রশ্মি সামন্ত ফাইল ছবি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় শব্দ নিয়ে খেলা বা মজা করার জেরে ইতিহাস গড়েও সরে দাঁড়াতে হল রশ্মি সামন্তকে। সপ্তাহ খানেক আগে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন রশ্মি। এর আগে কোনও ভারতীয় ছাত্রীই যা পারেননি। এর পর থেকেই তাঁর অতীতের কিছু মন্তব্য নিয়ে প্রতিবাদ শুরু হয়। যার জন্য ক্ষমাও চেয়ে নেন রশ্মি। কিন্তু তা ‘যথেষ্ট আন্তরিক নয়’ বলে ফের অভিযোগ করে ‘অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি চাইনিজ় সোসাইটি’। শেষ পর্যন্ত, নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও সংগঠনের ভাবী-সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছে রশ্মিকে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ২০১৭ সালের কিছু পোস্টের সূত্র ধরে তাঁর বিরুদ্ধে বর্ণবাদকে সমর্থন করা ও অসংবেদনশীলতার অভিযোগ উঠেছে। ২০১৭-তে মালয়েশিয়ায় মন্দিরে গিয়ে কোনও নিরামিষ খাবার না পেয়ে রশ্মি লিখেছিলেন, “চিং চ্যাং।” রশ্মির দাবি, তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, ‘আনাজ খাও’। কিন্তু চিনা ছাত্রদের দাবি মান্দারিনে আদৌ ওই শব্দ ব্যবহার হয় না। ওটা গুগল ট্রান্সলেটর দিয়ে পাওয়া শব্দ। চিনাদের প্রতি ‘অসংবেদনশীলতার’ অভিযোগ এনেছে অক্সফোর্ড ছাত্র সংগঠনের ‘ক্যাম্পেন ফর রেসিয়াল অ্যাওয়্যারনেস অ্যান্ড ইকুয়ালিটি’। বার্লিন হলোকস্ট মেমোরিয়ালের সামনে তোলা ছবির সঙ্গে রশ্মি সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ক্যাপশন দিয়েছিলেন, তাতে ছিল শব্দ নিয়ে খেলা করার চেষ্টা। কিন্তু হালকা চালের সেই মন্তব্যের সূত্রে তাঁকে ইহুদি-বিদ্বেষী চিহ্নিত করছেন ইহুদি ছাত্ররা একাংশ। নির্বাচনী ইস্তাহারে সব মানুষের সমান মর্যাদা ও সুবিধার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন রশ্মি। কিন্তু ইস্তাহারে মহিলা এবং জন্মের সময়ে পুরুষ গণ্য করা হয়েছিল, এমন মহিলাদের (ট্রান্সউওমেন) আলাদা উল্লেখ থাকায় তাদের মধ্যে বিভেদ করার অভিযোগও আনা হয়েছে রশ্মির বিরুদ্ধে।
সব মিলিয়ে তাঁর একটি বিরূপ ভাবমূর্তি তুলে ধরা হলে, রশ্মি ছাত্রদের সংবাদপত্রে চিঠি লিখে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পড়ুয়ার কাছে তিনি হৃদয় থেকে ক্ষমা চাইছেন। ছাত্ররা যে তাঁর উপরে রাখা আস্থা হারিয়েছেন, তা বুঝতে পারছেন। তবে অতীতের ভুলগুলি থেকে তিনি শিক্ষা নিতে চান। ভুলগুলি শুধরে নেওয়ার ব্যাপারে তিনি সকলের সাহায্য চান। কিন্তু চিনা ছাত্ররা জানিয়ে দেন, রশ্মির এই ক্ষমা চাওয়া আদৌ আন্তরিক বলে তাঁরা মনে করছেন না। এর পর ছাত্র সংগঠনের কর্তারা, তথা স্যাবাটিক্যাল অফিসাররাও এক বিবৃতি দেন। যার বক্তব্য, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাত্র সংগঠন কোনও রকম বৈষম্য, বর্ণভেদ, ইহুদি বিদ্বেষ বা ট্রান্সফোবিয়া সম্পর্কে ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতি নিয়ে চলে। রশ্মির কাজ ছাত্রদের আহত করেছে, অস্বস্তি তৈরি করেছে।
এর পরে আর সরে দাঁড়ানো ছাড়া পথ ছিল না রশ্মির সামনে।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এক বার কোনও আলটপকা মন্তব্য করে ফেললে, তা থেকে যায়। পরে যে তা কত বড় বাধা হয়ে উঠতে পারে, রশ্মি আপাতত তাঁর সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত হয়ে রইলেন। দেশে ফেরার পথে বুধবার হিথরো বিমানবন্দরে ২২ বছরের রশ্মি বলেছেন, “সকলে যেমনটি ভাবছেন, আমি মোটেই তেমন ভয়ঙ্কর নই। কোনও সম্প্রদায়কে আমি ঘৃণা করি না। সব সম্প্রদায়েই বন্ধু রয়েছে আমার। আমি তাঁদের ভালবাসি। পাঁচ বছর আগে সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষ ছিলাম। যাঁদের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেনি, তাঁরা বুঝতে পারবেন না।”
কর্নাটকের মণিপাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির এই প্রাক্তন ছাত্রী বর্তমানে লিনাক্র কলেজ থেকে এনার্জি সিস্টেম নিয়ে স্নাতকোত্তর করছেন। ঘটনা এটাই যে, শিক্ষার উঠোনে সব রকম বিভেদ ও ঔপনিবেশিকতার ছায়া মোছা, সকলের সমান সুবিধার পথ সুগম করার শপথ নিয়েই ছাত্র নির্বাচনে লড়েছিলেন তিনি। পেয়েছিলেন অভাবিত সমর্থন। তাঁকে সরতে হল বৈষম্যের তকমা নিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy