Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Russia Ukraine War

Russia Ukraine War: ‘খাবার নেই, ফুরিয়েছে জল, ইউক্রেন সীমান্তে খুঁজে পেলাম না ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীদের’

এটাই হল আসল জায়গা, যেখানে গোলমাল বাধছে। পারাপারের জন্য এখানে দু’টো লাইন হচ্ছে। একটা ইউক্রেনের অধিবাসীদের জন্য। আর একটি বিদেশিদের জন্য। ওঁরা প্রথমে নিজেদের দেশের বাচ্চা-সহ মহিলা, তার পরে মেয়েদের ছাড়ছেন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

প্রদীপ্ত মৌলিক
ওয়ারশ শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২২ ০৭:৩৬
Share: Save:

রাতের তাপমাত্রা মাইনাস সাত ডিগ্রি। বরফ পড়ছে গায়ে। মাথার উপরে ছাদ নেই। খাবার ফুরিয়েছে। জল শেষ। এ ভাবে ৩৬ থেকে ৯৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে বাচ্চাগুলোকে। এই কষ্ট বোঝা আমার-আপনার ক্ষমতার বাইরে।

এই মুহূর্তে পোল্যান্ডের মেডিকা সীমান্তের অবস্থা এমনই। গত পাঁচ দিনে মাত্র দেড়শোর মতো ভারতীয় পোল্যান্ডে ঢুকতে পেরেছেন। মাঝেমধ্যেই উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। ঠান্ডায় অভুক্ত থেকে মেজাজ হারাচ্ছেন পড়ুয়ারা। এই গোটা ব্যবস্থাটারই সাক্ষী আমরা কতিপয় ভারতীয়।

গত ২৪ তারিখ ফোনটা এসেছিল। এক জন জানতে চেয়েছিলেন, ইউক্রেনের লিভিভ শহর থেকে তাঁর পরিচিত পাঁচ ভারতীয় সীমান্ত পেরিয়ে পোল্যান্ডে আসতে চাইছেন। সেটা কি সম্ভব? গত ৩৬ বছর ধরে পড়াশোনা ও কর্মসূত্রে পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ শহরে আছি। সেই সূত্রে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গেও পরিচিতি তৈরি হয়েছে। দূতাবাসের এক আধিকারিককে জিজ্ঞেস করলাম, জানিয়েছিলেন সম্ভব। এর কিছু পরেই আরও এক জন ফোন করে জানান, এ পারে আসার অপেক্ষায় বর্ডারের কাছে রয়েছেন সাত ভারতীয় পড়ুয়া। ঠিক করলাম, গ্রুপ তৈরি করে ভারতীয় পড়ুয়াদের পারাপার হতে যদি কিছু সাহায্য করা যায়।
পাঁচ দিনেই হোয়্যাটসঅ্যাপে ‘মিশন পোল্যান্ড’ গ্রুপে ২৫৬ জন এবং টেলিগ্রামে ‘এক্সোডাস ইউক্রেন’ গ্রুপে ৬০০ জন সদস্য হয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আমলা, ভারতীয় দূতাবাসের একাধিক আধিকারিক রয়েছেন গ্রুপে। আমাদের উদ্দেশ্য, পারাপারের অপেক্ষায় থাকা পড়ুয়াদের দিশা দেখানো। কেউ সীমান্তে অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন জানতে পারলে, তাঁকে ফোনে বোঝানোর কাজটাও করছি।

এ বার আসি সীমান্তে। পোল্যান্ড-ইউক্রেন সীমান্তে রয়েছে মোট ন’টি বর্ডার। যার মধ্যে মেডিকা, মানুষ পারাপারের পক্ষে সব থেকে বড়। চেক পয়েন্ট ওয়ান, চেক পয়েন্ট টু এবং পোলিশ গার্ড— এই তিনটি পথ পেরিয়ে তবেই পোল্যান্ডে ঢুকতে হবে। সেখানে এক জন পড়ুয়া তাঁর ইউক্রেনের পাসপোর্ট এবং স্টুডেন্ট কার্ড দেখালে স্ট্যাম্প মারা কাগজে ১৫ দিন পোল্যান্ডে থাকার অনুমোদন পাবেন। কিন্তু ফেলে আসা ছবিটা কেমন?
চেক পয়েন্ট ওয়ান থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে থামছে বাস। সীমান্ত পেরোতে তীব্র ঠান্ডায় সেখান থেকে হাঁটা শুরু করতে হচ্ছে। ওই দূরত্ব হেঁটে চেক পয়েন্ট ওয়ানে এলে ইউক্রেনের নিরাপত্তারক্ষীরা প্রাথমিক বাছাই সারছেন। সেখান থেকে ছ’কিলোমিটার হেঁটে যেতে হচ্ছে চেক পয়েন্ট টু। যেখানে অভিবাসনের অনুমতিপত্র দেওয়া হবে।

এটাই হল আসল জায়গা, যেখানে গোলমাল বাধছে। পারাপারের জন্য এখানে দু’টো লাইন হচ্ছে। একটা ইউক্রেনের অধিবাসীদের জন্য। আর একটি বিদেশিদের জন্য। ওঁরা প্রথমে নিজেদের দেশের বাচ্চা-সহ মহিলা, তার পরে মেয়েদের ছাড়ছেন। এর পরে বিদেশিদের ছাড়ছেন। এই বিদেশিদের মধ্যে থেকে ভারতীয়, পাকিস্তানি ও বাংলাদেশিদেরকেই মূলত হেনস্থা করা হচ্ছে। এর কারণ বলা সম্ভব নয়। ছোট দল হলে তবু রেহাই মিলছে। যখনই ৪০-৫০ জনের পড়ুয়ার দল হাজির হচ্ছে, তখন ধৈর্য হারাচ্ছেন ইউক্রেনের নিরাপত্তারক্ষীরা।

এর পরে পাঁচশো মিটার ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ দিয়ে হেঁটে পৌঁছতে হচ্ছে পোলিশ নিরাপত্তারক্ষীর কাছে। সেখান থেকে সহজেই ঢোকা যাচ্ছে পোল্যান্ডে। পোল্যান্ড সীমান্তে রয়েছেন ভারতীয় দূতাবাসের দুই আধিকারিক।
দুর্ভাগ্যজনক যে কিভের ভারতীয় দূতাবাস থেকে কোনও আধিকারিক ইউক্রেন সীমান্তে নেই। ওঁরা থাকলে বাচ্চাগুলোকে এ ভাবে হেনস্থা হতে হত না। ওঁদের খাবারের ব্যবস্থা করতে গত কাল বাধ্য হয়ে একটা ছোট ট্রাক নিয়ে পোল্যান্ডের ভারতীয় দূতাবাসের আধিকারিক সীমান্ত পেরিয়েছিলেন। সেটা অপেক্ষারত প্রায় দু’হাজার ভারতীয়ের কাছে এত সামান্য যে আমাদের পক্ষে সেই পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া যন্ত্রণাদায়ক। আমার আর্জি, কিভের ভারতীয় দূতাবাস সেখানে দ্রুত আধিকারিক পাঠাক। লেখক বেঙ্গলি কমিউনিটি পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট।

অনুলিখন: জয়তী রাহা

অন্য বিষয়গুলি:

Russia Ukraine War poland
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy