হঠাৎ করোনা-আতঙ্ক তাইওয়ানে।
ছোট দেশ। কিন্তু বহু প্রচেষ্টায় করোনা সংক্রমণ প্রায় ঠেকিয়ে দিয়েছিল তারা। গোটা দেশে গত এক-দেড় মাসে কোনও স্থানীয় সংক্রমণ ঘটেনি। এ অবস্থায় হঠাৎ করোনা-আতঙ্ক তাইওয়ানে। যিনি প্রথম সংক্রমিত হয়েছেন, তাঁর কোনও রকম বিদেশ সফরের ইতিহাস নেই। কোনও সংক্রমিতের সংস্পর্শে আসারও খবর নেই। তা হলে? এ রহস্য ভেদ করতে তদন্তে নেমেছিলেন বিজ্ঞানীরা। ভেসে উঠেছে কয়েকটি সূত্র— গবেষণাগার, ইঁদুরের কামড় ও এক ল্যাব-কর্মী।
দ্বীপরাষ্ট্র তাইওয়ানের শীর্ষস্থানীয় গবেষণা সংস্থা ‘অ্যাকাডেমিয়া সিনিকা’-য় কাজ করতেন বছর কুড়ির এক তরুণী। এ সপ্তাহে তাঁর করোনা পজ়িটিভ হওয়ার কথা জানা গিয়েছে। সাংবাদিক বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী চেন শি-চুং জানিয়েছেন, নভেম্বরের মাঝামাঝি এই গবেষণাগারে কাজ করতে গিয়ে তিনি সংক্রমিত হয়েছিলেন। মডার্নার কোভিড টিকার দু’টি ডোজ়ই নেওয়া ছিল তরুণীর। সম্প্রতি কোনও বিদেশ সফরও করেননি তিনি। তা-ও আক্রান্ত হয়েছেন করোনাভাইরাসে। সন্দেহ করা হচ্ছে, ডেল্টা স্ট্রেন।
শি-চুং না-বললেও অন্য এক সরকারি কর্তা জানিয়েছেন, সংক্রমিত তরুণীকে গবেষণাগারের একটি ইঁদুর কামড়েছিল। ইঁদুরটির শরীরে করোনাভাইরাস ছিল। এই ইঁদুরের থেকে তরুণীর দেহে ভাইরাসের প্রবেশ ঘটেছে কি না, তা এখনও জানা যায়নি। তার জন্য আরও তদন্তের প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
বহু কষ্ট করে তাইওয়ান যে প্রায় করোনা-শূন্য খ্যাতি পেয়েছিল, তা এ ভাবে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে, ভাবতে পারেনি কেউ। চিন, হংকং-এর মতো তাইওয়ানও ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েছে। অর্থাৎ দেশকে সম্পূর্ণ ভাবে কোভিড মুক্ত করা হবে। কিন্তু সে লক্ষ্য যে এত সহজে পূর্ণ হবে না, তা বুঝে গিয়েছে তারা।
এ পর্যন্ত এ দেশে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন মোট ১৪,৫০০ জন। অতিমারির গোড়া থেকে এ পর্যন্ত ৮৪৮ জন মারা গিয়েছেন। বিশ্বের সংক্রমণ ও মৃত্যু-তালিকায় অনেকটাই পিছনে তারা। গত বৃহস্পতিবার ওই তরুণীর করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। তার আগে স্থানীয় সংক্রমণ শেষ বার ধরা পড়েছিল ৫ নভেম্বর। যে সামান্য কিছু করোনা রোগীর সম্প্রতি খোঁজ মিলেছে এ দেশে, সকলেই অন্য দেশ থেকে আসা। সরকার ধীরে ধীরে কড়াকড়ি কমানোর কথা ভাবতে শুরু করেছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস, সবই স্বাভাবিক হচ্ছিল। কিন্তু তার মধ্যে এই ঘটনা। সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, সংক্রমণের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার আগে অন্তত ৯৪ জনের সংস্পর্শে এসেছিলেন তরুণী। এঁরা প্রধানত তাঁর বন্ধু ও সহকর্মী। সকলকেই কোয়রান্টিন করা হয়েছে। ৯৪ জনের মধ্যে ৮০ জন করোনা নেগেটিভ। সংক্রমিত তরুণী ডিসেম্বরে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন।
তাইওয়ানে ১৮টি বায়োসেফটি লেভেল-৩ গবেষণাগার রয়েছে। নিরাপত্তার কড়াকড়ির নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সংশ্লিষ্ট গবেষণাগারটি। সেটিতে করোনাভাইরাসের মতো
বহু ভাইরাস, ব্যাকটিরিয়া নিয়ে কাজ হয়। মাইক্রোবায়োলজিক্যাল এবং ইমিউনোলজিক্যাল পরীক্ষা হয়। বিভিন্ন প্রাণীর (যেমন ইঁদুর) দেহে পরীক্ষা করে দেখা হয় ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা।
প্রাণীর থেকে মানুষের দেহে করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা কতটা, তা নিয়ে বিভিন্ন মত আছে। সম্প্রতি ‘সেল’ পত্রিকার একটি রিপোর্টে যেমন দাবি করা হয়েছে, উহানের সি-ফুড মার্কেট থেকে ভাইরাসটি ছড়ানোর থিয়োরি বেশি জোরদার। এই বাজারে একাধিক বন্যপ্রাণী বিক্রি হয়। সেখান থেকে প্রথম ভাইরাসটি হয়তো ছড়িয়েছিল বলে মনে করেন বিজ্ঞানীদের একটা বড় অংশ। আবার আমেরিকার ‘সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ (সিডিসি) জানিয়েছে, প্রাণীদেহ থেকে মানুষের শরীরে ভাইরাস সংক্রমণের প্রবণতা কম। তারা এ-ও জানিয়েছে, এ পর্যন্ত এমন কোনও প্রমাণও নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy