বালুচিস্তানের বোলানে রাতভর চলল পাক সেনার উদ্ধার অভিযান। বহু ক্ষণের চেষ্টায় অপহৃত জাফর এক্সপ্রেস থেকে থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অন্তত ১৫৫ জন যাত্রীকে। পাক সেনা সূত্রে তেমনই দাবি করা হয়েছে। তাদের আরও দাবি, এই অভিযানে এখনও পর্যন্ত অন্তত ২৭ জন বালুচ বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন।
পাক রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, অপহৃত জাফর এক্সপ্রেস থেকে উদ্ধার হওয়া ৫৭ যাত্রীকে বুধবার ভোরে বালুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটায় পাঠানো হয়েছে। বাকি ২৩ জনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কোয়েটার কাছে মাচ শহরে। আর আহত ১৭ জন যাত্রীকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিকটবর্তী হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের মধ্যে অন্তত ৬০ জন পুরুষ। রয়েছেন ৩১ জন মহিলা এবং ১৫ জন শিশুও। পাক সেনা সূত্রে আরও জানানো হয়েছে, বাকি পণবন্দিদের উদ্ধারের জন্য এখনও উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে নিরাপত্তাবাহিনী। তবে নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযান শুরুর পর থেকেই জঙ্গিরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। সে জন্যই উদ্ধার অভিযানে বেগ পেতে হচ্ছে সেনাকে।
আরও পড়ুন:
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা নাগাদ কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেসের দখল নেন স্বাধীনতাপন্থী সশস্ত্র বালুচ গোষ্ঠী বিএলএ (বালুচ লিবারেশন আর্মি)-র বিদ্রোহীরা। কাচ্চি বোলান জেলায় পেহরো কুনরি এবং গাদালারের মাঝামাঝি জায়গায় যাত্রিবাহী ট্রেনটি অপহরণ করা হয়। ন’টি কোচবিশিষ্ট ওই ট্রেনটিতে প্রায় ৫০০ জন যাত্রী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে শতাধিক পণবন্দি হন। বিএলএর তরফেও ঘটনার দায় স্বীকার করে শতাধিক যাত্রীকে পণবন্দি করার কথা জানিয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার রাতেই বিদ্রোহীদের অপহৃত ট্রেনের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল পাক নিরাপত্তাবাহিনীর উদ্ধারকারী দল। তাঁদের মধ্যে পাক সেনার ‘স্পেশ্যাল সার্ভিস গ্রুপ’-এর কমান্ডোরা রয়েছেন বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর। খবর পেয়েই বিএলএ হুমকি দেয়, সেনা অভিযান না থামালে পণবন্দিদের খুন করা হবে। উদ্ধারকারী সেনাদের আটকাতে রেললাইনের একাংশ উড়িয়েও দেন বিদ্রোহী বালুচ যোদ্ধারা। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ট্রেনে থাকা অন্তত ৩০ জন সেনা ও আধাসেনা বালুচ বিদ্রোহীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। পিছু হটেনি সেনা। পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে শুরু হয়েছে অভিযান।
- সরকারি ভাবে অভিযানের ইতি টানা হয়েছে বুধবার রাতে। বালোচিস্তানের কাচ্চি বোলানে জাফর এক্সপ্রেস কব্জার ঘটনায় উদ্ধারপ্রাপ্ত এবং হতাহতের সংখ্যা নিয়ে ধন্দ কাটেনি বৃহস্পতিবার দুপুরেও। পাক সেনার মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধরি এবং প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকারের তথ্যমন্ত্রী আত্তাউল্লাহ তরার যে পরিসংখ্যান দিয়েছেন স্বাধীনতাপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) তা সরাসরি অস্বীকার করেছে।
- মঙ্গলবার বালুচিস্তানের কাচ্চি জেলার বোলান এলাকায় একটি সুড়ঙ্গে ঢোকার মুখে যখন জাফর এক্সপ্রেসটিকে অপহরণ করা হয়, তখন ওই ট্রেনে ছিলেন অন্তত ৪৫০ জন। বুধবার পর্যন্ত ১৫০ জন যাত্রীকে বিদ্রোহীদের হাত থেকে উদ্ধার করেছে নিরাপত্তাবাহিনী। তাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন অন্তত ২৭ বিদ্রোহী। এই আক্রমণের দায় স্বীকার করেছে বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। যাত্রীদের পণবন্দি করে তারা পাকিস্তানের জেল থেকে বন্দি বিনিময়ের দাবি জানিয়েছে। বুধবার রাতে পাকিস্তান সেনা জানায়, অভিযান শেষ হয়েছে। বিদ্রোহীরা সকলে নিহত।
-
‘আমাদের উপর হামলার চেষ্টা করলে পরবর্তী নিশানা হবে ইসলামাবাদ’! পাক সেনাকে হুমকি বালোচ বিদ্রোহীদের
-
দিনভর পাক সেনা অভিযান, বালোচ বিদ্রোহীমুক্ত জ়াফর এক্সপ্রেস, তবু ধোঁয়াশা কাটছে না
-
ট্রেন অপহরণে আফগানিস্তানের কোনও যোগ নেই, পাক অভিযোগ উড়িয়ে হুঁশিয়ারি তালিবানের
-
পাক সেনা ক’জন পণবন্দিকে মুক্ত করল? হতাহতের সংখ্যাই বা কী? অভিযান শেষের পরেও ধন্দ বালোচিস্তানে
-
‘বালোচ লিবারেশন আর্মি’ কারা? ট্রেন হাইজ্যাকের নেপথ্যে, বালোচের বিদ্রোহীরা কী চায়?