Advertisement
২২ জানুয়ারি ২০২৫
Hasina speech for London meeting

ওরা চেয়েছিল লাশ ফেলো, সরকার পড়বে, পাল্টা লাশ চাইনি আমি! এ বার লন্ডনে চলল শেখ হাসিনার বক্তৃতা

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি, সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়নের অভিযোগ নিয়ে শেখ হাসিনা আঙুল তুললেন বাংলাদেশের মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে।

শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:৪২
Share: Save:

আমেরিকার পরে রবিবার ব্রিটেনের এক সভায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তৃতা করলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্রিটেনে আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা সেই সভার আয়োজন করেছিলেন। ভার্চুয়াল মাধ্যমে সেই সভাতেই ভাষণ দিলেন হাসিনা। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি, সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়নের অভিযোগ নিয়ে তিনি আঙুল তুললেন বাংলাদেশের মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে। হাসিনা এ-ও দাবি করেছেন, তিনি কাউকে খুন করেননি। যাঁরা এখন খুন করছেন, তাঁদের বিচার এক দিন হবেই বলেই মন্তব‍্য করেন মুজিবুর-কন‍্যা।। এর পরেই প্রশ্ন উঠছে, ‘অজ্ঞাতবাস’ কাটিয়ে তবে কি ধীরে ধীরে আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন হাসিনা?

রবিবার আওয়ামী লীগের সভায় হাসিনা দাবি করেন, বাংলাদেশে এখন ‘অরাজকতা’ চলছে। নাগরিকদের কোনও শান্তি নেই সেখানে। তাঁর কথায়, ‘‘ঘরে শান্তিতে ঘুমোনোর উপায় নেই। চুরি, ডাকাতি হচ্ছে। যে কোনও সময় তদন্ত হতে পারে। এই তদন্তের নির্দেশ কে দিচ্ছেন?’’ তিনি এ-ও জানিয়েছেন, বাংলাদেশের মানুষের এখন ‘ন্যায়বিচার’ চাওয়ার অধিকার নেই। আওয়ামী লীগের গণসংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্র লীগ’ হাসিনার এই বক্তৃতার ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে দিয়েছে। যদিও ভিডিয়োর সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে তৈরি হওয়া জনবিক্ষোভের জেরে গত ৫ অগস্ট দেশত্যাগ করেছিলেন হাসিনা। বর্তমানে তিনি ভারতে রয়েছেন। হাসিনা দেশ ছাড়ার পরে এখন বাংলাদেশ সামলাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রশাসনিক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের। ব্রিটেনের সভায় নতুন এই অন্তর্বর্তী সরকারের দিকেই বার বার আঙুল তুলেছেন হাসিনা। তাঁর কথায়, ‘‘নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। অথচ এখন বন্যা, ঝড় গেল, কিন্তু তার পরে কেউ মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। আজ জনপ্রতিনিধিরা থাকলে মানুষের পাশে দাঁড়াতেন।’’ গত অগস্ট মাস থেকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের উপর হেনস্থা, নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। হাসিনা দাবি করেছেন, সরকারি কর্মীদের এই হেনস্থা বন্ধ করতে হবে। ‘মিথ্যা মামলা’ থেকে রেহাই দিতে হবে। কাজে ফেরাতে হবে।

বাংলাদেশে জনবিক্ষোভের সময় পুলিশ, সরকারি কর্মীদের মারধর, হত্যা, সরকারি সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগ উঠেছে। অন্তর্বর্তী সরকার ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের ক্ষমা করেছে। তা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন হাসিনা। তিনি বলেন, ‘‘১৫ জুলাইয়ের পর থেকে যারা অপরাধ করেছে তাঁদের ক্ষমা করা হয়েছে। তার অর্থ, ‘মাস্টারমাইন্ড’ ইউনূস এটাই প্রমাণ করেছেন যে, এঁরা অপরাধী। যত হত্যাকাণ্ড হয়েছে, আগুন ধরানো হয়েছে, তদন্ত করে তাঁদের বিচার করতে হবে। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। দোষ থেকে মুক্ত করার অধিকার ইউনূস সরকারের নেই।’’

হাসিনা এ-ও দাবি করেছেন, জনবিক্ষোভের সময় তিনি ‘শক্তি প্রয়োগ’ করেননি। যদি তা করতেন, তা হলে বহু মানুষের প্রাণ যেত। তাঁর কথায়, ‘‘আমি শক্তি প্রয়োগ করলে লাশ পড়ত। আমি চাইনি মানুষের প্রাণ যাক। পুলিশ রাবার বুলেট ব্যবহার করেছে।’’ এর পরেই নোবেলজয়ী ইউনূসের দিকে আঙুল তুলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ইউনূস মাস্টারমাইন্ড, খুনি, ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী। আবু সাঈদের হত্যার জন্য এই মাস্টারমাইন্ডরাই দায়ী। তাঁরা চেয়েছিলেন, লাশ ফেল, তা হলে সরকার পড়ে যাবে।’’

এর পরেই হাসিনা আরও এক বার নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা (অন্তর্বর্তী সরকার) বলছে হাসিনার বিচার করবে। কী বিচার করবে? আমি কী অন্যায় করেছি? আমার হাত দিয়ে কোনও খুন হয়নি। আমি মানুষের জীবন নিতে আসিনি।’’ তিনি এ-ও জানিয়েছেন যে, জনপ্রতিনিধি হিসাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের সুযোগও পাননি তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘এক জন জনপ্রতিনিধি অপর এক জনপ্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারে। আমি তো সেই সুযোগ পাইনি।’’

গত মাসে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পরেই তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন মুজিবুর রহমানের কন্যা। কার্যত ট্রাম্পের সুরে সুর মিলিয়েই তিনি আবার প্রশ্ন তুলেছেন যে, কেন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার হরণ করা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর লুট হয়েছে। মন্দির, গির্জা ধ্বংস করা হয়েছে।’’ তবে তাঁর আশা, “এই অন্ধকার শীঘ্রই কেটে যাবে। নতুন সূর্য উদিত হবে।’’

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়েও ইউনূস সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন হাসিনা। তাঁর দাবি, “শেয়ার মার্কেটে লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। কোথায় গিয়েছে? ব্যাঙ্ক বসে যাচ্ছে। কেন অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে?”

অন্য বিষয়গুলি:

Sheikh Hasina Bangladesh Bangladesh Awami League
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy