(বাঁ দিকে) শেখ হাসি। মুহাম্মদ ইউনূস (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
শেখ হাসিনাকে ঢাকায় ফেরানোর জন্য ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হওয়ার ভাবনাচিন্তা করছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। রবিবার এ কথা জানিয়েছেন সে দেশের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনার নাম সরাসরি উল্লেখ করেননি মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। তবে জুলাই-অগস্ট মাসে বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের সময়ের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেছেন আসিফ। তিনি বলেন, “জুলাই-অগস্ট মাসে গণহত্যা চালিয়ে যাঁরা পালিয়ে আছেন, তাঁদের ধরার জন্য আমরা ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করতে যাচ্ছি। এটি খুব দ্রুত হবে। তাঁরা যেখানেই থাকুন না কেন, আমরা তাঁদের গ্রেফতার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসার জন্য সর্বোচ্চ পদক্ষেপ করব।”
প্রথমে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং তার পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন— এই দুইয়ের জেরে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়েছিল। ৫ অগস্ট বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে আসেন হাসিনা। সাময়িক ভাবে আশ্রয় দেন ভারতে। মাঝ অক্টোবরেও বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছিল, হাসিনা ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে’ ভারতে এসেছেন এবং এখানেই আছেন। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত হাসিনার ভারত ছাড়ার কোনও তথ্য জানা যায়নি।
ইন্টারপোলের মাধ্যমে নোটিস জারি করার অর্থ, ইন্টারপোলের সদস্য প্রতিটি রাষ্ট্রকে সতর্ক করে দেওয়া। ইন্টারপোলের একাধিক রঙের নোটিস রয়েছে। বেগনি, কমলা, সবুজ, কালো, নীল, হলুদ ও লাল। এক এক রঙের নোটিসের অর্থ এক এক ধরনের। পলাতক কোনও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে দেশে ফেরানোর জন্য ‘রেড কর্নার নোটিস’ জারি করা হয়। ইন্টারপোল রেড কর্নার নোটিস জারি করলে সদস্য রাষ্ট্রগুলির তদন্তকারী সংস্থা নিজ নিজ দেশে অভিযুক্তের খোঁজ চালায়।
হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রুজু হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সাইদুর রহমানের খুনের ঘটনায় বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-সহ ১৪৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পর থেকে সে দেশের বিভিন্ন থানায় অন্তত ২৩৩টি ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ১৯৮টি ক্ষেত্রে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে। হাসিনা-সহ ১৪৩ জনের বিরুদ্ধে আগেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। গত ১৭ অক্টোবর জারি হয়েছিল গ্রেফতারি পরোয়ানা। তার পর থেকে এত দিন পর্যন্ত হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরানোর বিষয়ে সেই অর্থে কোনও পদক্ষেপ করেনি ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার।
অক্টোবরের শেষের দিকে আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ‘ফিনানশিয়াল টাইমস্’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও ইউনূস তাঁর অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থানের কথা জানিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, এখনই হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরানোর কোনও ভাবনা নেই তাঁদের। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, “হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতা-বিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। আদালতের রায় ঘোষণা হলে আমরা ভারতের সঙ্গে অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে তাঁকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করব।” আদালতের রায়ের আগে এ ধরনের কোনও পদক্ষেপ করা হবে না বলেও ওই সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন ইউনূস।
প্রসঙ্গত ‘গণহত্যা এবং মানবতা বিরোধী অপরাধ’-এর অভিযোগে দু’টি মামলার প্রেক্ষিতে হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। আগামী ১৮ নভেম্বর হাসিনা-সহ সব অভিযুক্তকে ট্রাইবুনালে হাজির করানোর নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। সেই কারণেই কি এই তৎপরতা শুরু করল ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার? তা নিয়ে ইতিমধ্যে কৌতূহল ও গুঞ্জন বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy