রুশ গ্রাড-এর মোকাবিলায় ইউক্রেনের জ্যাভলিন। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এক সপ্তাহ ধরে বিমান থেকে বোমাবর্ষণ এবং দূরপাল্লার ৩-এম ৫৪ ক্যালিবার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হানার পরে এ বার খারকিভ-সহ ইউক্রেনের একাধিক শহর দখলের জন্য মুখোমুখি লড়াইয়ে নেমে পড়েছে রুশ বাহিনী। কিন্তু সেই অভিযানে কার্যত প্রতি ইঞ্চি জমি দখলে ইউক্রেন সেনার শক্ত প্রতিরোধের মুখে পড়ছে তারা।
তবে ইউক্রেন সেনার প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে বৃহস্পতিবার, যুদ্ধের অষ্টম দিনে দক্ষিণ ইউক্রেনে ডেনিপার নদীর মোহনার বন্দর-শহর খেরসনের দখল নিয়েছে রুশ বাহিনী। কৃষ্ণসাগরের উপকূলবর্তী বড় শহর ওডেসা এবং মারিউপোল শহর দখলের জন্যও আক্রমণের তীব্রতা বাড়ানো হয়েছে। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ক্রাইমিয়ার উপকূলে মোতায়েন রুশ নৌসেনা এক সপ্তাহ আগেই ওই দু’টি শহর দখলের লক্ষ্যে তৎপরতা শুরু করেছিল। রুশ নৌবাহিনীর ‘অ্যাম্ফিবিয়ান ল্যান্ডিং ভেহিকল’ থেকে কয়েক হাজার সেনা অবতরণ করে ওডেসা এবং মারিউপোলের আশেপাশে অবস্থান নেয়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সেনা অভিযানের ঘোষণার পর বিমান হানার পাশাপাশি দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল মস্কো। এর পর বেলারুশ, ডনবাস (ইউক্রেনের ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে একত্রে এই নামে ডাকা হয়) দিয়ে অভিযান শুরু করে রুশ আর্মাড (ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া গাড়ি সজ্জিত) এবং আর্টিলারি ডিভিশনগুলি।
প্রাথমিক ভাবে শহরগুলিতে দূর থেকে হামলা চালাতে ৫৫০ কিলোমিটার পাল্লার ‘টস-১’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রুশ বাহিনী। টি-৭২ ট্যাঙ্কের উপর বসানো এই ‘মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম’ (এমএলআরএস)-এর বিধ্বংসী ক্ষমতা মারাত্মক। কিন্তু শহরের রাস্তায় মুখোমুখি লড়াইয়ে তা কার্যকর নয়। এই পরিস্থিতিতে ‘বিএম-২১ গ্রাড’-এর উপর নির্ভর করছে পুতিন-বাহিনী। গাড়ির উপর বসানো এই এমএলআরএস-এর ৫০০ মিটার- ২০ কিলোমিটার মডেলগুলি ব্যবহার করেই গত দু’দিন খারকিভ, খেরসন-সহ কয়েকটি শহরে লড়াইয়ে নেমেছে তারা।
গ্রাড-বাহী গাড়িগুলিকে সুরক্ষা দিতে অগ্রসহ হচ্ছে রুশ ট্যাঙ্কও। এই পরিস্থিতিতে রুশ বহরকে রোখায় ইউক্রেন সেনার প্রধান হাতিয়ার আমেরিকায় তৈরি এফজিএম-১৪৮ জ্যাভলিন। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে গত কয়েক দিনে রাশিয়ার বেশ কিছু ট্যাঙ্ক ধ্বংস হয়েছে। রাজধানী কিভের অদূরে পৌঁছে রুশ ফৌজের পিছিয়ে আসার নেপথ্যেও জ্যাভলিনের ভূমিকা রয়েছে বলে সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন। হাল্কা এই ক্ষেপণাস্ত্র সহজেই এক জন মাত্র সেনা বহন করতে পারেন। সিরিয়া এবং লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে ইতিমধ্যেই কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে এই ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র।
খেরসন দখল করলেও কিভ, খারকিভ, ওডেসা, মারিউপোল, চেরনিহিভ-সহ বড় শহরগুলি এখনও ইউক্রেনের দখলে রয়েছে বলে বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। তবে গোয়েন্দা রিপোর্ট উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, গত ৭২ ঘণ্টায় কিভ-সহ কয়েকটি শহরে চূড়ান্ত আক্রমণ চালানোর লক্ষ্যে প্রস্তুতি বাড়িয়েছে রুশ সেনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy