Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

ইউরোপের নীচে হারিয়ে যাওয়া মহাদেশের খোঁজ

বলা হচ্ছে স্পেন থেকে ইরানের মধ্যে পর্বতশিখর থেকে সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত তার বিস্তার। নাম, ‘গ্রেটার এড্রিয়া’।

‘গ্রেটার এড্রিয়া’ মহাদেশের অবশিষ্ট অংশ। তুরস্কের টরাস পর্বতে। সোশ্যাল মিডিয়া

‘গ্রেটার এড্রিয়া’ মহাদেশের অবশিষ্ট অংশ। তুরস্কের টরাস পর্বতে। সোশ্যাল মিডিয়া

সংবাদ সংস্থা
অ্যামস্টারডাম শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:৪৭
Share: Save:

ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের জটিল ভূতত্ত্বের বিবর্তন ফিরে দেখার কাজে ব্যস্ত ছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে তাঁরা হদিস পেয়ে গেলেন পৃথিবীর বুকে লুকোনো আস্ত একটা মহাদেশের!

বলা হচ্ছে স্পেন থেকে ইরানের মধ্যে পর্বতশিখর থেকে সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত তার বিস্তার। নাম, ‘গ্রেটার এড্রিয়া’। আয়তনে গ্রিনল্যান্ডের সমান। অন্তত ২০ কোটি বছর আগে উত্তর আফ্রিকা থেকে ভেঙে তৈরি হয়েছিল এই মহাদেশ। পরে তা মিশে গিয়েছিল দক্ষিণ ইউরোপের নীচে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কে বলতে পারে, এমন একটা ‘গোপন’ মহাদেশে আপনিও কোনও দিন হয়তো নিজের অজান্তে পা ফেলেছিলেন!

নেদারল্যান্ডসের উট্রেখ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ্লোবাল টেকটনিক্স ও প্যালিয়োজিয়োগ্রাফি’-র অধ্যাপক এবং গবেষক ডো ভ্যান হিন্সবের্গেন বলছেন, ‘‘প্রতি বছর না বুঝেই বিরাট সংখ্যক পর্যটক ছুটি কাটিয়েছেন হারিয়ে যাওয়া গ্রেটার এড্রিয়া মহাদেশে।’’ এ মাসে ‘গন্ডোয়ানা রিসার্চ’ জার্নালে হিন্সবের্গেনদের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। পর্বত শিখরের বিবর্তন নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে মহাদেশগুলির বিবর্তনও বোঝা যায়, দাবি এই গবেষণায়।

হিন্সবের্গেনের কথায়, ‘‘আমরা যে সব পর্বতমালা নিয়ে কাজ করেছি, সেগুলির বেশির ভাগই গ্রেটার এড্রিয়া থেকে উদ্ভূত। সে মহাদেশটি উত্তর আফ্রিকা থেকে ২০ কোটি বছরেরও বেশি সময় আগে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।’’ এই গবেষক জানাচ্ছেন, ওই মহাদেশটির যেটুকু অংশ রয়ে গিয়েছে, সেটি টুরিন থেকে শুরু করে এড্রিয়াটিক সাগর হয়ে মিশে গিয়েছে ইটালির তলদেশে। এই জায়গাটিকে ভূতত্ত্ববিদেরা বলেন এড্রিয়া। তাই এই গবেষণায় যুক্ত বিজ্ঞানীরা অতীতে অনাবিষ্কৃত মহাদেশটির নাম দিয়েছেন, গ্রেটার এড্রিয়া।

ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ভূতত্ত্ববিদেরা ‘প্লেট টেকটনিক’ বোঝেন অন্য দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। এমনিতে ‘প্লেট টেকটনিক’ বলতে বোঝায় এমন এক তত্ত্ব, যার মাধ্যমে জানা যায়, কী ভাবে মহাসাগর এবং মহাদেশ গড়ে উঠেছিল। আর এই তত্ত্ব অনুযায়ী, পৃথিবীর অন্যান্য অংশে (যেখানে বড়সড় চ্যুতিরেখা রয়েছে) প্লেটগুলি একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা না খেয়ে পাশাপাশি চলতে থাকলে তারা অবিকৃতই থাকে। কিন্তু তুরস্ক এবং ভূমধ্যসাগরের ক্ষেত্রে বিষয়টা একেবারেই আলাদা। হিন্সবের্গেন বলছেন, ‘‘এটা এক রকমের ভূতাত্ত্বিক গোলমাল বলতে পারেন। এর সঙ্গে তুলনা করলে হিমালয় পর্বতমালা কিন্তু অনেক সহজ বিষয়। ওখানে আপনি দু’হাজার কিলোমিটারেরও বেশি অংশ জুড়ে অনেক চ্যুতিরেখা দেখতে পাবেন।’’

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, গ্রেটার এড্রিয়ার অনেকটা অংশই জলের তলায়। অগভীর সমুদ্র, প্রবাল প্রাচীর আর স্তরীভূত পাথুরে অংশে ঢাকা। গ্রেটার এড্রিয়া যখন দক্ষিণ ইউরোপের তলদেশে মিশে গিয়েছিল, তখন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া স্তরীভূত পাথর থেকে পর্বতমালা তৈরি হয়েছিল। যেগুলি খুঁজে পাওয়া যায়, আল্পস, অ্যাপেনাইনস পাবর্ত্য এলাকা, বল্কান উপদ্বীপ, গ্রিস এবং তুরস্কে।

ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে পর্বতমালার বিবর্তন ফিরে দেখার কাজটি হয়েছে সম্মিলিত ভাবে। ৩০টিরও বেশি দেশ এতে যুক্ত। গবেষকেরা জানিয়েছেন, প্রত্যেকটির ভূতাত্ত্বিক সমীক্ষা, মানচিত্র, কী ভাবে সব কিছু গড়ে উঠেছিল, তার পূর্বলব্ধ ধারণা— সমস্ত কিছুই এ ক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছে। প্লেট টেকটনিক পুনর্নির্মাণ সফটওয়্যার ব্যবহার করে গবেষকেরা একের পর এক স্তর আক্ষরিক অর্থে ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে দেখেছেন এবং এ ভাবে ফিরে গিয়েছেন সেই সময়টায়, যখন মহাদেশগুলি এখনকার মানচিত্রের তুলনায় অনেকটাই আলাদা রকমের দেখতে ছিল।

তবে এই প্রথম কোনও নয়া মহাদেশ খুঁজে পাওয়া গেল, এমন নয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, গন্ডোয়ানাল্যান্ড থেকে একটি অংশ এ ভাবে ভেঙে গিয়েছিল ২০ কোটি বছর আগে। লাভায় ঢাকা সেই অংশ এখন মরিশাসের তলায়, ভারত মহাসাগরের একটা দ্বীপ। ওই বছরই আর একটি বিজ্ঞানীদল দক্ষিণ প্রশান্তমহাসাগর ঢুঁড়ে বার করেছিলেন হারিয়ে যাওয়া মহাদেশ জ়িল্যান্ডিয়া।

অন্য বিষয়গুলি:

Scientist Continent Europe Greater Adria
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy