আহমাদির অনলাইন কনসার্টের দৃশ্য। ছবি: সমাজমাধ্যম।
‘অপরাধ’ ছিল ইউটিউবে একটি ভার্চুয়াল কনসার্টে হিজাব না-পরে গান গাওয়া। আর সেই ‘অপরাধেই’ গ্রেফতার করা হল ইরানি গায়িকা পারাসতু আহমাদিকে। গত কাল সারি সিটি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ২৭ বছর বয়সি গায়িকাকে। কনসার্টে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন চার পুরুষ বাদ্যযন্ত্র শিল্পী। গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁদেরকেও।
সম্প্রতি একটি অনলাইন কনসার্টে যোগ দেন আহমাদি। মাথায় কোনও হিজাব তো নেই-ই, একটি কালো রঙের পশ্চিমি পোশাকে দেখা যায় তাঁকে। পাশে গিটার, পিয়োনা-সহ অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছেন চার পুরুষ শিল্পী। নেট-দুনিয়ায় শোরগোল ফেলে দেয় আহমাদির গানের ভিডিয়ো। এ পর্যন্ত ১৪ লক্ষ বারেরও বেশি দেখা হয়েছে সেই ভিডিয়ো। সেখানে সঙ্গীতচর্চার প্রতি অধিকারের দাবি জানিয়ে আহমাদি নিজের পরিচয়ে বলেন, ‘‘একটি মেয়ে যে নিজের ভালবাসার মানুষগুলোর জন্য গান গাইতে চায়।’’ ইউটিউব ভিডিয়োটির নীচে তিনি লেখেন, ‘এটা এমন একটা অধিকার, যা উপেক্ষা করা যায় না। যে মাটিকে আমি ভীষণ ভালবাসি, এই গান তার জন্য।’ ভিডিয়োটি প্রকাশ্যে আসতেই ইরানের বিচার বিভাগ আহমাদির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। পরের দিনই গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। আহমাদির বিরুদ্ধে কী ধরনের চার্জ গঠন করা হয়েছে, বা তাঁকে কোন জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা প্রকাশ করা হয়নি প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তাঁর ব্যান্ডের দুই বাদ্যযন্ত্র শিল্পী সোহেল ফাগি নাসিরি এবং এহসান বেরাগদরকেও একই দিনে তেহরান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আহমাদির আইনজীবী মিদাল পানাহিপুর বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক, আহমাদির বিরুদ্ধে কী ধরনের চার্জ গঠন করা হয়েছে, কারা তাঁকে গ্রেফতার করেছে, কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, আমরা কিছুই জানি না। তবে আইনি পথে সবটা জানার চেষ্টা করছি আমরা।’’
১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকেই ইরানে কঠিন আইন। এ দেশে পুরুষদের সামনে কোনও মেয়ের একা গান গাওয়া নিষেধ। জনসমক্ষে হিজাব না-পরে আসা দণ্ডনীয় অপরাধ। আহমাদি সব-ই জানতেন। পরিণতি কী হবে, তারও স্পষ্ট আন্দাজ ছিল। দু’বছর আগে এই হিজাব না পরার অপরাধে পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছিল ২২ বছরের তরুণী মাহসা আমিনিকে। তার পর পুলিশি হেফাজতে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। গোটা ইরান জুড়ে সে সময়ে শুরু হয় হিজাব-বিরোধী আন্দোলন। প্রশাসন কড়া হাতে দমন করে তা। বহু মৃত্যু, অসংখ্য মানুষের জেল, প্রকাশ্য রাস্তায় ক্রেন থেকে ঝুলিয়ে ফাঁসি, পুলিশের অত্যাচার— সে সবের সাক্ষ্য হয় গোটা পৃথিবী। ইরানের প্রশাসন এ-ও দাবি করে, এই আন্দোলন আসলে ‘পশ্চিমের ষড়যন্ত্র’। এ অবস্থায় স্বাভাবিক ভাবেই এটা স্পষ্ট, আহমাদি ও তাঁর দলের শিল্পীরা জানতেন, ওই কনসার্টের পরিণতি কী হবে। তা-ও প্রতিবাদের পথই বেছে নিয়েছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy