Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
International Photogallery

ভাসমান চের্নোবিল! রাশিয়ার নতুন পরমাণু চুল্লি ঘিরে নয়া আশঙ্কার মেঘ

চের্নোবিলের পারমাণবিক বিপর্যয়ের কথা মনে পড়ে? ১৯৮৬-র ২৬ এপ্রিলের মধ্যরাত। অবিভক্ত সোভিয়েত ইউনিয়নে চের্নোবিল পরমাণু কেন্দ্রের ৪ নম্বর চুল্লিতে ঘটেছিল ভয়াবহ বিস্ফোরণ। বিষাক্ত তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। বহু বিশেষজ্ঞের মতে, ফের ঘটতে পারে চের্নোবিলের মতো বিপর্যয়। কেন এই আশঙ্কা?

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৯ ১১:৫৭
Share: Save:
০১ ১২
চের্নোবিলের পারমাণবিক বিপর্যয়ের কথা মনে পড়ে? ১৯৮৬-র ২৬ এপ্রিলের মধ্যরাত। অবিভক্ত সোভিয়েত ইউনিয়নে চের্নোবিল পরমাণু কেন্দ্রের ৪ নম্বর চুল্লিতে ঘটেছিল ভয়াবহ বিস্ফোরণ। বিষাক্ত তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। বহু বিশেষজ্ঞের মতে, ফের ঘটতে পারে চের্নোবিলের মতো বিপর্যয়। কেন এই আশঙ্কা?

চের্নোবিলের পারমাণবিক বিপর্যয়ের কথা মনে পড়ে? ১৯৮৬-র ২৬ এপ্রিলের মধ্যরাত। অবিভক্ত সোভিয়েত ইউনিয়নে চের্নোবিল পরমাণু কেন্দ্রের ৪ নম্বর চুল্লিতে ঘটেছিল ভয়াবহ বিস্ফোরণ। বিষাক্ত তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। বহু বিশেষজ্ঞের মতে, ফের ঘটতে পারে চের্নোবিলের মতো বিপর্যয়। কেন এই আশঙ্কা?

০২ ১২
২৩ অগস্ট রাশিয়ার মুরমানস্ক থেকে সে দেশের সুমেরু অঞ্চলের বন্দরশহর পেভেকে ঘাঁটি গাড়ে একটি  জাহাজ। ‘আকাদেমিক লোমোনোসভ’ নামের সে জাহাজে রয়েছে দু’টি পারমাণবিক চুল্লি। রাশিয়ার স্টেট নিউক্লিয়ার কর্পোরেশন রোসাতম জানিয়েছে, পারমাণবিক জ্বালানির মাধ্যমে আপাতত ওই অঞ্চলে বিদ্যুতের যোগান দেওয়াই তার উদ্দেশ্য।

২৩ অগস্ট রাশিয়ার মুরমানস্ক থেকে সে দেশের সুমেরু অঞ্চলের বন্দরশহর পেভেকে ঘাঁটি গাড়ে একটি জাহাজ। ‘আকাদেমিক লোমোনোসভ’ নামের সে জাহাজে রয়েছে দু’টি পারমাণবিক চুল্লি। রাশিয়ার স্টেট নিউক্লিয়ার কর্পোরেশন রোসাতম জানিয়েছে, পারমাণবিক জ্বালানির মাধ্যমে আপাতত ওই অঞ্চলে বিদ্যুতের যোগান দেওয়াই তার উদ্দেশ্য।

০৩ ১২
শুধুমাত্র পেভেক নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার বাজারেও বিদ্যুতের সরবরাহ করতে চায় রাশিয়া সরকার। ওই ভাসমান জাহাজটি প্রতি ঘণ্টায় ৭০ মেগাওয়াটের বৈদ্যুতিক জ্বালানি ও ৫০ গিগাওয়াট তাপশক্তি উৎপন্ন করতে পারে। রোসাতমের দাবি, যা ১০ হাজার মানুষের বিদ্যুতের দাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট।

শুধুমাত্র পেভেক নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার বাজারেও বিদ্যুতের সরবরাহ করতে চায় রাশিয়া সরকার। ওই ভাসমান জাহাজটি প্রতি ঘণ্টায় ৭০ মেগাওয়াটের বৈদ্যুতিক জ্বালানি ও ৫০ গিগাওয়াট তাপশক্তি উৎপন্ন করতে পারে। রোসাতমের দাবি, যা ১০ হাজার মানুষের বিদ্যুতের দাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট।

০৪ ১২
তবে আশঙ্কা কেন? পারমাণবিক বিপর্যয় তো রাশিয়ায় কম ঘটেনি। অতি সম্প্রতি সে দেশের পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রে দু’টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ১ জুলাই লোশারিক পারমাণবিক সাবমেরিনে এক বিধ্বংসী আগুনে ১৪ জন নাবিকের মৃত্যু হয়। ৮ অগস্ট সমুদ্রে একটি মিসাইল পরীক্ষা ব্যর্থ হলে তাতে প্রাণ হারান পাঁচ বিজ্ঞানী।

তবে আশঙ্কা কেন? পারমাণবিক বিপর্যয় তো রাশিয়ায় কম ঘটেনি। অতি সম্প্রতি সে দেশের পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রে দু’টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ১ জুলাই লোশারিক পারমাণবিক সাবমেরিনে এক বিধ্বংসী আগুনে ১৪ জন নাবিকের মৃত্যু হয়। ৮ অগস্ট সমুদ্রে একটি মিসাইল পরীক্ষা ব্যর্থ হলে তাতে প্রাণ হারান পাঁচ বিজ্ঞানী।

০৫ ১২
১৯৮৯-তে কোমোসোমোলেটস নামে একটি পারমাণবিক সাবমেরিন সমুদ্রে হারিয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছে তা থেকে ভয়াবহ মাত্রায় তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ হচ্ছে। ২০০০ সালের ১২ অগস্ট কারস্ক পারমাণবিক সাবমেরিন সমুদ্রে ডুবে যায়। সে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ১১৮ জনের।

১৯৮৯-তে কোমোসোমোলেটস নামে একটি পারমাণবিক সাবমেরিন সমুদ্রে হারিয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছে তা থেকে ভয়াবহ মাত্রায় তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ হচ্ছে। ২০০০ সালের ১২ অগস্ট কারস্ক পারমাণবিক সাবমেরিন সমুদ্রে ডুবে যায়। সে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ১১৮ জনের।

০৬ ১২
এ তো গেল সাম্প্রতিক ঘটনা। ৩০ বছর আগে ঘটলেও চের্নোবিল বিপর্যয়ের স্ম়ৃতি এখনও ভুলতে পারেননি অনেকে। চের্নোবিল পরমাণু কেন্দ্রে ওই বিস্ফোরণের জেরে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ৪ জন কর্মীর। পরের তিন মাসে  মারা যান আরও ৩১ জন।

এ তো গেল সাম্প্রতিক ঘটনা। ৩০ বছর আগে ঘটলেও চের্নোবিল বিপর্যয়ের স্ম়ৃতি এখনও ভুলতে পারেননি অনেকে। চের্নোবিল পরমাণু কেন্দ্রে ওই বিস্ফোরণের জেরে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ৪ জন কর্মীর। পরের তিন মাসে মারা যান আরও ৩১ জন।

০৭ ১২
চের্নোবিল বিপর্যয়ে সব মিলিয়ে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত ৬ লক্ষ শিশু-সহ ৫০ লক্ষ মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে, বিষাক্ত তেজষ্ক্রিয় বিকিরণের জেরে ক্যানসারে মারা গিয়েছেন অন্তত ৯ হাজার। বেলারুশ সরকারের রিপোর্টে সে সংখ্যাটা ১ লক্ষেরও বেশি। আজও সেখানকার সদ্যোজাতদের মধ্যে নানা শারীরিক অসঙ্গতি দেখা দিচ্ছে।

চের্নোবিল বিপর্যয়ে সব মিলিয়ে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত ৬ লক্ষ শিশু-সহ ৫০ লক্ষ মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে, বিষাক্ত তেজষ্ক্রিয় বিকিরণের জেরে ক্যানসারে মারা গিয়েছেন অন্তত ৯ হাজার। বেলারুশ সরকারের রিপোর্টে সে সংখ্যাটা ১ লক্ষেরও বেশি। আজও সেখানকার সদ্যোজাতদের মধ্যে নানা শারীরিক অসঙ্গতি দেখা দিচ্ছে।

০৮ ১২
পরিবেশ নিয়ে আন্দোলনকারী সংগঠন গ্রিনপিস সম্প্রতি ওই পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী জাহাজ ‘আকাদেমিক লোমোনোসভ’ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। গত এপ্রিলে একটি ব্লগে তারা লিখেছে, ‘পরবর্তী চের্নোবিল বিপর্যয় হতে পারে সুমেরু সাগরে।’ গ্রিনপিস-এর তরফে কনস্তান্তিন ফোমিনের দাবি, অবিলম্বে ওই বিপজ্জনক পরিকল্পনা বাতিল করুক রাশিয়া।

পরিবেশ নিয়ে আন্দোলনকারী সংগঠন গ্রিনপিস সম্প্রতি ওই পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী জাহাজ ‘আকাদেমিক লোমোনোসভ’ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। গত এপ্রিলে একটি ব্লগে তারা লিখেছে, ‘পরবর্তী চের্নোবিল বিপর্যয় হতে পারে সুমেরু সাগরে।’ গ্রিনপিস-এর তরফে কনস্তান্তিন ফোমিনের দাবি, অবিলম্বে ওই বিপজ্জনক পরিকল্পনা বাতিল করুক রাশিয়া।

০৯ ১২
অনেকে এ জাহাজকে ‘ভাসমান চের্নোবিল’ অ্যাখ্যা দিচ্ছেন। পরিবেশবিদদের একাংশের আশঙ্কা সত্ত্বেও রাশিয়ার দাবি, এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। রোসাতমের বিবৃতি, ‘সুরক্ষার সমস্ত সম্ভাব্য দিক দেখে জাহাজটি ডিজাইন করা। সুনামি বা অন্য ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়েও যাতে জাহাজের পারমাণবিক চুল্লিতে কোনও প্রভাব না পড়ে তা খেয়াল রাখা হয়েছে।’

অনেকে এ জাহাজকে ‘ভাসমান চের্নোবিল’ অ্যাখ্যা দিচ্ছেন। পরিবেশবিদদের একাংশের আশঙ্কা সত্ত্বেও রাশিয়ার দাবি, এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। রোসাতমের বিবৃতি, ‘সুরক্ষার সমস্ত সম্ভাব্য দিক দেখে জাহাজটি ডিজাইন করা। সুনামি বা অন্য ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়েও যাতে জাহাজের পারমাণবিক চুল্লিতে কোনও প্রভাব না পড়ে তা খেয়াল রাখা হয়েছে।’

১০ ১২
জাহাজে পারমাণবিক চুল্লির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উ়ৎপাদনের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রযুক্তির প্রয়োগ বিশ্বের কাছে নতুন বলে দাবি রাশিয়ার। তবে ইতিহাস বলে, ভাসমান জাহাজে পারমাণবিক চুল্লি থাকাটা নতুন নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন সেনাকে বিদ্যুতের যোগান দিতে ‘এস এস চার্লস এইচ কাগল’ নামে পণ্যবাহী জাহাজে এমনটা করা হয়েছিল।

জাহাজে পারমাণবিক চুল্লির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উ়ৎপাদনের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রযুক্তির প্রয়োগ বিশ্বের কাছে নতুন বলে দাবি রাশিয়ার। তবে ইতিহাস বলে, ভাসমান জাহাজে পারমাণবিক চুল্লি থাকাটা নতুন নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন সেনাকে বিদ্যুতের যোগান দিতে ‘এস এস চার্লস এইচ কাগল’ নামে পণ্যবাহী জাহাজে এমনটা করা হয়েছিল।

১১ ১২
জাহাজে পারমাণবিক চুল্লি রাখাটা বিপজ্জনক বলে দাবি করেছেন পার্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহকারী অধ্যাপক রবার্ট বিনও। তাঁর মতে ঝড়ের সময় ওই চুল্লিগুলিতে রক্ষা করাটা জরুরি হয়ে ওঠে। তা ছাড়া, অন্য জাহাজও ওই ধরনের জাহাজের কাছাকাছি চলে আসতে পারে। তাতেও সুরক্ষা বিঘ্নিত হতে পারে।

জাহাজে পারমাণবিক চুল্লি রাখাটা বিপজ্জনক বলে দাবি করেছেন পার্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহকারী অধ্যাপক রবার্ট বিনও। তাঁর মতে ঝড়ের সময় ওই চুল্লিগুলিতে রক্ষা করাটা জরুরি হয়ে ওঠে। তা ছাড়া, অন্য জাহাজও ওই ধরনের জাহাজের কাছাকাছি চলে আসতে পারে। তাতেও সুরক্ষা বিঘ্নিত হতে পারে।

১২ ১২
জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পরমাণু বিশেষজ্ঞ স্টিভেন বিয়েগালস্কির মতে, গোটা বিষয়টিই রাশিয়া এতটাই লোকচক্ষুর আড়ালে রেখেছে যে তাতেও এর সুরক্ষা নিয়ে আশঙ্কার মেঘ জমেছে। তাঁর মতে, ওই জাহাজে কোনও বিপর্যয় ঘটলে স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য আসতে দেরি হতে পারে। কারণ গোপনীয়তার জন্য আপনি তো তাদের কাছে সাহায্য চাইতে না-ও পারেন।

জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পরমাণু বিশেষজ্ঞ স্টিভেন বিয়েগালস্কির মতে, গোটা বিষয়টিই রাশিয়া এতটাই লোকচক্ষুর আড়ালে রেখেছে যে তাতেও এর সুরক্ষা নিয়ে আশঙ্কার মেঘ জমেছে। তাঁর মতে, ওই জাহাজে কোনও বিপর্যয় ঘটলে স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য আসতে দেরি হতে পারে। কারণ গোপনীয়তার জন্য আপনি তো তাদের কাছে সাহায্য চাইতে না-ও পারেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy