সালিমা মাজারি। আফগানিস্তানের মহিলা গভর্নর। ছবি: রয়টার্স।
তালিবানের তাণ্ডবে যখন আফগানিস্তানের একের পর এক রাজনৈতিক নেতা পালিয়ে পিঠ বাঁচানোর চেষ্টা করছেন, চোয়াল শক্ত করে তালিবানের রক্ষচক্ষুকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তিনি হাতে তুলে নিয়েছিলেন বন্দুক। আফগানিস্তানের সেই মহিলা গভর্নর সালিমা মাজারি এখন তালিবানের হাতে বন্দি।
আশরফ গনি সরকারের শাসনকালে আফগানিস্তানের যে তিন জন মহিলা গর্ভনর ছিলেন তাঁদের মধ্যে এক জন সালিমা। একের পর এক প্রদেশ যখন বিনা বাধায় তালিবানের দখলে চলে যাচ্ছিল, বল্খ প্রদেশের রক্ষায় সালিমা হাতে তুলে নিয়েছিলেন বন্দুক।
দেশের অন্যান্য প্রদেশ বিনা যুদ্ধে দখল করলেও বল্খ প্রদেশে সালিমা বাহিনীর কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় তালিবান জঙ্গিদের। দু’পক্ষের তুমুল সংঘর্ষ হয় ঠিকই, কিন্তু তালিবানের বিপুল লোকবলের কাছে এঁটে উঠতে পারেননি শেষ পর্যন্ত। বল্খ প্রদেশের পতন হয়। একই সঙ্গে সালিমার চাহার কিন্ট জেলাও দখল করে নেয় তালিবান।
গোটা দেশের মধ্যে চাহার কিন্টই ছিল একমাত্র মহিলা পরিচালিত অঞ্চল যা কোনও দিন কোনও জঙ্গিগোষ্ঠীর কাছে বশ্যতা স্বীকার করেনি। নিজের শেষ শক্তি দিয়ে বল্খ প্রদেশ এবং চাহার কিন্টকে আগলে রাখার চেষ্টা করেছিলেন সালিমা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। এই মহিলা গভর্নরকে বন্দি বানানো হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র মারফৎ দাবি করা হচ্ছে।
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছেছিলেন সালিমা। মহিলাদের মধ্যে তাঁর প্রভাব ছিল অনেকটাই। দেশে যখন তালিবানি তাণ্ডব শুরু হয়, দেশের মানুষ এবং মহিলাদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। তালিবানের খাঁড়া যে তাঁর উপরও নেমে আসতে পারে যে কোনও মুহূর্তে সেই আশঙ্কাও প্রকাশ করেছিলেন সালিমা। শেষমেশ সেই আশঙ্কাই সত্যি হল!
তিন বছর আগে গভর্নরের দায়িত্ব নিয়ে ৩০ হাজার মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব একাই কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন সালিমা। তালিবানের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো তাঁর কাছে নতুন কিছু নয়। সালিমা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “নিজের দফতরের কাজও যেমন সামলেছি, পাশাপাশি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হাতে বন্দুকও তুলে নিয়েছি।”
এক জন আমলা হিসেবে শুধু প্রশাসনিক কাজ সামলানো নয়, পাশাপাশি সেনা অভিযানের বিষয়ও তাঁকে দেখাশোনা করতে হত। সালিমা বলেছিলেন, “আমরা যদি সন্ত্রাসবাদী ভাবনাচিন্তা, সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে এখনই পদক্ষেপ না করি, তা হলে তাদের হারানোর সুযোগ পাব না। আর সন্ত্রাসবাদীরা জিতলে গোটা দেশে তাদের ভাবনাচিন্তাকে ছড়িয়ে দেবে। দেশে একটা অস্থিরতা তৈরি হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy