গত মঙ্গলবার তুরস্কের ওই বৈঠকে রাশিয়া এ-ও জানিয়েছিল, কিভ, চেরনিহিভের মতো অঞ্চল থেকে তারা সেনা কমানো শুরু করবে। কিন্তু বাস্তবে এর কোনও রেশ নেই। যে দিন বৈঠক হয়, সেই রাতেই নাগাড়ে গোলাবর্ষণ চলে চেরনিহিভে।
ভলোদিমির জেলেনস্কি। ফাইল চিত্র।
সব আশ্বাসই যে কথার কথা, কালই তার ইঙ্গিত মিলেছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি বৈঠকে যুদ্ধ শেষের আশা দেখা গেলেও ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ কাল জানান, কোনও ‘সম্ভাবনাই’ দেখতে পাচ্ছেন না তাঁরা। আজ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি দাবি করলেন, সামরিক কর্মকাণ্ড কমানো তো দূরের কথা, পূর্ব ইউক্রেনে আরও জোর হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। তৈরি হচ্ছে ইউক্রেনের বাহিনীও।
গত মঙ্গলবার তুরস্কের ওই বৈঠকে রাশিয়া এ-ও জানিয়েছিল, কিভ, চেরনিহিভের মতো অঞ্চল থেকে তারা সেনা কমানো শুরু করবে। কিন্তু বাস্তবে এর কোনও রেশ নেই। যে দিন বৈঠক হয়, সেই রাতেই নাগাড়ে গোলাবর্ষণ চলে চেরনিহিভে। কালও পরিস্থিতির কোনও বদল ঘটেনি। জ়েলেনস্কি জানিয়েছেন, যুদ্ধের তীব্রতা কমানোর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাশিয়া, সব ‘মিথ্যা’। তিনি আরও জানান, পূর্ব ডনবাস অঞ্চলে নতুন করে সেনাবহর সাজাচ্ছে মস্কো। আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির থেকে আজও অস্ত্রসাহায্য চেয়েছেন জ়েলেনস্কি। বহু আবেদন-নিবেদন করেও এ পর্যন্ত ইউরোপের কোনও দেশ যুদ্ধবিমান পাঠায়নি তাদের। প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘কাউকে বিশ্বাস করি না। একটা কথাও বিশ্বাস করি না। আমরা কিচ্ছু ছাড়ব না। আমাদের দেশের প্রত্যেক মিটার জমির জন্য লড়ে যাব।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘কোনও জায়গা থেকে যদি রুশ বাহিনী সরেও আসে, জানবেন, সেটা ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রত্যাঘাতের ফল। তাই তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।’’
চের্নোবিল থেকে রুশ সেনা সরার কথা শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। তবে তা-ও একেবারেই তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে। বেশ কিছু দিন হল চের্নোবিলের পরমাণু কেন্দ্র রুশ বাহিনীর দখলে। রাশিয়ার হামলায় পরমাণু কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবরও মিলেছিল এর আগে। সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে, পরমাণু কেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়াচ্ছে। এবং তেজস্ক্রিয় বিকিরণে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন রুশ সেনারা। বেলারুসের হাসপাতালে কিছু রুশ সেনাকে ভর্তিও করতে হয়েছে বলে সূত্রের খবর। চের্নোবিলের এক প্রশাসনিক কর্তা জানিয়েছেন, গোমেলের বিশেষ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করাতে হয়েছে চের্নোবিলে ঢুকে পড়া রুশ বাহিনীর বেশ কয়েক জনকে। ইয়ারোস্লাভ ইয়েমেলিয়াঙ্কো নামে ওই কর্তা বলেন, ‘‘আগেও এক দলকে ভর্তি করাতে হয়েছিল। চের্নোবিল দখল করতে আসা আরও এক দল রুশ সন্ত্রাসবাদীকে গোমেলের বেলারুসিয়ান রেডিয়েশন মেডিসিন সেন্টারে আনা হয়েছে।’’ সংক্রমিতদের চিকিৎসায় সাহায্যের জন্য ইয়েমেলিয়াঙ্কোকে ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদে জানা গিয়েছে, ওই অঞ্চলের ‘রেড ফরেস্ট’-এ মাটি খুঁড়েছিল রুশ বাহিনী। তাতেই কোনও ভাবে সংক্রমিত হয়েছে তারা। ইয়েমেলিয়াঙ্কো বলেন, ‘‘রেড ফরেস্ট গর্ত খুঁড়েছিল ওরা। এ বার এই ছোট্ট জীবনে তার ফল ভোগ করতে হবে। এই অঞ্চলে অনেক নিয়ম মেনে চলতে হয়। সে সব বাধ্যতামূলক। তেজস্ক্রিয়তার হাত থেকে বাঁচতে এই নিয়ম মানা আবশ্যিক।’’ বিদ্রুপের সুরে ইয়েমেলিয়াঙ্কো আরও বলেন, ‘‘তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিষক্রিয়া তো কোন দেশের সেনা, সে সব দেখে না। একটু বুদ্ধি খরচ করলেই এই বিপদ এড়ানো যেত।’’ চের্নোবিলের কর্মীরাও বলেন, ‘‘ওদের দেশের সরকার এখানে আত্মঘাতী অভিযানে পাঠিয়েছিল।’’ তাঁরা জানিয়েছেন, রুশ ট্যাঙ্কার, গাড়ি বা কোনও কিছুতে তেজস্ক্রিয়তা-রোধী নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। ফলে রুশ বাহিনীর প্রতিটি জিনিসে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। চের্নোবিলের কর্মীরা জানান, ওই জঙ্গলের নাম ‘রেড ফরেস্ট’ কারণ, ১৯৮৬ সালের বিস্ফোরণের পরে দীর্ঘ পাইনের জঙ্গল তেজস্ক্রিয় বিকিরণে লাল হয়ে গিয়েছিল। মারাত্মক বিপজ্জনক সেই ‘রেড ফরেস্টে’ তেজস্ক্রিয় পদার্থের ধোঁয়া উড়িয়ে ঢুকে পড়েছিল রুশ বাহিনীর কনভয়। তারই ফল এখন ভুগছে ‘শত্রুদের’ সেনাবাহিনী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy