রোমানিয়ার স্টেডিয়ামে যে ভাবে দিন কাটছে। নিজস্ব চিত্র।
যুদ্ধের কথা শুনেছি। পড়েছি। কিন্তু, যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরে মানুষের অবস্থা কী হয়, তা এ বার বুঝলাম। ইউক্রেনের রাজধানী কিভেই আমাদের কলেজ। গত মঙ্গলবার কাকভোরে যতটা পেরেছি, মালপত্র নিয়ে আমরা প্রায় ৩০ জন বন্ধু একসঙ্গে বেরিয়ে পড়েছিলাম। একটাই লক্ষ্য ছিল, ইউক্রেনের সীমান্ত পেরিয়ে অন্য যে কোনও দেশে ঢুকতে হবে।
এখন আমি রোমানিয়ার বুখারেস্টের মিলিসান্টি স্টেডিয়ামের শিবিরে। আমার সঙ্গে সাত জন বন্ধু। বাকিরা ছিটকে গিয়েছে হাঙ্গেরিতে, পোল্যান্ডে। মঙ্গলবার সকালে সবাই মিলে যখন কিভ রেলস্টেশনে পৌঁছেছিলাম, সেখানে অগুনতি মানুষের ভিড়। সবাই ইউক্রেন ছেড়ে পালাতে চাইছেন। একের পর এক ট্রেন আসছে। ভেড়ার পালের মতো মানুষ উঠছে ট্রেনে। ট্রেনের দরজার মুখে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল হাতে ইউক্রেনের সেনা। পাসপোর্ট দেখে বেছে বেছে শুধু ইউক্রেনীয়দের ট্রেনে তোলা হচ্ছে। আমরা উঠতে চাইলে ঠেলে দিচ্ছে দূরে।
আমরাও মরিয়া। তখনই বুঝেছিলাম, একসঙ্গে ৩০ জন এক ট্রেনে উঠতে পারব না। ঠিক করি, ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে যারা যে ট্রেনে পারব, উঠে যাব। আমরা জনা আটেক বন্ধু এর মধ্যেই একটি ট্রেনের দরজায় ঠেলাঠেলি করে উঠে পড়েছি। অনেকেরই মালপত্র স্টেশনেই ফেলে আসতে হয়েছে। আগে তো প্রাণ বাঁচাই। প্রথমে ট্রেন, তারপরে বাসে করে রোমানিয়ার সীমান্তে পৌঁছেছি মঙ্গলবার রাতে। সেখান থেকে বাসে করে স্টেডিয়াম। এখন বাইরে মাইনাস ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুঝতেই পারছেন, বেরনো সম্ভব নয়। কনকনে ঠান্ডা হাওয়া ছুরির ফলার মতো শরীরে এসে বিঁধছে।
তবে, বিশ্বাস করুন, এখন ভাল আছি। মনে যে ভয়টা চেপে বসেছিল, তা অনেকটাই কেটেছে। কিভে থাকাকালীন, কিভ থেকে রোমানিয়ার পথে মৃত্যুভয় তাড়া করে বেড়াচ্ছিল। চারদিকে অসহায় মানুষের ছোটাছুটি, ট্রেনে ওঠার জন্য মারপিট, খিদের জন্য ছটফটানি, এ এক ভয়াবহ স্মৃতি বয়ে বেড়াতে হবে বাকি জীবন।
এখন যে শেল্টারে আছি, সেখানেও গাদাগাদি ভিড়। শৌচালয়ের সামনে মানুষের দীর্ঘ লাইন। তবে, কোনও সমস্যাটাই সমস্যা বলে এখন আর মনে হচ্ছে না। রোমানিয়ার স্থানীয় প্রশাসন সাহায্য করছে। খাবার পাচ্ছি। কম্বল দিয়েছে। গরম
জল দিচ্ছে। চকোলেটও দিয়েছে। ঝাড়খণ্ডে বাড়িতে যোগাযোগ করে বলেছি, চিন্তা না করতে। শুনেছি, ভারত সরকার আমাদের দেশে
ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত আমাদের দেশের কোনও অফিসারের দেখা পাইনি। আশায় বুক বেঁধে আছি।
(লেখক: প্রথম বর্ষের ছাত্র, বোগোমোলেস ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy