রাশিয়ার রকেট-হানায় এমনই গহ্বর তৈরি হয়েছে ইউক্রেনের খারকিভ শহরের পথে। ছবি পিটিআই।
সীমান্ত পেরোলে ৭২ কিলোমিটার দূরত্বে পোল্যান্ডের ওয়ারশতে তখন বৈঠক করছেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। রাশিয়াকে কী করে বাগে আনা যায়, তার পরিকল্পনা চলছে। গত কাল ঠিক সেই সময়ে পোল্যান্ড সীমান্ত ঘেঁষা ইউক্রেনের পশ্চিমতম শহর লিভিভে রকেট হামলা চালাল মস্কো। মনে করিয়ে দিল, তারা চাইলে ইউক্রেনের যে কোনও প্রান্তে হানা দিতে পারে।
গত এক মাসে লিভিভ শহরটি ইউক্রেনের শরণার্থী করিডর হয়ে উঠেছে। কমপক্ষে ২ লক্ষ ইউক্রেনীয় ঘর ছেড়ে পোল্যান্ড সীমান্তবর্তী এই শহরে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে লিভিভ সীমান্ত পেরিয়ে পোল্যান্ডে ঢুকছেন। বিদেশ থেকে ত্রাণও ইউক্রেনে আসছে এই শহর দিয়েই। এর অন্যতম কারণ, দেশের অন্য অংশগুলোর তুলনায় যুদ্ধের আঁচ এখানে কম। কিন্তু একেবারে ভয়শূন্য রাখছে না রাশিয়া। গত কাল এক বার নয়, আকাশপথে একের পর এক রকেট-হানা চালায় তারা। এক সপ্তাহ আগে লিভিভের একটি বিমান-কারখানাতেও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল মস্কো।
আঞ্চলিক গভর্নর ম্যাকসিম কোজ়িতস্কি জানিয়েছেন, গত কাল লিভিভের উত্তর প্রান্তে একটি শিল্পাঞ্চলে পরপর দু’টি রকেট আছড়ে পড়ে। দ্বিতীয় রকেট হামলাটি চলে এর এক ঘণ্টা পরে। এ বারে লিভিভের গা ঘেঁষে তিনটি বিস্ফোরণ ঘটে। কোজ়িতস্কি জানান, ওই জায়গায় তৈল শোধনাগার ও সেনাবাহিনীর কিছু কারখানা রয়েছে। রুশ সেনা হয়তো সে সবই নিশানা করেছিল। তবে এই জায়গায় জনবসতিও রয়েছে। হতাহতের খবর কিছু বলেননি কোজ়িতস্কি। তবে জানিয়েছেন, বিশ্বাসঘাতক সন্দেহে এক জনকে আটক করা হয়েছে। রকেট আছড়ে পড়ার সময়ে তাকে রেকর্ড করতে দেখে পুলিশ। লোকটির থেকে আরও কিছু সন্দেহজনক ছবি পেয়েছে তারা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, ছবিগুলি পাঠানো হয়েছিল রুশ ফোন নম্বরে।
এর মধ্যেই আজ লুহানস্কের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা লিওনিড পেসচনিক ঘোষণা করেছেন, তাঁরা রাশিয়ায় যোগ দিতে চান। এ জন্য ভোট করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তাঁর সংগঠন। রাশিয়া বরাবরই লুহানস্ক ও ডোনেৎস্কের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলির সমর্থক। যুদ্ধ শুরুর ঠিক আগে ২১ ফেব্রুয়ারি এই দুই অঞ্চলকে স্বাধীন ঘোষণা করেছিল মস্কো। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পরে আর কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলে আটকে থাকেনি হামলা।
গত কাল একাধিক ভারী শব্দে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আক্রমণ করেছিলেন বাইডেন। কখনও ‘কসাই’ বলেছেন, কখনও আবার বলেছেন, ‘‘ঈশ্বরের দোহাই, ওঁর ক্ষমতায় থাকা উচিত নয়।’’ এর পরেই আজ জেরুসালেমের একটি বৈঠকে আমেরিকার বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘‘ইউক্রেন বা অন্য কোনও দেশেই আগ্রাসন চালাতে পারেন না পুতিন। তবে ওঁকে গদিচ্যুত করার কথা আমরা বলছি না। তেমন কোনও পরিকল্পনাও আমাদের নেই।’’
কখনও গুরু তো কখনও লঘু, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমের সুর এ ভাবেই উঠছে এবং পড়ছে। মস্কোকে রুখতে পরপর নেটো ও জি৭-এর জরুরী বৈঠক হয়ে গেল ব্রাসেলসে। তাতেও দেখা গেল মতানৈক্য। জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়ামের মতো দেশ এখনই রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নারাজ। জ্বালানির জন্য রাশিয়ার উপরে নির্ভরশীল দেশগুলি তাকে হুট করে চটাতে চায় না। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি আজ বলেন, ‘‘মারিয়ুপোল যে ভাবে লড়ে যাচ্ছে, তা অকল্পনীয়। ওদের ১ শতাংশ সাহস যদি পশ্চিমের দেশগুলোর থাকত! ৩১ দিন ধরে তারা ভেবেই চলেছে, কী ভাবে ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান কিংবা ট্যাঙ্ক দেবে।’’ জ়েলেনস্কি বহু দিন ধরে যুদ্ধবিমান চেয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেউ দেয়নি। মাঝে পোল্যান্ড বলেছিল, আমেরিকা হয়ে তারা ঘুরপথ বিমান দেবে। কিন্তু নেটো সেই পরিকল্পনাও খারিজ করেছে। জ়েলেনস্কি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘তা হলে কি ধরে নিতে হবে, মস্কোই নেটোর দায়িত্বে রয়েছে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy