স্মৃতি: সবিতার ছবি হাতে তাঁর মা-বাবা।
ফোনের ও পারে কাঁপছিল বৃদ্ধের গলা। গর্ভপাতের পক্ষেই যে রায় দিয়েছেন আয়ারল্যান্ডবাসী, বুথফেরত সমীক্ষায় তা গোটা বিশ্ব জানার পর তখন ঘণ্টাখানেকও কাটেনি। ৭১ বছরের আন্দানাপ্পা ইয়ালাগি বলেন, ‘‘কিচ্ছু করতে পারিনি সেই সময়। অথর্বের মতো শুধু দেখেছি আমার সুস্থ মেয়েটাকে একটু-একটু করে মৃত্যু গিলে ফেলল।’’
কর্নাটকে বেলগাঁওয়ের বাড়িতে বসেই আয়ারল্যান্ডে গণভোটের ফলের অপেক্ষায় প্রহর গুনছিলেন বৃদ্ধ দম্পতি— আন্দানাপ্পা ও আখমি। গর্ভপাত না করানোর আইনে অটল থেকে যাঁদের কন্যা সবিতা হলপ্পনবার মৃত্যু ডেকে এনেছিলেন আয়ারল্যান্ডের চিকিৎসকেরা। গণভোটে গর্ভপাতের পক্ষে প্রচারের ‘মুখ’ সবিতাই। ফোনে বাবা বলেন, ‘‘হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে মিনতি করেছিল চিকিৎসকদের। নিজে ডাক্তার ছিল তো। বুঝেছিল গর্ভপাত না করলে মৃত্যু অনিবার্য। কেউ কথা শুনল না। একবিংশ শতাব্দিতেও কী অদ্ভুত নিয়ম! ছ’বছরের লড়াইয়ের পর শেষ পর্যন্ত ন্যায় প্রতিষ্ঠা হল। গণতন্ত্র জিতল।’’
২০১২ সালে মাত্র ৩১ বছর বয়সে গলওয়ের হাসপাতালে সেপটিসিমিয়ায় মারা যান পেশায় দন্তচিকিৎসক সবিতা। ১৭ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। সবিতার রক্তে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে বোঝার পরেও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা সে দেশের আইনের দোহাই দিয়ে গর্ভপাত করতে রাজি হননি।
এর বিরুদ্ধেই লড়াই শুরু করেছিলেন আন্দানাপ্পারা। জানালেন, সবিতার মৃত্যুর পর আয়ারল্যান্ডের কয়েক জন সাংবাদিক কর্নাটকে তাঁদের বাড়ি এসেছিলেন। তাঁদের মাধ্যমেই গর্ভপাতের স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে আয়ারল্যান্ডে বার্তা পৌঁছে দেন আন্দানাপ্পারা। তাঁর কথায়, ‘‘ফেসবুক, টুইটারে প্রচার চালিয়েছি। খবরের কাগজগুলিতে মতামত দিয়েছি। যখন গণভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত হল, তখন আয়ারল্যান্ডের মানুষের উদ্দেশে আমরা হতভাগ্য দুই বুড়োবুড়ি বলেছিলাম, নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগের আগে এক বার সবিতার কথা মনে আনবেন। এই আইন যেন আপনাদের প্রিয়জনের জীবন মাঝপথে কেটে ছোট করে না-দেয়। আজকের রায়ের পর মনে হচ্ছে,
এতদিনে যেন সবিতার জন্য কিছু করতে পারলাম। অন্তত ওর মতো আর কোনও মেয়েকে মরতে হবে না।’’
৬৯ বছরের আখমিদেবী জানালেন, দুই ছেলে সন্তোষ ও সঞ্জীবের পরে একেবারে ছোট সবিতা। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরেই বাবা-মা-কে তাঁর কাছে চলে আসার জন্য আবদার করেছিলেন। অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার আন্দানাপ্পা এবং আখমি ৯০ দিনের ভিসা নিয়ে গিয়েছিলেন আয়ারল্যান্ড। ২০১২ সালের ২১ অক্টোবর ভারতে ফিরে আসেন দু’জনে। ঠিক দু’দিন বাদে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন সবিতা। ২৮ অক্টোবর সব শেষ। ওই ক’টা দিন ফোনে খবর পেতেন, কী ভাবে তিলে-তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে মেয়ে।
এক সপ্তাহ বাদে দেশে ফিরেছিল সবিতার দেহ। অসহনীয় অপেক্ষার ওই সাতটা দিন লড়াইয়ের পণ করেছিলেন বৃদ্ধ দম্পতি।
এ দিন জিতলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy