প্রতীকী ছবি
আফগানিস্তান ছাড়ার ৪৮ ঘণ্টা আগে রক্তের দাগ লাগল আমেরিকার হাতে। গত কাল কাবুলে আমেরিকান সেনাবাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একই পরিবারের ছ’টি শিশু-সহ দশ জন নিহত হন। স্থানীয়দের দাবি, নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ২০। তার মধ্যে একটি দু’বছরের শিশুও রয়েছে।
তার পরেও আজ সকালে কাবুল বিমানবন্দর লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসলামিক স্টেট খোরাসান (আইএস-কে)। ক্ষেপণাস্ত্র-বিরোধী প্রযুক্তির সাহায্যে সেই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ধ্বংস করা হয়েছে। হতাহতের খবর নেই। রাতে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবে আফগান মাটি যাতে সন্ত্রাসে ব্যবহৃত না হয় এবং নারী-শিশু-সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত না হয়, তার উপরে জোর দেওয়া হয়েেছ। রাশিয়া ও চিন অবশ্য এই প্রস্তাব গ্রহণে বিরত থাকে।
গত কাল কাবুলের একটি ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় দূর-নিয়ন্ত্রিত বিমান হানা চালিয়েছিল আমেরিকা। সেনাবাহিনীর সূত্রে তখন জানানো হয়েছিল, হামলার লক্ষ্য আইএস-কে-এর একটি সম্ভাব্য গাড়িবোমা। আজ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, আমেরিকান ক্ষেপণাস্ত্রটি গাড়ির উপরে এসে পড়ার পরেই ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। আগুন লেগে যায় পাশের বাড়িতেও। বিস্ফোরণের অভিঘাতে বাড়ির একটা অংশও ভেঙে পড়ে। ভিতর থেকে আর্ত চিৎকার শুনে বাড়ির ভিতরে ঢুকে স্থানীয়েরা দেখেন, ছড়িয়ে-আগুন লেগে যায় পাশের বাড়িতেও। বিস্ফোরণের অভিঘাতে বাড়ির একটা অংশও ভেঙে পড়ে। ভিতর থেকে আর্ত চিৎকার শুনে বাড়ির ভিতরে ঢুকে স্থানীয়েরা দেখেন, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে দেহাংশ। আগুন নেভানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেন তাঁরা। কিন্তু তার আগেই অনেকের মৃত্যু হয়েছে। ধ্বংসাবশেষ থেকে ছ’টি শিশুর মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে আরও দেহ চাপা পড়ে রয়েছে।
আজ আমেরিকার একটি প্রথম সারির টিভি চ্যানেলে ড্রোন-হানায় সাধারণ মানুষ নিহত হওয়ার এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে আমেরিকান সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম)-এর মুখপাত্র ক্যাপ্টেন বিল আরবান জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত করা হবে। মুখপাত্রের কথায়, ‘‘আমাদের আশঙ্কাই ঠিক প্রমাণিত হল। বিস্ফোরণের ভয়াবহতা থেকে স্পষ্ট, গাড়িটি শক্তিশালী বিস্ফোরকে ঠাসা ছিল। ফের বড় মাপের আত্মঘাতী হামলার ছক কষছিল জঙ্গিরা। তবে যদি সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়ে থাকে, তা হলে তা খুবই মর্মান্তিক।’’ এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেছেন, ‘‘আমরা যে ক’জনের দেহ উদ্ধার করেছি, তারা কেউই আইএস জঙ্গি নয়। অতি সাধারণ একটি পরিবার বাস করত ওই বাড়িতে।’’ বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি থেকে এক জন জঙ্গির দেহ মিলেছে। গতকালের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নিন্দা করে তালিবান মুখপাত্র জ়বিউল্লা মুজাহিদ বলেন, ‘‘আমেরিকার কাছে যদি কোনও জঙ্গি হামলার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকে, তা হলে তারা আমাদের আগে জানাক। জনবহুল এলাকায় এমন হামলায় সাধারণ মানুষের মৃত্যু কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’’
২৬ অগস্ট কাবুল বিমানবন্দরে নিহত ১৩ আমেরিকান সেনার স্মরণ-অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রবিবার ডেলাওয়্যার বায়ুসেনা ঘাঁটিতে গিয়েছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে অনুষ্ঠানের সময় বারবার নাকি ঘড়ি দেখছিলেন তিনি। সেই ভিডিয়ো দেখে সমালোচনার ঝড় ওঠে। প্রাক্তন সেনাদের এক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘‘জো, একটু তো শ্রদ্ধাশীল হন!’’ কালকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আমেরিকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনও। অস্টিন বলেন, ‘‘বাকিরা বাঁচবেন বলে চূড়ান্ত আত্মবলিদান দিলেন এই ১৩ জন।’’
আইএস-কে গত বৃহস্পতিবারের ওই হামলার দায় নেওয়ার পরে আজ প্রথম জঙ্গি সংগঠনটির বিষয়ে মুখ খোলেন তালিবান মুখপাত্র জ়বিউল্লা মুজাহিদ। তাঁর কথায়, ‘‘ইসলামের নামে সাধারণ মানুষকে হত্যা করা যায় না। আফগানিস্তানের মানুষ শান্তি খুঁজছেন। সেই লক্ষ্যে আমরাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’’ একই সঙ্গে সে দিনের হামলার জন্য আমেরিকাকে এক হাত নিতে ছাড়েননি তিনি। আগের বিবৃতির সুরেই তিনি বলেন, ‘‘কাবুল আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বিমানবন্দরের পরিস্থিতিটা সম্পূর্ণ আলাদা। দেশ ছাড়ার হিড়িকে বাঁধনছাড়া ভিড় সেখানে। আর বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব তো আমেরিকা নিজের কাছেই রেখেছিল।’’
আগামী কাল আফগানিস্তান ছাড়ার মেয়াদ ফুরোচ্ছে আমেরিকান সেনাবাহিনীর। আজও আমেরিকান নাগরিক ও আফগান শরণার্থী নিয়ে ১৯টি উড়ান ছেড়েছে হামিদ কারজ়াই বিমানবন্দর থেকে। সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, আইএস-কে-র ড্রোন হামলা উড়ানসূচিতে কোনও প্রভাব ফেলেনি। নিরাপদেই দেশ ছাড়তে পেরেছেন যাত্রীরা। তবে এখনও বড় মাপের জঙ্গি হানার আশঙ্কা রয়েছে বলে আজ ফের জানিয়েছে পেন্টাগন।
দীর্ঘ এক দশক পরে আজ আফগানিস্তানে ফিরেছেন ওসামা বিন লাদেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আমিন-উল হক। ৯/১১-র পরে আল কায়দা প্রধান যখন পূর্ব পাকিস্তানের তোরা বোরা পার্বত্য এলাকায় গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন, তখন তাঁর সঙ্গেই থাকতেন আমিন-উল। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, দেশের প্রায় পুরোটা তালিবানের দখলে চলে আসার পরে জন্মস্থান ননগরহারে ফিরিছেন তিনি।
কোথায় তালিবান প্রধান: তালিবান প্রধান মোল্লা হিবাতুল্লা আখুন্দজ়াদার অন্তরালে থাকা নিয়ে জল্পনা মিটছে না। তালিবানের মুখপাত্র জ়বিউল্লা মুজাহিদ সোমবার বলেন, ‘‘কন্দহরে আছেন আখুন্দজ়াদা। গোড়া থেকেই ওখানে রয়েছেন তিনি। খুব তাড়াতাড়িই জনসমক্ষে আসবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy