Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Russia Ukraine War

Russia Ukraine War: দু’হাত বাঁধা, রাস্তায় ছড়িয়ে রয়েছে দেহ! ইউক্রেনে রুশ সেনার তাণ্ডবের ভয়াবহ ছবি প্রকাশ্যে

কিভের উপকণ্ঠে বুকা শহরের এই ঘটনা জানাজানি হয়েছে আজ। বেশ কিছু দিন এ শহর দখল করেছিল রুশ বাহিনী।

ইউক্রেনের বুকা শহরের রাস্তায় পড়ে হাত বাঁধা দেহ।

ইউক্রেনের বুকা শহরের রাস্তায় পড়ে হাত বাঁধা দেহ। ছবি: রয়টার্স

নিজস্ব প্রতিবেদন
কিভ শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২২ ০৪:৫৬
Share: Save:

যত দূর চোখ যায়, গোটা রাস্তাটা যেন কেউ পুড়িয়ে দিয়েছে। কালো ছাইয়ে ঢাকা পথ। দু’পাশে ঝলসে যাওয়া গাছের সারি। উল্টো থাকা ট্যাঙ্ক এ-দিক সে-দিকে। আর রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা মৃতদেহের সারি। কারও কারও হাত পিছমোড়া করে বাধা। শীতল হয়ে যাওয়া শরীরে-মুখে মৃত্যুযন্ত্রণা স্পষ্ট।

কিভের উপকণ্ঠে বুকা শহরের এই ঘটনা জানাজানি হয়েছে আজ। বেশ কিছু দিন এ শহর দখল করেছিল রুশ বাহিনী। বুকা হয়ে কিভের দিকে এগোনোর চেষ্টা করেছিল তারা। অভিযোগ উঠছে, সে সময়ে নির্বিচারে হত্যা চালায় তারা। তার পর ৩০ মার্চ নাগাদ শহর ছেড়ে বেরিয়ে আসার আগে আরও একদফা নিধনযজ্ঞ চলে। রাশিয়া পুরোপুরি অস্বীকার করেছে সব দায়। তাদের দাবি, সবটাই ভুয়ো, মিথ্যা প্রচার। মস্কোর ব্যাখ্যা, এ সব সাজানো ছবি। তারা এমনও বলেছে, ‘‘ভিডিয়োগুলি ভাল করে লক্ষ করলে দেখা যাবে মৃতদেহ নড়ছে।’’

যদিও তেমন কিছু এ পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমের হাতে আসেনি। বরং ইউরোপের সংবাদ সংস্থাগুলি জানিয়েছে, এর আগে এই শহরে ঢোকা যাচ্ছিল না। শনিবার বুকায় ঢুকতে দেখা যায় ভয়াবহ দৃশ্য। একটি প্রথম সারির সংবাদ সংস্থার কর্মী জানিয়েছেন, তিনি একা অন্তত ২০টি মৃতদেহ গুণেছেন। দেহগুলির পোশাক দেখে স্পষ্ট, সকলেই সাধারণ বাসিন্দা।

ইউক্রেনের বিদেশমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা সংবাদিকদের কাছে বলেছেন, ‘‘আমরা এখনও দেহ উদ্ধারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। নিহত কয়েকশো। নির্দিষ্ট করে সংখ্যা বলতে পারব না। রাস্তায় পড়ে রয়েছে অসংখ্য দেহ। ওরা এই শহর দখল করে থাকার সময়ে খুন করেছে। শহর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ফের হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে।’’

সম্প্রতি খবর আসে, ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রতিরোধে সমগ্র কিভ অঞ্চল, ইরপিন, বুকা ছেড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে রুশ বাহিনী। এমনকি হস্টোমেল বিমানবন্দর থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছে রাশিয়া। এ খবর আসতেই আজ ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ফোন করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কিকে অভিনন্দন জানান। আর তার পরেই প্রকাশ্যে আসে বুকার হত্যাকাণ্ড। নেটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেন্স স্টোলেনবার্গ বলেন, ‘‘মেনে নেওয়া যায় না। গত কয়েক দশকে এমন নৃশংসতা দেখেনি ইউরোপ।’’ ঘটনার

তীব্র নিন্দা করেছে জার্মানি। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ বলেছেন, ‘‘অসহনীয় দৃশ্য। রাশিয়াকে জবাব দিতেই হবে।’’ আমেরিকার বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও বলেন, ‘‘এ সব দেখে নিজেকে ঠিক রাখা যায় না।’’

হামলা চালিয়েই যাচ্ছে রাশিয়া। আজ কৃষ্ণসাগরের তীরে ওডেসায় একটি তৈল শোধনাগার ও সংরক্ষণাগারে হামলা চালায় তারা। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকোভ জানিয়েছেন, তাদের জাহাজ ও যুদ্ধবিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল। মিকোলিভে ইউক্রেনের সেনাঘাঁটিতে জ্বালানি পৌঁছয় ওডেসার এই তেলের ডিপো থেকেই। কোনাশেনকোভ আরও জানিয়েছেন, কোস্টিয়ান্টিনিভকা ও ক্রেশচের দু’টি অস্ত্রাগারও ধ্বংস করেছে তারা। স্থানীয় সূত্রে খবর, ভোর ৫টা ৪৫ নাগাদ হঠাৎই সাইরেন বেজে ওঠে ওডেসায়। তার পরই দু’টি যুদ্ধবিমান থেকে বোমা ফেলার আওয়াজ। কালো ধোঁয়া ঢেকে ফেলে জায়গাটিকে। মুহূর্তের ব্যবধানে দ্বিতীয় বিস্ফোরণ। খারকিভেও লাগাতার গোলাবর্ষণ চলছে। গোটা উত্তরপূর্ব ইউক্রেনই বিপর্যস্ত বলে জানিয়েছেন আঞ্চলিক গভর্নর ওলে সিনেহুবোভ। তাঁর দাবি, গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ বারেরও বেশি হামলা চালিয়েছে রুশ ট্যাঙ্কবাহিনী। খারকিভের দক্ষিণে লোজ়োভায় ৪ জন জখম হয়েছেন ক্ষেপণাস্ত্র হানায়। বালাক্লিয়া শহরের একটি হাসপাতালে হামলা চালায় রুশ ট্যাঙ্ক। তাতে ভেঙে পড়েছে হাসপাতালের একাংশ। দ্রুত রোগীদের উদ্ধার করে প্রশাসন।

যথেষ্ট যুদ্ধবিমান নেই, অত্যাধুনিক অস্ত্রের অভাব, মজুত রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র অনেকাংশে ধ্বংস করে দিয়েছে রাশিয়া। তবু জমি আকড়ে ইউক্রেনবাসী। নিরস্ত্র মানুষগুলো লড়ে চলেছেন দেশের জন্য— ছলে, বলে, কৌশলে। আজ ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, খারকিভে দুই রুশ সেনার মৃত্যু হয়েছে। ২৮ জন হাসপাতালে ভর্তি। স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের পাই খেতে দিয়েছিলেন। বিষ মেশানো ছিল সেই খাবারে। মন্ত্রক জানিয়েছে, ‘বিষমদ’ পান করে এমন আরও ৫০০ রুশ সেনা হাসপাতালে ভর্তি। সেই বিষাক্ত মদের উৎস এখনও অজানাই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy