেওয়া হয় আলকাতরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে আরও একটি পোস্ট। দিন কয়েক আগে এক মহিলা বোরখা পরতে না-চাওয়ায় মা-বাবার সামনে গুলি করে মারা হয় তাঁকে। তখ়র প্রদেশের টালোকান শহরের ঘটনা। ছবিটি শেয়ার করেছেন পোল্যান্ডের আফগান রাষ্ট্রদূত তাহির কাদরি।

বহু জায়গায় বাড়ি-বাড়ি গিয়ে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে টেনে বার করা হচ্ছে তালিবান-বিরোধী নেতাদের। এমনই এক নেতাকে নাকি তালিবরা শাসিয়ে গিয়েছে, কাল তাঁকে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে। সাংবাদিকদের বাড়িতে রাতের অন্ধকারে হানা দিচ্ছে হিংস্র কিছু মুখ। পড়ুয়া-ছাত্রনেতাদেরও শাসাচ্ছে তারা। কাবুলের প্রথম মহিলা মেয়র জ়ারিফা গাফারি বলেছেন, ‘‘আমার বাড়িতেও ওরা আসবে। আমি অপেক্ষায় রয়েছি!’’ ২১ বছর বয়সি এক শিক্ষিকা জানিয়েছেন, আশপাশের বাড়িতে এসে কড়া নাড়ছে তালিবান। বলেন, ‘‘নিজের বাড়িতে লুকিয়ে বসে আছি।’’ শোনা গিয়েছে, একটি বাড়িতে ঢুকে চার বছরের সন্তানের সামনে তার মাকে হত্যা করেছে জঙ্গিরা। যাওয়ার সময়ে বাড়িটিতে গ্রেনেড ফেলে দিয়ে যায় তারা। জঙ্গিদের থেকে তার মা ও বোনকে আড়াল করতে গিয়েছিল এক কিশোর। তাকে মারতে-মারতে তুলে নিয়ে যায় জঙ্গিরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিয়োয় দেখা যায়, বাড়ি থেকে লোকজনকে টেনে বার করে দেওয়ালের সামনে দাঁড় করিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রের নিশানা অনুশীলন করছে তালিবান জঙ্গিরা।

রকেট লঞ্চার থেকে একে-৪৭, সেনা-কপ্টার— আফগান সেনাবাহিনীকে আমেরিকার দিয়ে যাওয়া যাবতীয় আগ্নেয়াস্ত্র এখন তালিবানের কব্জায়। এ হেন শক্তির মুখে কোথাও-কোথাও স্রেফ খালি হাতে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদী কিছু মুখ। রাস্তায় এক টুকরো কাগজ হাতে দাঁড়িয়ে তারা। লেখা, ‘ফিরিয়ে দাও অধিকার’। শিয়রে মৃত্যু। আন্তর্জাতিক মহলের আশঙ্কা, ধীরে ধীরে স্বমূর্তি ধরছে তালিবান।

অন্য বিষয়গুলি:

taliban Afghan Taliban Afghanistan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy