বাংলাদেশে উল্লাসের ছবি। ছবি: পিটিআই।
পড়ুয়াদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন সফল। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। তাঁর পলায়নের খবর ছড়িয়ে পড়তেই উল্লাসে মেতে ওঠে জনতা। বঙ্গভবন থেকে সংসদ ভবন, দখল নেয় আন্দোলনকারীরা। ছড়াতে থাকে নানা গুজব। যার অধিকাংশই সংখ্যালঘুদের নিয়ে। এ হেন পরিস্থিতিতে সকলকে ‘শান্ত’ থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন সে দেশের একাধিক ধর্মগুরু। সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি এড়াতেই তাঁদের এই আহ্বান। একই সুর ও পার বাংলার রাজনীতিকদের মুখেও।
বাংলাদেশের উদ্ভূত পরিস্থিতির ঘোলা জলে স্বাভাবিক ভাবেই এক শ্রেণি মাছ ধরার চেষ্টা করবে বলে আশঙ্কা থাকছেই। জামাতের পক্ষ থেকে শফিকুর রহমান যেমন সংখ্যালঘুদের কোনও রকম আক্রমণ বা ভয় দেখানো থেকে বিরত থাকার আবেদন জানিয়েছেন। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘ঢাকা পোস্ট’-এর এক প্রতিবেদনে শফিকুরের বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের উপাসনালয়, বাড়িঘর ও সম্পত্তির নিরাপত্তা নিয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। কোনও দুষ্কৃতী যেন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করতে না পারে। সব দলের কর্মীদের তো বটেই, সাধারণ মানুষকেও সজাগ থাকতে হবে।’’
শফিকুরের আহ্বান, ‘‘ঐক্যবদ্ধ ভাবে সকলকে সুন্দর দেশ গড়তে হবে।’’ দলমত নির্বিশেষে ভবিষ্যতে ভাল সমাজ গড়ার ডাকও দিয়েছেন তিনি। একই কথা শোনা গিয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামি ধর্মগুরুদের মুখেও। সে দেশের জনপ্রিয় ইসলামি আলোচক শায়খ আহমদুল্লাহ আজহারী এক ভিডিয়োবার্তায় বলেন, ‘‘বিজয়োৎসবের মধ্যে কোনও সংখ্যালঘু যেন আহত না হন, সকলকে তা নিশ্চিত করতে হবে।’’
শায়খ তাঁর ভিডিয়োবার্তায় বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে দেশে চলে আসা অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে জনতার মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। গণ আন্দোলনের জেরে সরকারের পতন ঘটেছে। তবে অনেক সুযোগসন্ধানী বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন কিছু কাজ করছেন, যা আন্দোলন করে অর্জিত কৃতিত্বকে ম্লান করে দিচ্ছে।’’ উল্লেখ্য, হাসিনা দেশ ছাড়ার পরই তাঁর বাসভবনে ঢুকে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অনেক ভিডিয়োতেই দেখা যাচ্ছে, কী ভাবে ‘গণভবনে’র জিনিসপত্র ‘লুট’ হচ্ছে (এই সব ভিডিয়োর সত্যতা অবশ্য যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। শায়খ এই সব ‘লুটপাট’ থেকে জনতাকে বিরত থাকার আর্জি জানিয়েছেন। আর এক ইসলামি আলোচক মৌলানা মিজানুর রহমান আজহারীও সকলকে সংযত থাকার বার্তা দিয়েছেন।
সমাজমাধ্যমে একাধিক পোস্টে তাঁর আহ্বান, ‘‘কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি রক্ষা করা আমাদের সকলের কর্তব্য। সংখ্যালঘু ভাই-বোনদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।’’ বিনোদন জগতের একাধিক মানুষও ‘সংযত’ থাকার পক্ষে সওয়াল করছেন। বহু তারকাকে বিজয় উৎসবে শামিল হতে দেখা গিয়েছে। অভিনেত্রী তথা মডেল সাবিলা নুর এই ‘জয়ে’ খুশি। তেমনই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনুরোধও করেছেন। সমাজমাধ্যমে তাঁর পোস্ট, ‘‘দেশ ও দেশের মানুষ ও দেশের সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবার।’’
‘প্রথম আলো’তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশবাসীকে সংযত থাকার আর্জি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ছাত্র আন্দোলনের ফলে যে জয় এসেছে তা কোনও ভাবেই যেন অন্য খাতে না বয়। দেশের নেতাদের তো বটেই সাধারণ মানুষকেও তা মাথায় রাখতে হবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘সংখ্যালঘুদের উপর যেন কোনও আক্রমণ না হয়। তাঁদের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।’’
হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পর সোমবার বিকেলে সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ় জ়ামান জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। রাতেই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ শাহবুদ্দিন। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সব রাজনৈতিক দলকে সচেষ্ট হওয়ার বার্তা দিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy