সারা গিলবার্ট।
বয়স ষাটের কাছাকাছি। কিন্তু আপাত ভাবে ধীর-স্থির প্রকৃতির প্রৌঢ়াকে তাঁর নতুন ‘আবিষ্কারের’ কথা বলতেই ঝলমল করে উঠেছিলেন। জোর দিয়েই বলেছিলেন, ‘সুখবর’ দেবেন।
সারা গিলবার্ট। কোনও হলিউড-তারকা নন, তবু টিভির পর্দায় তাঁর জয়ের হাসিটুকু দেখার অপেক্ষায় মুখিয়ে গোটা বিশ্ব। কারণ ‘বিশল্যকরণীর’ খোঁজে পৃথিবী যখন তোলপাড়, তখন সর্বপ্রথম ‘সুখবর’ দেন এই সারা-ই। দাবি করেছিলেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোভিড-১৯-এর প্রতিষেধক আনছেন।
জেনার ইনস্টিটিউট ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা হচ্ছে করোনার প্রতিষেধক। নাম রাখা হয়েছে ‘এজ়েডডি১২২২’। গবেষণার গোড়ার দিকে নাম ছিল, চ্যাডক্স-১। এই গবেষণার পুরোভাগে রয়েছেন সারা। এর আগেও ইনফ্লুয়েঞ্জা-সহ একাধিক ভাইরাল প্যাথোজেনের প্রতিষেধক তৈরির কাজ করেছেন তিনি। ইবোলার ভ্যাকসিন তৈরিতেও অনুদান রয়েছে তাঁর। স্বাভাবিক ভাবে এ বারেও তাঁর সাফল্যের আশায় ব্রিটেন-সহ গোটা বিশ্ব। গত সপ্তাহে একটি টক-শোয়ে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল সারাকে। করোনার কার্যকরী ভ্যাকসিনের সন্ধান তিনি দিতে পারবেন কি না, সর্বশেষ খবর কী, এ প্রশ্ন করা হতেই দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, ‘‘অবশ্যই আশা রয়েছে। তবে একশো শতাংশ নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না।’’ প্রচারের অন্তরালে থাকতে পছন্দ করা এই বিজ্ঞানী আগেও এক ব্রিটিশ দৈনিকের প্রতিনিধিকে বলেছিন, ‘‘আমরা যা করতে পারি, তা হল ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করতে পারি— আমরা সেই কাজটাই করছি।’’
আরও পড়ুন: নিরাপদ, প্রথম ধাপে ‘পাশ’ অক্সফোর্ড-টিকা
আরও পড়ুন: ভক্তদের কাছে ‘পজ়িটিভ’ বোলসোনারো
এই ব্রিটিশ ভ্যাকসিনোলজিস্টের মেডিসিনের দিকে ঝোঁক স্কুল-জীবন থেকেই। কেটেরিং স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করে ইউনিভার্সিটি অব অ্যাংলিয়া-য় জীববিদ্যায় স্নাতক। তার পর ইউনিভার্সিটি অব হাল-এ ডক্টরেট। পড়াশোনা শেষ করে লেস্টারের একটি সংস্থায় দু’বছর কাজ করেন। তার পর অন্য একটি বায়োটেক সংস্থায় ওষুধ প্রস্তুত সংক্রান্ত কাজে যোগ। ১৯৯৪ সালে চলে আসেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০৪-এ রিডার পদে যোগ দেন। এর পর ২০১০-এ জেনার ইনস্টিটিউটে যুক্ত হওয়া। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তৈরি হওয়া ‘ভ্যাকসিটেক’ নামক একটি সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতাও সারা। তবে নিজেই জানিয়েছেন, ভ্যাকসিনোলজিস্ট হওয়ার কোনও পরিকল্পনাই ছিল না তাঁর। — ‘‘জেনেটিক্স নিয়ে কাজ করতে অক্সফোর্ডে এসেছিলাম। ম্যালেরিয়া হলে মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কী ভাবে কাজ করে, সে সব নিয়ে গবেষণা শুরু করি। এ ভাবেই ধীরে ধীরে ভ্যাকসিনোলজিস্ট হয়ে ওঠা।’’ তবে বিজ্ঞান ছাড়াও যা নিয়ে তাঁর প্রশংসা করতে খামতি রাখেন না সহকর্মীরা, তা হল সারা-র কথা বলার গুণ। তাঁর এক সতীর্থ যেমন বলেছেন, ‘‘মিডিয়াকে সামলাতে ওঁর তুলনা নেই। স্পষ্ট ভাবে ও সততার সঙ্গে কী ভাবে উত্তর দেওয়া যায়, ও তাতে দক্ষ।’’
তবে এমন ঝকঝকে ব্যক্তিত্ব নিয়েও পুরুষপ্রধান সমাজে কম লড়তে হয়নি সারাকে। তিন সন্তানের মা (ট্রিপলেটস) সারার হাতে এক সময় সংসার খরচটুকুও থাকত না। মহিলা বিজ্ঞানী হিসেবে বেতন সামান্যই। মাসের শেষে যা হাতে পেতেন, তাতে বাচ্চাদের জন্য নার্স রাখতে পারেননি। এ দিকে গবেষণার কাজ বন্ধ করলে চলবে না। শেষে চাকরি ছেড়ে শিশুসন্তানদের দেখাশোনার দায়িত্ব নেন সারার স্বামী। ২০১৯ সালে বিজ্ঞানীদের মধ্যে লিঙ্গবৈষম্য নিয়ে একটি সমীক্ষা-রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। তাতে দেখা যায়, পুরুষ বিজ্ঞানীদের থেকে মহিলারা অন্তত ২২ শতাংশ কম পারিশ্রমিক পান। তবু একাংশের মতে এই ব্যবধান অনেকটাই কমছে, ধীরে ধীরে। মার্কিন গণিতজ্ঞ ক্যাথরিন জনসন এক সময়ে অঙ্ক কষে (যন্ত্রের সাহায্যে নয়) অ্যাপোলো-টু অভিযানে সাহায্য করেছিলেন। চাঁদে পা ফেলেছিল মানুষ। কিন্তু সে সময়ে তার যথাযোগ্য সম্মান বা স্বীকৃতি পাননি ক্যাথরিন। ডিএনএ আবিষ্কারে ওয়াটসন ও ক্রিকের নামের আড়ালে ঢাকা পড়ে গিয়েছিলেন রোজ়ালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিন। এত দিনে একটি স্পেস রোবটের নাম রাখা হয়েছে তাঁর নামে। সারা-র হাত ধরে এই বৈষম্যের দাওয়াইও হয়তো মিলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy