কেরলের অন্যতম আকর্ষণ হল ‘ব্যাকওয়াটার’। ছবি: সংগৃহীত।
এমনিতে বছরভর বেড়ানো যায়। তবে শীতের ব্যাপারটা আলাদা। উত্তুরে হাওয়া বইলে কড়া রোদও মিঠে লাগে। আর সে কারণেই বছরভর অপেক্ষা থাকে ঠান্ডার। তার কারণ, এমন অনেক পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে, যেগুলি এমন মরসুমে বেড়ানোর জন্যই আদর্শ। গরম, বর্ষা রোদের চোখরাঙানি থাকলেও, শীত এলে আবহাওয়া কিছুটা আরামদায়ক হয় কেরল, গুজরাত, ওড়িশার মতো রাজ্যগুলিতে। তাই এমন সময় ঘুরে নিতে পারেন কচ্ছের রণ, কেরলের ব্যাকওয়াটার আর হাতের কাছের গোপালপুর।
কচ্ছের রণ: গুজরাতের উত্তর-পাকিস্তান সীমান্ত ঘেঁষা কচ্ছের রূপ এ দেশের আর কোনও প্রান্তের সঙ্গে মেলে না। বরং কচ্ছ জেলায় আদিগন্ত নোনা বালির ‘সাদা রণ’-এর সৌন্দর্য উপভোগে প্রতি বছর এখানে ছুটে আসেন অনেকেই। গুজরাতি ভাষায় রণ শব্দের অর্থ ‘মরুভূমি’। একে মরসুমি জলাভূমিও বলা চলে। শীতের সময় লবণাক্ত জল বাষ্পীভূত হয়ে বিস্তীর্ণ সাদা ভূভাগ তৈরি করে। অন্য সময় পড়ে থাকে জলাভূমি। রোদের তাপে সেই জল বাষ্পীভূত হয়ে গেলে পড়ে থাকা নুন শক্ত ভূমির সৃষ্টি করে। তখন সেখানে উট চলে, হেঁটে বেড়ানো যায়। কচ্ছের রণের সৌন্দর্য অবশ্য বিশেষ ভাবে উপভোগ্য হয়ে ওঠে জ্যোৎস্না রাতে। চন্দ্রালোকিত রণের রূপে বিভোর হতেই এখানে ছুটে আসেন পর্যটকেরা।
গুজরাত সরকারের পর্যটন দফতরের উদ্যোগে প্রতি বছর শীতকালে শুরু হয় রণ উৎসব। ১৫ মার্চ পর্যন্ত তা চলবে। সার সার তাঁবুতে থাকে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা। উৎবের কেনাকাটা হয় তাবুঁতে। স্থানীয় খাবার থেকে পোশাক, হাতে তৈরি জিনিসের পসরা নিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা। তারই মধ্যে মঞ্চ বেঁধে গুজরাতি নাচ-গানের আয়োজন। কচ্ছের রণের রূপ উপভোগের পাশাপাশি অন্যতম আকর্ষণ এই উৎসব।
থাকার জায়গা: রণ উৎসবে গিয়ে বিলাসবহুল তাবুঁতেও কয়েকটি রাত কাটাতে পারেন। না হলে নিকটবর্তী কোনও শহরে হোটেলে থাকতে হবে। গুজরাতের আর এক শহর ভূজ। সেখানে প্রচুর হোটেল রয়েছে। অনেক পর্যটকই ভূজ থেকে গাড়িতে এসে কচ্ছের রণে ঘুরে যান। এ ছাড়া থাকতে পারেন ধোলাবীরায়। এটিও একটি দর্শনীয় স্থান।
যাতায়াত: বিমানে আমদাবাদ পৌঁছে সেখান থেকে সড়কপথে কচ্ছের রণ দেখতে যেতে পারেন। আবার ভূজ হয়েও যাওয়া যায়। ভূজে রেলস্টেশন এবং বিমানবন্দর দুই-ই রয়েছে। কলকাতা থেকে আমদাবাদে পৌঁছে ট্রেন ধরেও ভূজে আসা যায়। সেখান থেকে সড়কপথে কচ্ছের রণের দূরত্ব ১২৬ কিলোমিটার। মোটামুটি ঘণ্টা তিন-চারেকের মধ্যেই পৌঁছনো যায়।
কেরলের ব্যাকওয়াটার: গরমকালে কেরলের বিভিন্ন প্রান্তে তাপমাত্রার পারদ ছুঁয়ে ফেলে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর্দ্রতা বেশি থাকায় সামান্য হাঁটাহাটিতে বেশ ঘামও হয়। শীতকালে ঠান্ডা সে ভাবে না পড়লেও, গরমের দাপট কিছুটা কম থাকে এখানে। সমুদ্র উপকূল, স্থানে স্থানে ঢেউখেলানো পাহাড়, চা-বাগান, ঝর্না, মন্দির সবই আছে এখানে। তবে এ রাজ্যের অন্যতম আকর্ষণ হল ‘ব্যাকওয়াটার’। কেরলের আলেপ্পি শহর থেকেই ঘুরে নেওয়া যায় ব্যাকওয়াটারে। আলেপ্পির বর্তমান নাম অবশ্য আলাপ্পুঝা। ভেম্বানাদ হ্রদ, পুন্নামাডা হ্রদ ও আরব সাগরে ঘেরা এই শহরের বুক চিরে অসংখ্য খাঁড়িপথের জাল তৈরি হয়েছে। সেখানেই লঞ্চে ভ্রমণের ব্যবস্থা। ব্যাকওয়াটারে ভাসতে ভাসতে চোখের সামনে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে কেরলের গ্রামজীবন। গ্রাম্য ঘরবাড়ির উঁকিঝুঁকি, খাঁড়ির দু’পাশে ধানখেত, কাজু আর গোলমরিচের বাগান, শিকারি মাছরাঙা, পানকৌড়ির আনাগোনা, জলের আয়নায় নারকেল গাছের ছবি— সব মিলিয়ে এক স্বপ্নময় যাত্রা। ইটালির ভেনিসের সঙ্গে এই জলপথকে তুলনা করে অনেকে একে ‘প্রাচ্যের ভেনিস’-ও বলেন।
শ্রীনগরের ডাললেকে যেমন হাউসবোট আছে, ব্যাকওয়াটারেও তেমন ভেসে বেড়ায় বিলাসবহুল হাউসবোট। তবে আকৃতি এবং শৈলীতে দুই হাউসবোটে অনেকটাই তফাত। ডাল লেকে হাউসবোটে চেপে হ্রদ ভ্রমণ না করা গেলেও, কেরলের হাউসবোটে দিব্যি ঘুরে বেড়ানো যায় খাঁড়িপথে। ভিতরেই থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে।
শহরে ঢোকার আগেই কুট্টানাদ। এখানে সমুদ্রতল থেকে প্রায় ২ মিটার নীচে কৃষিজমিতে প্রচুর ধান চাষ হয়। তাই কুট্টানাদকে ‘রাইস বোল অফ কেরল’ বলা হয়। আলেপ্পি থেকে জলপথে আসতে পারেন কোল্লাম। জলজীবনের নানান ছবি দেখতে দেখতে এগিয়ে চলা ব্যাকওয়াটারের ছায়াশীতল পথ ধরে এগিয়ে চলার আনন্দই আলাদা।
থাকার জায়গা: হাউসবোটে থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া ছোট, বড়, মাঝারি নানা মাপের হোটেল রয়েছে। আলাপ্পুঝায় কেরল ট্যুরিজ়ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের হোটেল ট্যামারিন্ড রয়েছে।
যাতায়াত: কলকাতা থেকে আলাপ্পুঝা যাওয়া ট্রেন রয়েছে। এ ছাড়া শিয়ালদহ এবং হাওড়া থেকে কোচি, কোট্টায়াম-সহ বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছনো যায় ট্রেনে। বিমানে কোচিন গিয়ে সেখান থেকে সড়কপথে আলাপ্পুঝায় পৌঁছনো যায়।
ওড়িশার গোপালপুর: শুধু দূরে নয়, কলকাতা থেকে তুলনামূলক কাছেও অনেক জায়গা ঘুরে নেওয়া যায়। বাঙালির পছন্দের তালিকায় পুরী থাকে বরাবরই। তবে যদি সমুদ্রতীরে ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে ঘুরতে চান তা হলে বেছে নিতে পারেন গোপালপুর। বিরামহীন ঢেউ, শান্তনীল সাগরপার, সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মুগ্ধতা নিয়ে অপেক্ষা করছে সৈকত শহরটি। স্নানবিলাসীদের স্বর্গরাজ্য গোপালপুর। গোপালপুর থেকে ঘুরে নেওয়া যায় নানা স্থান। দু’দিন গোপালপুর থেকে চলে যেতে পারেন রম্ভা, বরকুল, দারিংবাড়িও। রম্ভা, বরকুলে গেলে পাবেন চিল্কার অপার সৌন্দর্য। আর দারিংবাড়ি অপেক্ষা করছে পাহাড়, ঝর্না, কফি বাগিচা, এমু ফার্ম নিয়ে।
থাকার জায়গা: গোপালপুরে সমুদ্রের ধারে বিভিন্ন মানের অজস্র হোটেল আছে। সমুদ্রের পারে না হলেও অদূরেই রয়েছে ওড়িশা পর্যটন দফতরের ‘পান্থ নিবাস’।
যাতায়াত: হাওড়া থেকে ট্রেনে পৌঁছতে হবে ব্রহ্মপুর। সেখান থেকে গাড়িতে আধ ঘণ্টা গেলেই গোপালপুর। কলকাতা থেকে সরাসরি গাড়ি নিয়ে যেতে পারেন। সড়কপথে দূরত্ব ৬১০ কিলোমিটার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy