ফাইল চিত্র।
শেষ লগ্নে এসে অবস্থান বদল করলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঋষি সুনক। ভোটারদের মন পেতে জানালেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে পরের নির্বাচনের আগে ২০ শতাংশ আয়কর কমিয়ে দেবেন। ঋষির এই প্রতিশ্রুতিতে ভোটারদের মন গলবে কি না, তা জানতে আরও ৩৪ দিনের অপেক্ষা। আজ থেকে কনজ়ারভেটিভ দলের সদস্যেরা ব্যালট পেপার পেতে শুরু করেছেন। ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভোট দিতে পারবেন তাঁরা। ফল প্রকাশিত হবে ৫ সেপ্টেম্বর।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনক প্রচারে নেমে প্রথম থেকেই করছাড়ের বিরোধিতা করে এসেছেন। বলেছেন, এখন করছাড় দিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সঙ্কটে পড়বে। অন্য দিকে, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী, বিদেশ তথা কমনওয়েলথ মন্ত্রী লিজ় ট্রাস দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ও সাধারণ মানুষের ব্যয়ক্ষমতা বাড়াতে একগুচ্ছ করছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাঁর সেই প্রস্তাব যে সাধারণ ভোটারদের পছন্দ হয়েছিল, তা বোঝা যায় একের পর এক জনসমীক্ষার ফলাফলে। দলের শীর্ষস্তরে, এমপিদের মধ্যে, ভোটাভুটির সময়ে সুনক সব সময়েই প্রথম স্থানে থাকতেন, আর ট্রাস থাকতেন দুই বা তিন নম্বরে। কিন্তু এমপিদের পরিধি ছেড়ে ভোটাভুটির ক্ষেত্র দলের সাধারণ সদস্যের মধ্যে বিস্তৃত হওয়ার পরেই ছবিটা পাল্টে যায়। কনজ়ারভেটিভ দলের দু’লক্ষ সদস্যের অধিকাংশের ট্রাসের জনমোহিনী আর্থিক রূপরেখাইঅনেক বেশি মনে ধরেছে, বলছে জনমত সমীক্ষা।
আজ ট্রাসের পাল্লা ভারী করে তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন দেশের বর্তমান অর্থমন্ত্রী নাদিম জ়াওয়াহি। তাঁর মতে, লিজ় যে ভাবে দেশের অর্থনীতিকে ঢেলে সাজাতে চাইছেন, তাতে সত্যিই উপকৃত হবেন সাধারণ মানুষ। ট্রাসকে সমর্থন করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস-ও। এই দুই হেভিওয়েট মন্ত্রীর সমর্থন অবশ্যই বিদেশমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে।
দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থা হওয়ায় দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী আজ বিশাল আয়কর ছাড়ের প্রস্তাব দেন। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী হলে পরের সাধারণ নির্বাচনের আগে তিনি আয়কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৬ শতাংশ করে দেবেন। অর্থাৎ, বর্তমান আয়কর ২০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন সুনক। তাঁর কথায়, ‘‘গত ৩০ বছরে এত বড় মাপের করছাড় ঘোষণা করা হয়নি।’’ সুনকের এই প্রস্তাবের কড়া সমালোচনা করেছে ট্রাস শিবির। তাদের দাবি, সুনক এখন চাপে পড়ে তাঁর পুরনো অবস্থান থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছেন। যার থেকে স্পষ্ট, ভবিষ্যতে তিনি দেশকে কোন পথে নিয়ে যাবেন, সে বিষয়ে তাঁর কোনও স্পষ্ট দিশা নেই। তা ছাড়া, ট্রাসের মতো সুনক ‘প্রধানমন্ত্রী হলেই করছাড়’-এর আশ্বাস দেননি। শুধু বলেছেন, পরবর্তী ভোটের আগে এই ছাড় চালু করা হবে। কনজ়ারভেটিভ দল যদি তাদের পুরো মেয়াদ শেষ করতে পারে, তা হলে পরের নির্বাচন হওয়ার কথা ২০২৫-এর জানুয়ারিতে। করছাড়ের জন্য ব্রিটিশ জনগণ কেন আরও আড়াই বছর অপেক্ষা করবেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিদেশমন্ত্রীর সমর্থকেরা।
আজ থেকে ব্যালট পেপার পেতে শুরু করেছেন কনজ়ারভেটিভ দলের সদস্যেরা। নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে ২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডাকযোগে ব্যালট পেপার দলীয় দফতরে ফেরত পাঠাতে হবে তাঁদের। ফলে সুনকের হাতে ভোটারদের মন জয় করতে খাতায়কলমে এখনও এক মাস সময় রয়েছে। এখনও বেশ কয়েকটি বিতর্কসভাও বাকি রয়েছে। কিন্তু সমীক্ষায় ইঙ্গিত, ভোটদাতারা অত দিন অপেক্ষা করতে চান না। সামনেই বাচ্চাদের গ্রীষ্মের ছুটি। অনেকেই বেড়াতে যাবেন। ফলে ভোট দেওয়ার পালা আগেভাগেই সেরে ফেলতে চাইছেন তাঁরা। সে ক্ষেত্রে সুনকের হাতে ভোটারদের মনবদল করার জন্য বিশেষ সময় নেই।
অর্থমন্ত্রী থাকার সময়ে সুনকের সরকারি বাসভবন ছিল ১১, ডাউনিং স্ট্রিট। পাশের বাড়িতে কি এ বার সত্যিই প্রবেশ ঘটবে দেশের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রীর? টেরেসা মে-র আমলে গীতায় হাত রেখে শপথ নিয়েছিলেন পরিবারকল্যাণমন্ত্রী সুনক। এ বারও কি সে রকম কোনও দৃশ্যের সাক্ষী থাকবে ওয়েস্টমিনস্টার?
উত্তর জানতে অপেক্ষা আরও ৩৪ দিনের!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy